১৭০৮-এ ডুবিয়ে দেওয়া জাহাজের বিপুল ধনরত্ন উদ্ধার, দাবিদার তিন

পেরু থেকে লুঠ করা সোনা, পানামার মুক্তো, আন্দেজ পর্বতমালার পান্না, এমেথিস্ট এবং হিরে, সব ছিল জাহাজে। এ ছাড়াও ছিল কোকো, নীল, চামড়া এবং বহুমূল্য কাঠ। সম্পদের মূল পরিমাণ ১৭ কোটি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৫:৩১
Share:

সান জোসের উদ্ধার হওয়া সম্পদ। এএফপি-র তোলা ছবি।

সালটা ১৭০৮ জুন মাস। দক্ষিণ মেরুর কনকনে ঠান্ডায় ক্যারিবিয়ান সাগরে সলিল সমাধি ঘটে স্পেনীয় আর্মাদার সবচেয়ে শক্তিশালী জাহাজ সান হোসের।

Advertisement

ভাবছেন হঠাত্ কেন ইতিহাস বইয়ের পাতা ওল্টাছি?

ধৈর্য ধরুন। কাট করে চলে আসুন ২০১৫ সালে। টন টন সোনা জহরত নিয়ে ডুবে যায় জাহাজটি। সেই সম্পদেরই এত দিন পর খোঁজ মিলেছে। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। ঝামেলা বাঁধে কলম্বিয়া সরকারের একটি ঘোষণায়। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট জুয়ান ম্যানুয়েল স্যান্টোস বলেন, কলম্বিয়া উপকূলে পাওয়া গিয়েছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ। এই আবিষ্কার মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কারটাজেনা দ্বীপ যেখানে এই সম্পদ খোঁজ মিলেছে সেখানে একটি জাদুঘর তৈরি করার কথা ঘোষণা করা হয়। এরপরই শুরু হয় গণ্ডগোল।

Advertisement

কোথা থেকে এল এই সম্পদ?

অষ্টদশ শতকের শেষ ভাগে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে বিপুল পরিমাণ ধনসম্পদ লুঠ করে আনছিল স্পেনীয় শাসকেরা। স্পেনীয় আর্মাদার শক্তিশালী জাহাজ সান হোসেতে করে নিয়ে আসা হচ্ছিল ধনভাণ্ডার। এই কারটাজেনা দ্বীপের কাছেই সমুদ্রে জাহাজটিকে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। ব্রিটিশ নৌসেনার বিরুদ্ধে জাহাজটিকে ডোবানোর অভিযোগ ওঠে। ব্রিটিশ নৌসেনা আধিকারিক অ্যাডমিরাল চার্লস ওয়েগার সোনা লুঠ করার উদ্দেশ্য বিস্ফোরণ ঘটান জাহাজে। সেই সময় জাহাজে ছিল ৬০০ জন। এগারো জন বাদ দিয়ে সলিল সমাধি হয় সিংহভাগেরই। এর পর কেটে গিয়েছে দু’টি শতক। কেউ আর এই নিয়ে মাথা ঘামায়নি। তবে সব শুদ্ধু নিয়ে কোথায় হারিয়ে গেল জাহাজটি এটা অনেক ইতিহাসপ্রেমীকেই ভাবাত। ৮০’র দশকের গোড়ার দিকে মার্কিন একটি সংস্থা জলের তলায় খোঁজ পায় বিপুল ধনসম্পদের। কারটাজেনা দ্বীপ থেকে ১৬ মাইল দূরে সমুদ্রের ৩০০ মিটার গভীরে সন্ধান পাওয়া যায়। গত ২৭ নভেম্বর আবিষ্কারকে সরকারি স্বীকৃতি দেয় কলম্বিয়া সরকার। এর পরই শুরু হয় গণ্ডগোল।

কী ছিল না সেই ভাণ্ডার?

পেরু থেকে লুঠ করা সোনা, পানামার মুক্তো, আন্দেজ পর্বতমালার পান্না, এমেথিস্ট এবং হিরে, সব ছিল জাহাজে। এ ছাড়াও ছিল কোকো, নীল, চামড়া এবং বহুমূল্য কাঠ। সম্পদের মূল পরিমাণ ১৭ কোটি।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন সি সার্চ আর্মাদা নামে সংস্থাটি দাবি করে, উদ্ধার হওয়া সম্পদের ৩৫ শতাংশ তাদের দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কলম্বিয়া। এর জন্য কলম্বিয়া সরকারের সঙ্গে তাদের চুক্তিও সই হয়েছিল। কিন্তু মার্কিন সংস্থার দাবি অস্বীকার করেছে কলম্বিয়া সরকার। এর পরই সম্পদের ভাগ চেয়ে মামলা করে মার্কিন সংস্থাটি। কলম্বিয়া এবং আমেরিকার আদালতে করা হয় মামলা। আসরে নামে স্পেনও। লুঠ হওয়া সম্পদ কার ভাগে যাবে তাই নিয়েই আপাতত সরগরম তিন পক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন