বিস্ফোরণের পর সেন্ট অ্যান্টনিজ চার্চে তদন্তে নিরাপত্তারক্ষীরা। ছবি: এএফপি।
গত মার্চে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলার বদলা নিতেই আত্মঘাতী নাশকতা চালানো হয়েছে বিভিন্ন চার্চ এবং হোটেলে, আজ এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনল শ্রীলঙ্কা সরকার। শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রুয়ান বিজয়বর্ধনে দেশের পার্লামেন্টে জানিয়েছেন, ‘‘ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে মুসলিম হত্যার প্রতিশোধ নিতেই শ্রীলঙ্কায় হামলা চালানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পর গোয়েন্দাদের হাতে উঠে এসেছে এই তথ্য।’’
গত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দু’টি মসজিদে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায় এক বন্দুকধারী। সেই ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ৫০ জন নিরপরাধ সাধারণ মানুষ, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দাদের প্রাথমিক তদন্তের ইঙ্গিত সত্যি হলে সন্ত্রাসের মানচিত্রে ক্রাইস্টচার্চের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে কলম্বো।
নাশকতার তদন্তে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হল শ্রীলঙ্কার পুলিশ এবং সেনাকে। এর ফলে আদালতের নির্দেশ ছাড়াই কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার বা জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে তারা। তামিল গৃহযুদ্ধের সময়ও এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল শ্রীলঙ্কা সেনাকে। তাই বিস্ফোরণ পরবর্তী পরিস্থিতি অনেককেই মনে করিয়ে দিচ্ছে তামিল গৃহযুদ্ধ চলাকালীন দেশের হিংসাত্মক অতীতের কথা। এখনও পর্যন্ত এই ভয়াবহ নাশকতায় জড়িত সন্দেহে ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে এক জন সিরিয়ার নাগরিক বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কা পুলিশের মুখপাত্র। দ্বীপরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক কালের ভয়াবহতম জঙ্গি হামলায় ‘ন্যাশনাল তৌহিত জামাত’ নামের একটি মৌলবাদী সংগঠনের দিকে আগেই অভিযোগের আঙুল তুলেছে শ্রীলঙ্কা প্রশাসন। যদিও এখনও পর্যন্ত দায় স্বীকার করেনি এই সংগঠন।
সেন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চে গণকবর দেওয়ার সময় স্বজন হারানোর বেদনা। ছবি: রয়টার্স।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মুখে মাসুদ আজহারের ফাইল বেজিংয়ের হাতে তুলে দিল দিল্লি
এ দিকে রবিবারের ধারাবাহিক বিস্ফোরণে এখনও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। গতকাল রাতে বিভিন্ন হাসপাতালে বেশ কয়েক জন মারা যাওয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২০। আরও দুই ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছেছে। এর ফলে এই নাশকতায় ভারতীয়দের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল দশ। সন্ত্রাসের আতঙ্কের মধ্যেই আজ থেকে মৃত ব্যক্তিদের গণকবর দেওয়া শুরু হল শ্রীলঙ্কায়। আজ সকাল সাড়ে আটটার সময় সারা দেশ জুড়ে নীরবতা পালনের পরই শুরু হয় গণকবর দেওয়া। রবিবার ঠিক এই সময়েই পরপর ছ’টি বোমা বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হয়েছিল শ্রীলঙ্কা।
আরও পড়ুন: মুসলিম, খ্রিস্টান বৈরিতা তো নেই শ্রীলঙ্কায়!
শ্রীলঙ্কা নিয়ে এই মুহূর্তে সতর্ক আন্তর্জাতিক দুনিয়াও। মঙ্গলবারই দেশের নাগরিকদের শ্রীলঙ্কায় না যেতে পরামর্শ দিয়েছে চিন। দ্বীপরাষ্ট্রে ফের হামলা হতে পারে, এই আশঙ্কার কথা নিজেদের দেশের পর্যটকদের জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসনও।