Donald Trump Tariff War

ধনীদের ক্ষেত্রে উদার মনোভাব, ‘নেকনজরে’ গরিব দেশগুলি! শুল্ক আরোপে কেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ মারছেন ট্রাম্প?

জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ধনী দেশগুলির উপর যেখানে ট্রাম্প ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন, সেখানে ভিয়েতনাম, ইরাকের মতো গরিব দেশে ২০-র শতাংশের বেশি শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৫ ১৯:২৩
Share:

ডোনাল্ড ট্রাম্প। — ফাইল চিত্র।

আমেরিকা কি শুধুই ধনীদের পাশে! গরিব দেশগুলির উপরে যে পরিমাণ শুল্ক চাপানোর কথা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তাতে সে রকমই মনে করছেন বণিকমহলের একাংশ। গত কয়েক দশক ধরে আমেরিকা-সহ ধনী দেশগুলি গরিব দেশকে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিভিন্ন ছাড় দিয়েছে। তাদের রফতানি করা পণ্যের উপর শুল্কেও ছাড় দিয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প সেই পথে হাঁটেনি। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ধনী দেশগুলির উপর যেখানে তিনি ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন, সেখানে ভিয়েতনাম, ইরাক, বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো গরিব দেশে ২০ শতাংশের কাছাকাছি বা তার বেশি শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প।

Advertisement

এশিয়ার দুই গরিব দেশ মায়ানমার এবং লাওসের রফতানি করা পণ্যের উপরে ৪০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এই দুই দেশ মূলত কাপড় এবং আসবাব রফতানি করে আমেরিকায়। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে বিপাকে তারা। তাদের থেকে কম শুল্ক বসানো হয়েছে বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামের উপরে। কিন্তু সেই অঙ্কও কম নয়। কেন এই পদক্ষেপ করলেন ট্রাম্প? সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর প্রতিবেদন বলছে, গরিব দেশগুলি আমেরিকার দামি পণ্য খুব বেশি আমদানি করতে পারে না। ফলে সে দেশে যত পণ্য তারা রফতানি করে, সেই তুলনায় আমদানির ঘাটতি থেকে যায়। এতেই চটেছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি, তিনি শুল্ক কমানোর বিনিময়ে আমেরিকায় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও চেয়েছেন। গরিব দেশগুলির পক্ষে সেটাও সম্ভব নয়।

সেই বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কারণেই সৌদি আরব, কাতার, আরব আমিরশাহির মতো দেশগুলির উপর ১০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। এই দেশগুলি তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে অগ্রগণ্য। সে কারণেই ট্রাম্প তাদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ওই দেশের সরকারের সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতাও এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এই কারণেই উন্নয়নশীল দেশগুলির উপরে বেশি শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করা হয়েছে, এমনটাই জানিয়েছেন এশিয়ার একটি বাণিজ্য সংস্থা।

Advertisement

২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া-সহ ১০০টি দেশকে বাণিজ্যে বিশেষ ভাবে সাহায্য করত আমেরিকা। এখন ছবিটা বদলে গিয়েছে। তার ফল ভুগছে গরিব দেশগুলি। কম্বোডিয়া আমেরিকায় কাপড় রফতানি করে। তাদের উপর ১৯ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছে আমেরিকা। কম্বোডিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী সান চানথল বলেন, ‘‘আমরা গরিব দেশ। ধনী দেশগুলির মতো আমদানির ক্ষমতা আমাদের নেই।’’ কম্বোডিয়া আমেরিকার থেকে রফতানি করা পণ্যের শুল্ক শূন্যে নামিয়ে এনেছে। দেশের জাতীয় বিমান সংস্থা আমেরিকা থেকে ১০টি বোয়িং বিমান কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাতেও কাজ হয়নি। প্রসঙ্গত, জাপান আমেরিকা থেকে ১০০টি জেট বিমান কিনতে সম্মত হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার উপরে চাপানো হয়েছে ১৯ শতাংশ শুল্ক। সে দেশের সুমাত্রা দ্বীপের সংস্থা গ্রেট জায়ান্ট পাইন্যাপেল আমেরিকায় ক্যানবন্দি আনারস রফতানি করে। পৃথিবীর অন্যতম বড় আনারস রফতানি সংস্থা তারা। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে তাদের বিশাল ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। আলজিরিয়া এবং লিবিয়ার পণ্যের উপর চাপানো হয়েছে ৩০ শতাংশ শুল্ক। ইরাকের পণ্যের উপর ৩৫ শতাংশ এবং সিরিয়ার উপর ৪১ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। প্রসঙ্গত, দীর্ঘ দিন সিরিয়ার উপরে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা ছিল আমেরিকার। এখন তা তুলে নিলেও শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে ট্রাম্প সরকার। ধনী দেশগুলির মধ্যে একমাত্র সুইৎজারল্যান্ডের উপরে ৩৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে আমেরিকা, যা ব্যতিক্রম বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রাজ়িলের কফির উপরে ৫০ শতাংশ শুল্ক বসানোর কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প।

মে মাসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির মাঝেই বাণিজ্য নিয়ে কথা বলেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান। তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার উপরে ৩০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ওই দেশ মূলত প্ল্যাটিনাম, গাড়ি এবং লেবু রফতানি করে আমেরিকায়। নতুন শুল্কনীতির কারণে সে দেশে লেবু রফতানি চাপে পড়বে বলে আশঙ্কা সংস্থাগুলির।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement