Discovery of New Dwarf Planet

আমাদের সৌরজগতে আরও এক বামন গ্রহ আবিষ্কার! সূর্যের চার দিকে এক বার ঘুরতে সময় নেয় ২৪,০০০ বছর

নতুন বামন গ্রহ আবিষ্কারের নেপথ্যে রয়েছেন আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিহাও চেং ও তাঁর দুই ছাত্র। যদিও তিন জনের গবেষণার এই ফসল এখনও কোথাও প্রকাশিত হয়নি। তবে নবম গ্রহের অস্তিত্ব প্রমাণিত হলে হয়তো আবার নতুন করে লিখতে হবে ভূগোল, বিজ্ঞানের বই!

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৫ ০৮:৫৫
Share:

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

সৌরজগতে মিলল নতুন বামন গ্রহের খোঁজ! এর আগে সৌরজগতের যেখানে শূন্যস্থান রয়েছে বলে মনে করা হত, সেখানেই এই নয়া মহাজাগতিক বস্তুর সন্ধান পেয়েছেন মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। নাম ‘২০১৭ ওএফ২০১’, বৈশিষ্ট্যের নিরিখে খতিয়ে দেখলে যাকে অনায়াসে প্লুটোর মতোই বামন গ্রহের তকমা দেওয়া যেতে পারে।

Advertisement

নতুন বামন গ্রহ আবিষ্কারের খবরটি জানা গিয়েছে সংবাদমাধ্যম ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্‌স’-এর একটি প্রতিবেদন থেকে। এ হেন আবিষ্কারের নেপথ্যে রয়েছেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিহাও চেং ও তাঁর দুই ছাত্র। যদিও তিন জনের গবেষণার এই ফসল এখনও কোথাও প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু এমনটা সত্যি হলে আবারও ভেঙে যেতে পারে সৌরজগতের প্রান্তে ‘নবম গ্রহ’ আবিষ্কারের বহু-আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন।

‘২০১৭ ওএফ২০১’ আকারে-আয়তনেও বিশেষ বড়সড় নয়। ব্যাস মাত্র ৪০৩ মাইল (প্রায় ৬৯২ কিলোমিটার) । উপবৃত্তাকার কক্ষপথ ধরে সূর্যের চারপাশে এক বার পরিক্রমা করতেই খুদে এই বামন গ্রহের সময় লেগে যায় ২৪,০০০ বছরেরও বেশি! যেখানে সৌরজগতের শেষ গ্রহ নেপচুনই রয়েছে সূর্য থেকে প্রায় ৪৪৭ কোটি কিলোমিটার দূরে, সেখানে খুদে এই বামন গ্রহের সূর্য থেকে দূরত্ব ৬৭৬ কোটি কিলোমিটারেরও বেশি। ১৯৩০ সালে ‘২০১৭ ওএফ২০১’ শেষ বার সূর্যের সবচেয়ে কাছে এসেছিল, কাকতালীয় ভাবে সে বছরই প্লুটো আবিষ্কৃত হয়েছিল! এর পর সুদূর ২৬১৮৬ সালের আগে আর এত কাছ থেকে দেখা যাবে না এই গ্রহকে।

Advertisement

নয়া বামন গ্রহের আবিষ্কারক তথা প্রিন্সটনের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডির গবেষক চেংয়ের কথায়, ‘‘সূর্যের একেবারে শেষ দিকের কক্ষপথে একটি বেশ বড়সড় ট্রান্স-নেপচুনিয়ান বস্তু আবিষ্কার করেছি আমরা।’’ আবিষ্কারের কৃতিত্ব অবশ্য চেংয়ের একার নয়। চেংয়েরই দুই গবেষক ছাত্র জিয়াক্সুয়ান লি এবং এরিটাস ইয়াং-ও রয়েছেন এই গবেষণার নেপথ্যে। এ জন্য দীর্ঘ সাত বছর ধরে চিলি ও হাওয়াইয়ের বিভিন্ন মানমন্দির থেকে টেলিস্কোপে আকাশের দিকে চোখ রাখতে হয়েছে তাঁদের। গবেষণার ফলাফল এখনও পর্যন্ত কোনও তাবড় ‘পিয়ার-রিভিউড’ জার্নালে না বেরোলেও এই আবিষ্কার যে নেহাত হেলাফেলার নয়, তা বুঝছেন সকলেই।

এই মুহূর্তে আমাদের সৌরজগতে জ্যোতির্বিজ্ঞান ইউনিয়নের স্বীকৃত পাঁচটি বামন গ্রহ রয়েছে। এগুলি হল প্লুটো, এরিস, সেরেস, হুমিয়া এবং মেকমেক। এদের মধ্যে ক্ষুদ্রতম সেরেস। আর সবচেয়ে বড়টির নাম প্লুটো। এই সেই প্লুটো, যে গ্রহের মর্যাদা হারিয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১৯ বছর আগে! নতুন করে লিখতে হয়েছিল ভূগোলের বই। নতুন এই বামন গ্রহ আকারে প্লুটো, সেরেসদের চেয়েও বেশ কিছুটা ছোট। তবে বহু দূরে থাকার কারণে এর গঠন ঠিক কী রকম, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে এটুকু নিশ্চিত যে, খুদে হলেও ‘২০১৭ ওএফ২০১’-এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বেশি, ফলে গোটা ভরকে গোলাকার আকৃতিতে ধরে রাখার ক্ষমতাও রয়েছে তার— যা ‘বামন গ্রহ’ হয়ে ওঠার প্রাথমিক মানদণ্ড।

‘বামন গ্রহ’ নিয়ে ঝঞ্ঝাট বেশ পুরনো। ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ইউনিয়ন পূর্ণাঙ্গ গ্রহের তালিকা থেকে প্লুটোকে বাদ দিয়ে এই বিভাগটি তৈরি করেছিল। কারণ, গ্রহদের মধ্যে ক্ষুদ্রতম বুধ কিংবা পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের চেয়েও আকারে ছোট প্লুটো। তার উপর আবার নিজের উপগ্রহও রয়েছে তার, যে কিনা আকারে প্লুটোর অর্ধেক! অথচ সৌর পরিবারে অন্য গ্রহগুলির উপগ্রহেরা তাদের ব্যাসের একশো ভাগের এক ভাগ মাপের। এ হেন দলছুট প্লুটোকে গ্রহের পর্যায়ে ফেলতে রাজি হননি কেউই।

তা হলে গ্রহ কারা? বামন গ্রহই বা কারা?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনও মহাজাগতিক বস্তুকে ‘গ্রহ’ হয়ে উঠতে গেলে তিনটি শর্ত পূরণ করা প্রয়োজন। এক, নক্ষত্রের চারদিকে ঘুরতে হবে তাকে। দুই, মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে মোটামুটি গোলাকার চেহারা থাকতে হবে তার। তিন, মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবেই কক্ষপথের আশপাশে থাকা ছোট ছোট বস্তুকে নিজের দেহে মিশিয়ে নিয়ে ‘পথের কাঁটা’ সরিয়ে এগোতে হবে তাকে। প্লুটো তৃতীয় শর্ত পূরণে অক্ষম, ফলে গ্রহের তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে সে। তা হলে ‘২০১৭ ওএফ২০১’-এর বেলাতেই বা নিয়মের নড়চড় হয় কী করে? তাই প্লুটোরই মতো বাদ পড়বে সে-ও। ঠাঁই পাবে বামন গ্রহদের তালিকায়।

গত বছর ক্যালিফর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (ক্যালটেক)-র জ্যোতির্বিদ মাইক ব্রাউনের বক্তৃতা শোনার পর থেকেই সৌরজগতের ‘অতি দূরবর্তী অঞ্চলের’ অজানা রহস্য ভাবিয়ে তুলেছিল চেংকে। সে-ই শুরু। তার পর থেকে ‘প্ল্যানেট নাইন’-এর খোঁজে গবেষণা নিয়েই পড়ে থেকেছেন তিনি ও তাঁর দুই ছাত্র। সেই কোন ২০০৫ সালে এই মাইক ব্রাউন প্লুটোর চেয়েও দূরে প্লুটোরই আকারের একটি বিশ্ব আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন, নাম দিয়েছিলেন ‘এরিস’! তখনও প্লুটো গ্রহের সংজ্ঞা খোয়ায়নি। কিন্তু সে যদি গ্রহ হয়, তা হলে এরিস কেন নয়? তখনই তো প্লুটোর গ্রহ হওয়া নিয়ে ধন্দ শুরু! তারও আগে অবশ্য ২০০৩ সালে ব্রাউন খুঁজে পেয়েছিলেন ‘সেডনা’কে। নেপচুনের কক্ষপথ থেকে অনেক দূরে থাকা এই বামন গ্রহ আড়েবহরে ছিল ৭০০ মাইলেরও বেশি প্রশস্ত। বছরের পর বছর ধরে এ রকমই আরও নানা মহাজাগতিক বস্তু মহাকাশবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে, কখনও কখনও যাদের ‘ট্রান্স-নেপচুনিয়ান বস্তু’ও বলা হয়। ব্রাউনের মতে, এদের মতো প্রায় ১০০টিরও বেশি মহাজাগতিক বস্তু বামন গ্রহের তকমা পাওয়ার সম্ভাবনা রাখে, কেবলমাত্র গোলাকৃতি হওয়ার শর্ত তারা পূরণ করছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত প্রমাণ মিললেই কেল্লাফতে।

ক্যালটেকের গবেষক ব্রাউন এবং আর এক জ্যোতির্বিদ কনস্টান্টিন ব্যাটিগিনের দাবি, এই বামন গ্রহগুলির প্রত্যেকের কক্ষপথ একটি নির্দিষ্ট দিকে হেলানো। ফলে পৃথিবীর চেয়ে কয়েক গুণ বড় কোনও অদৃশ্য গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ যে এদের টানছে , সেই সম্ভাবনা নেহাত উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিজ্ঞানীরা এই অনাবিষ্কৃত গ্রহেরই নাম দিয়েছিলেন ‘প্ল্যানেট নাইন’, অর্থাৎ নবম গ্রহ। অথচ, নিউটন-কেপলারের সূত্র বলছে, নবম গ্রহের অস্তিত্ব থাকলে ‘২০১৭ ওএফ২০১’ যেখানে রয়েছে, সেখানে তার থাকার কথা নয়। আর যেহেতু ‘২০১৭ ওএফ২০১’ দিব্যি সশরীরে রয়েছে, ফলে নবম গ্রহ না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তবু নতুন গ্রহের খোঁজে চেংয়ের মতো অধীর আগ্রহে আজও দিনরাত এক করে গবেষণা করছেন বিশ্বের তাবড় মহাকাশ গবেষকেরা। অপেক্ষায় বিশ্বও। কারণ, নবম গ্রহের অস্তিত্ব প্রমাণিত হলে হয়তো আবার নতুন করে লিখতে হবে ভূগোল, বিজ্ঞানের বই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement