হরমুজ় প্রণালীতে অশোধিত তেলবাহী জাহাজ। ছবি: রয়টার্স।
অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধের আবহেই। রবিবার ভোরে সেই যুদ্ধে আমেরিকার অংশগ্রহণের ফলে নতুন করে সঙ্কটে উপসাগরীয় অঞ্চল। ইতিমধ্যেই তেহরান হরমুজ় প্রণালী দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এর পরেই তেলবাহী দুই ‘সুপার ট্যাঙ্কার’ রবিবার রাতে আচমকা গতিপথ বদলে পারস্য এবং ওমান উপসাগরের সংযোগরক্ষাকারী ওই প্রণালী ছেড়ে সরে গিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ জানাচ্ছে, ‘কোসউইজ়ডম লেক’ এবং ‘সাউথ লয়্যালটি’ নামে ওই দুই সুপার ট্যাঙ্কারদু’টি ২০ লক্ষ ব্যারেল করে অশোধিত তেল পরিবহণে সক্ষম। যদিও রবিবার তারা খালি অবস্থাতেই পারস্য উপসাগরের দিকে পাড়ি দিচ্ছিল। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং ইরানের মধ্যে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার চওড়া হরমুজ় প্রণালী বিশ্ব জুড়ে ‘তেলের করিডর’ হিসেবে পরিচিত। সারা পৃথিবীর মোট জ্বালানি তেলের ২০ শতাংশ এই জলপথের মাধ্যমে পশ্চিম এশিয়া থেকে বহির্বিশ্বে রফতানি করা হয়।
ইতিমধ্যেই বিশ্বের অন্যতম তেল পরিবহণকারী দেশ গ্রিস তাদের ট্যাঙ্কার সংস্থাগুলিকে হরমুজ় প্রণালী পরিহার করার ‘পরামর্শ দিয়েছে’। ইরানের হুমকির জেরে আগামী দিনে বিশ্ব জুড়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ইরান-আমেরিকা সংঘাতের আবহে হরমুজ় প্রণালী এবং লাগোয়া অঞ্চলে চারটি তেলবাহী জাহাজে হামলা হয়েছিল। ওয়াশিংটন ওই ঘটনায় তেহরানকে দায়ী করলেও ইরান তা অস্বীকার করেছিল। প্রসঙ্গত, রবিবার ভোরে (ভারতীয় সময়) ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছিল আমেরিকা। তার মধ্যে ছিল ফোরডো, নাতান্জ এবং ইসফাহান।
ইরান থেকে সরাসরি তেল আমদানি না করলেও, ভারতের আমদানি করা অশোধিত তেলের তিন ভাগের দু’ভাগ আসে ইরানের সীমান্তবর্তী হরমুজ় প্রণালী হয়ে। কাতারের মতো দেশ থেকে আমদানি করা প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি-র অর্ধেক আসে সেই পথে। গত ১৩ জুন ইজ়রায়েলের হামলার পরে (যার পোশাকি নাম ‘অপারেশন রাইজ়িং লায়ন’) ইরান সেই সমুদ্রপথ বন্ধের হুমকি দিয়েছিল। এর পরেই বিকল্প খুঁজতে গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে বাণিজ্য মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা বৈঠকে বসেছিলেন। এ বার ইরানের তিন পরমাণুকেন্দ্রে আমেরিকার হামলার জেরে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠল।