শেখ হাসিনা। — ফাইল চিত্র।
গত বছর অগস্টে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। দেশ ছাড়েন তিনি। তার পরেই সে দেশে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল পুনর্গঠিত হয়। হাসিনার সরকারের তৈরি করা ট্রাইবুনালেই শুরু হয় তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম মামলার বিচার। বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালত এবং থানায় নয় নয় করে হাসিনার বিরুদ্ধে ৫৮৬টি মামলা করা হয়েছে। মোট ৩৯৭ দিন ধরে চলেছে বিচারের বিভিন্ন প্রক্রিয়া। তার পরেই সাজা ঘোষণা হল সোমবার। হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিল বাংলাদেশের আদালত।
অভিযুক্তের তালিকায় হাসিনা ছাড়াও রয়েছেন দু’জন। এক জন বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং দ্বিতীয় জন বাংলাদেশ পুলিশের প্রাক্তন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লা আল-মামুন। হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান প্রথম থেকেই পলাতক। সূত্রের খবর, হাসিনার মতো আসাদুজ্জামানও ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে তৃতীয় অভিযুক্ত আল-মামুনকে গ্রেফতার করেছিল সে দেশের পুলিশ। তিনি রাজসাক্ষী হয়েছেন এবং ট্রাইবুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন। হাসিনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছিল রাষ্ট্রপক্ষ, তাতে সম্মতি দিয়েছেন মামুন।
মোট পাঁচটি অভিযোগ রয়েছে হাসিনা-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে। এক, প্ররোচনামূলক ভাষণ, দুই, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ, তিন, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা, চার, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে খুন, পাঁচ, আশুলিয়ায় ছ’জনকে পুড়িয়ে হত্যা। সেই অভিযোগেই ৩৯৭ দিন ধরে বিচার চলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে।
২০২৪ সালের ৫ অগস্ট: শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় বাংলাদেশে। তার পরেই আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল পুনর্গঠিত হয় বাংলাদেশে।
১৭ অক্টোবর: আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইবুনাল। মামলায় প্রথমে হাসিনাই ছিলেন অভিযুক্ত।
২০২৫ সালের ১৬ মার্চ: হাসিনার পাশাপাশি মামুনকেও অভিযুক্ত করা হয়।
১২ মে: বার বার সময় চাওয়ার পরে মুখ্য প্রসিকিউটারের কার্যালয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থা। সেই রিপোর্টে প্রথম বার উল্লেখ করা হয় আসাদুজ্জামানের নাম। সে দিন থেকে ওই মামলায় তিন জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
১ জুন: হাসিনা-সহ তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয় ট্রাইবুনালে।
১০ জুলাই: আনুষ্ঠানিক ভাবে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইবুনাল। মামুন রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন জানান।
৩ অগস্ট: মামলার সূচনায় বক্তব্য পেশ করেন মুখ্য প্রসিকিউটর মহম্মদ তাজুল ইসলাম। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিচার শুরু হয়। প্রথম সাক্ষ্য দেন গণআন্দোলনে আহত খোকনচন্দ্র বর্মণ।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
৮ অক্টোবর: আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম-সহ ৫৪ জন সাক্ষীর বয়ান নেওয়া হয়।
১২ অক্টোবর: আদালতে শুরু হয় সওয়াল।
২৩ অক্টোবর: আদালতে শেষ হয় বাদী-বিবাদী পক্ষের সওয়াল-জবাব।
১৩ নভেম্বর: ট্রাইবুনাল জানায়, ১৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা হবে।
১৭ নভেম্বর: রায় দিল আদালত।
হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইবুনাল গঠিত হয়। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় যে অপরাধ হয়েছিল, সেই মামলাগুলির বিচারকেই গুরুত্ব দেয় ট্রাইবুনাল। দ্রুত বিচার করতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরও একটি ট্রাইবুনাল গঠন করে হাসিনার সরকার। ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরে এই ট্রাইবুনাল পুনর্গঠিত হয়েছে। সেই ট্রাইবুনালে সোমবার হাসিনা দোষী সাব্যস্ত হলেন।