সাবমেরিন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার এই ছবিই সোমবার প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ছবি পুরনো এবং এই ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিন থেকে নিক্ষিপ্ত নয়। ছবি: এএফপি।
পাক সাবমেরিন থেকে পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ভিডিও ভুয়ো। দাবি করলেন একাধিক ভারতীয় সমর বিশারদ। ডুবোজাহাজ থেকে পরমাণু হামলায় সক্ষম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার যে ভিডিও পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সোমবার প্রকাশ করেছে, সেই ভিডিওকে নকল আখ্যা দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞরা। পাক উপকূলে যে কোনও ধরনের সামরিক গতিবিধির উপর সব সময় নজর রাখে ভারতীয় নৌসেনা। সেই নৌসেনাও জানিয়েছে, সোমবার পাক জলসীমা থেকে কোনও ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ হয়নি।
পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সোমবার জানায় যে তারা সাবমেরিন থেকে পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বাবর-৩-এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে এবং সে উৎক্ষেপণ সফল। উৎক্ষেপণের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। তাতে প্রথমে দেখা গিয়েছে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র সমুদ্রের জল ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে এবং আকাশের দিকে ছুটে যাচ্ছে। তার পর দেখা গিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি একটি জনশূন্য এলাকায় আঘাত হানছে। এই ভিডিওটিতেই অসঙ্গতি রয়েছে বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ টুইটারে ভিডিওর কয়েকটি অংশের ছবি আলাদা করে পোস্ট করে দেখিয়েছেন, একটি নয়, দু’টি ক্ষেপণাস্ত্রের ছবি দেখা যাচ্ছে ওই ভিডিওয়। একটির রং ধূসর, অন্যটির রং কমলা।
ভারতীয় নৌসেনা পাকিস্তানের এই তথাকথিত উৎক্ষেপণ সম্পর্কে কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া দেয়নি। কিন্তু নৌসেনা সূত্রের খবর, পাকিস্তানের উপকূল থেকে সোমবার কোনও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়নি। এই খবর কিন্তু প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবিকেই মান্যতা দিচ্ছে। সাবমেরিন থেকে বাবর-৩ ছোড়া হয়েছে বলে যে দাবি পাকিস্তান করছে, তা আদৌ সত্য নয় বলে এই ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের দাবি। তাঁরা জানাচ্ছেন, দু’টি পুরনো ভিডিওকে জুড়ে পাকিস্তান সোমবার দাবি করেছে যে সেটি বাবর-৩ উৎক্ষেপণের ভিডিও।
আরও পড়ুন: করাচি বন্দরে চিনের পরমাণু সাবমেরিন, সতর্ক নজর রাখছে নৌসেনা
এতেই শেষ নয়, পাকিস্তানের দাবি এবং ভিডিও ফুটেজে দৃশ্যমান সত্যতার মধ্যে আরও একটি অসঙ্গতি খুঁজে বার করেছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। সাবমেরিন থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হয়েছে বলে পাকিস্তানের দাবি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা উৎক্ষেপণের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে জানাচ্ছেন, ভিডিওয় দৃশ্যমান ক্ষেপণাস্ত্রটি কোনও সাবমেরিন থেকে নিক্ষিপ্ত নয়। জলের তলায় থাকা কোনও ভাসমান লঞ্চ টেস্ট প্ল্যাটফর্ম থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হয়েছিল। আগেকার সেই উৎক্ষেপণের ভিডিওকে নতুন করে এবং কিছুটা বিকৃত করে আবার সামনে আনা হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি।
পাকিস্তান অবশ্য দাবি করছে, তারা সাবমেরিন থেকেই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে এবং সেটি পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বাবর-৩। এই দাবির মাধ্যমে পাকিস্তান প্রমাণ করতে চাইছে, ভারতের মতো তারাও এখন স্থল, আকাশ এবং জলভাগ থেকে পরমাণু হামলা চালাতে সক্ষম। কিন্তু উৎক্ষেপণের সত্যতা নিয়ে যে ভাবে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাতে পাকিস্তান ঘোর অস্বস্তিতে পড়েছে।
ভারত আগেই সাবমেরিন থেকে পরমাণু হামলায় সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ করেছে। ভারতের সেই ক্ষেপণাস্ত্র কিন্তু ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নয়, আরও অনেক বেশি শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।