জঙ্গি হামলার পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। তবু বিক্ষোভ থামার লক্ষণ নেই। লাহৌর তো বটেই, সোমবার প্রতিবাদে সামিল হলেন ফয়জলাবাদ, গুজরানওয়ালা, সারগোধা-সহ পাকিস্তানের একাধিক শহরের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাহৌরে অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী পাঠায় পঞ্জাব সরকার। তবে তার পরেও মৃত্যু ঠেকানো যায়নি। এ দিনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এক সময় কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে বাধ্য হয় পুলিশ। গত কালের জোড়া বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যে ১৭ জনকে গ্রেফতারও করেছে তারা। এ সবের মধ্যেই খবর মেলে, বিস্ফোরণে আহত আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৬।
গত কাল লাহৌরের ইয়োহানাবাদ এলাকার দুই গির্জায় জোড়া আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পর খেপে ওঠে জনতা। জঙ্গিদের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে পুলিশ যখন দু’জনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন হঠাৎই এক দল যুবক খেপে গিয়ে তাদের ছিনিয়ে নেয়। প্রবল গণপিটুনি দেওয়ার পর শেষমেশ তাদের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিস্ফোরণের জন্য তালিবানের বিরুদ্ধে এফআইআর করার পাশাপাশি এ দিন ওই দু’জনকে খুনের অভিযোগেও এফআইআর রুজু করেছে পুলিশ। যে দুই জঙ্গি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল, এ দিন তাদের দেহাংশ উদ্ধার করে জাতীয় তথ্য নথিভুক্তিকরণ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছে দেওয়া হয়েছে। দেশ জুড়ে প্রত্যেকটি গির্জার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। শুধু ইয়োহানাবাদ এলাকাতেই ১০০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তার পরেও অশান্তি থামানো যায়নি। এ দিন লাহৌরের রাস্তা অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীদের একাংশ। বন্ধ হয়ে যায় সরকারি যান চলাচল। একটি বাসের উপরও চড়াও হয় জনতা। গুজরানওয়ালায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। সেখান থেকেই ১৫ জন বিক্ষোভকারীকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। অন্য দিকে, পিএমএল-এন নেতা খলিল তাহির সিন্ধুর গাড়িও ইয়োহানাবাদ পৌঁছনোর আগে আটকে দেন বিক্ষোভকারীরা। তিনি গাড়ি থেকে হেঁটেই রওনা দেন ইয়োহানাবাদের দিকে। তখন তাঁকে প্রবল ধাক্কা দেয় জনতা। সরকারের নিন্দা করে স্লোগানও দেয় তারা। সর্বত্রই চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কোথাও কোথাও কাঁদানে গ্যাসও ব্যবহার করেছে নিরাপত্তাবাহিনী। তবে ক্ষিপ্ত জনতাকে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি গত কালের বিস্ফোরণের নিন্দাও করে পাক প্রশাসন। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলি খান বলেন, “জঙ্গিদের কার্যকলাপের চৌহদ্দি আমরা ছোট করে দিয়েছি।” সে জন্যই এখন স্কুল, গির্জা, মসজিদের মতো সংবেদনশীল জায়গায় হামলা চালাচ্ছে তালিবান, মত তাঁর।