(বাঁ দিক থেকে) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার মুহাম্মদ ইউনূস, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর পুত্র সাজিব ওয়াজ়েদ জয়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার মামলায় সোমবার রায় ঘোষণা করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তার আগে আমেরিকা থেকে বার্তা দিলেন তাঁর পুত্র সাজীব ওয়াজ়েদ জয়। কর্মসূত্রে আমেরিকাতেই থাকেন তিনি। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে রবিবার (স্থানীয় সময়) জয় জানিয়েছেন, তাঁর মাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে। তবে আপাতত তা নিয়ে তাঁরা চিন্তিত নন।
গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর দেশ ছেড়েছিলেন হাসিনা। সেই থেকে তিনি ভারতে আছেন। জয় জানিয়েছেন, ভারতে তাঁর মা নিরাপদ। তাঁর কথায়, ‘‘রায় কী হতে চলেছে, আমরা সকলেই তো জানি। সরাসরি সম্প্রচারও করা হবে। মাকে দোষী সাব্যস্ত করবে ওরা। হয়তো মৃত্যুদণ্ডই দেবে।’’ তার পরেই জয়ের সংযোজন, ‘‘কিন্তু ওরা আমার মায়ের সঙ্গে কী করতে পারে? মা ভারতে নিরাপদে রয়েছেন। ভারত সরকার তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।’’
হাসিনার পদত্যাগের পর বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল। তাদের তত্ত্বাবধানে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে সে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে হাসিনার দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। জয় এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপও জানিয়েছেন। হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগকে ছাড়া আমরা বাংলাদেশে কোনও নির্বাচন হতে দেব না। আমাদের আন্দোলন দিন দিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ফেরাতে যা করতে হয়, আমরা করব।’’ জয় আরও বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হস্তক্ষেপ না করলে ফেব্রুয়ারির ভোটের আগে বাংলাদেশে হিংসা বাড়বে। আমরা নির্বাচনে বাধা দেব।’’ তবে ইউনূস সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই ঢাকার। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান অশান্তির নেপথ্যে এই দলের সমর্থকদেরই দায়ী করেছে তারা।
হাসিনাকে সোমবার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? বাংলাদেশের সরকার পক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, হাসিনা পলাতক থাকায় এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আবেদন জানাতে পারবেন না। নিয়ম অনুযায়ী, রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। তবে তার জন্য হাসিনাকে আগে আত্মসমর্পণ করতে হবে। দেশের বাইরে থেকে তাঁর কোনও বার্তাই আদালতে গ্রাহ্য হবে না। হাসিনা-পুত্র জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা তাঁরা ভাবছেনও না। কারণ, তাঁর মা ভারতে সুরক্ষিত রয়েছেন। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের উপস্থিতিতে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচন হলে এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে নতুন সরকার গঠিত হলেই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা আপিল করবেন, জানিয়েছেন জয়।
২০২৪ সালের জুলাই থেকে অগস্টের শুরু পর্যন্ত বাংলাদেশ জুড়ে যে প্রবল অশান্তি হয়েছিল, তার নেপথ্যে দায়ী করা হয়েছে হাসিনাকে। অভিযোগ, আন্দোলন থামাতে তিনি ছাত্র-যুবদের উপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন পুলিশকে। এই সংক্রান্ত মোট পাঁচটি অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে সরকারপক্ষ। হাসিনা অবশ্য একাধিক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, তিনি সরাসরি হত্যার নির্দেশ কখনও দেননি। তবে তাঁর এই বক্তব্য আদালতে গ্রাহ্য হচ্ছে না। এই মামলায় হাসিনা ছাড়াও বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশের এক কর্তা অভিযুক্ত। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাসিনার মতোই ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে রাজসাক্ষী হয়েছেন পুলিশের ওই কর্তা। হাসিনাদের বিরুদ্ধে তিনি জবানবন্দি দিয়েছেন।