মার্টিন ম্যাকগিনেস
এক কালে জঙ্গি মতাদর্শই ছিল তাঁর পথ। ক্রমে ক্রমে সে পথ থেকে সরে এসে হয়ে উঠেছিলেন শান্তিকামী নেতা। আর তাঁর হাত ধরেই পাল্টে গিয়েছিল উত্তর আয়ারল্যান্ড। কিছু দিন অসুস্থ থাকার পরে মারা গিয়েছেন উত্তর আয়ারল্যান্ডের সেই প্রাক্তন ডেপুটি ফার্স্ট মিনিস্টার মার্টিন ম্যাকগিনেস। বয়স হয়েছিল ৬৬।
তাঁর নেতৃত্বেই লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে মারার ছক কষেছিল আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি (আইআরএ)। সত্তরের দশকে এই গোষ্ঠী ব্রিটেনের অধীনতা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সংগ্রাম চালাচ্ছিল। সেই জন্যই তাদের লড়াইয়ের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল সন্ত্রাসবাদী তকমা। লর্ড মাউন্টব্যাটেনের হত্যায় সামিল হলেও এই ম্যাকগিনেসই ৪০ বছর পরে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে করমর্দন করেছেন।
১৯৭৯-এর অগস্টে ম্যাকগিনেস ছিলেন আইআরএ-র প্রধান। এই সময়েই আয়ারল্যান্ডে ছুটি কাটাতে যান লর্ড মাউন্ডব্যাটেন। রানির সম্পর্কিত ভাই ও ব্রিটিশ রাজপরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে সহজে আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে ওঠেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন। আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি সিলগোর মালাগমোরে প্রতি বছর ছুটি কাটাতে যেতেন মাউন্টব্যাটেনরা। এটা অনেকেরই জানা ছিল। ২৯ অগস্ট পরিবারের সঙ্গে নৌকায় করে মাছ ধরতে যান লর্ড মাউন্টব্যাটেন। নৌকায় লাগানো বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন তিনি। বাঁচেনি তাঁর ১৪ বছরের নাতি নিকোলাসও। ম্যাকগিনেসের বাহিনীর হাতে মাউন্ডব্যাটেনের মৃত্যুর কিছু ক্ষণ আগেই আইরিশ রিপাবলিকের সীমান্তে ওয়ারেন পয়েন্ট-এ ১৭ ব্রিটিশ সেনাকে মেরে ফেলেছিল আইআরএ। আশির দশকে এতই দাপট আইআরএ-র যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারকেও মারার ছক করেছিল তারা। তবে সে বার আর সফল হয়নি। ১৯৮৪ সালে ব্রাইটনে গ্র্যান্ড হোটেলে দলের সম্মেলনে যোগ দিতে যান থ্যাচার। হোটেলের বেডরুমে রাখা ছিল বোমা। অল্পের জন্য বেঁচে যান থ্যাচার।
আরও পড়ুন: কেন ‘হাসান’? প্রাক্তন পুলিশকর্তাই দেড় ঘণ্টা আটক নিউইয়র্কে
ব্রিটেন তাই তাঁকে যত না মনে রাখবে সংগ্রামী নেতা হিসেবে, তার চেয়ে অনেক বেশি শান্তির কারিগর হয়েই জনমানসে বেঁচে থাকবেন মার্টিন ম্যাকগিনেস।