Donald Trump

নিজের দেশের গোয়েন্দা রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন উস্কে দিলেন ট্রাম্প! দাবি, সাংবাদিক খাসোগির হত্যা নিয়ে কিছু জানতেন না সৌদির যুবরাজ

সাংবাদিক খাসোগি হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পরে মঙ্গলবার আমেরিকা সফরে গিয়েছেন সৌদির যুবরাজ সলমন। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে বসে বৈঠকও করেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ১০:০৯
Share:

(বাঁ দিকে) সৌদি আরবের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের সঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।

আমেরিকায় কর্মরত সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছুই জানতেন না সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিল সলমন। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সলমনকে পাশে নিয়ে এমনটাই দাবি করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অথচ, অতীতে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাই দাবি করেছিল, খাসোগিকে বন্দি করা বা হত্যার নেপথ্যে সৌদি যুবরাজের যোগ থাকতে পারে। এ বার নয়া দাবিতে নিজের দেশেরই গোয়েন্দা রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন উস্কে দিলেন ট্রাম্প।

Advertisement

খাসোগি হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পরে মঙ্গলবার আমেরিকা সফরে গিয়েছেন সৌদির যুবরাজ সলমন। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে বসে বৈঠকও করেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে দু’জনের আলোচনার সময়ে উঠে আসে খাসোগিকাণ্ডের প্রসঙ্গও। তাতে কিছুটা বিরক্তই দেখায় ট্রাম্পকে। খাসোগিকে এক জন ‘অত্যন্ত বিতর্কিত’ ব্যক্তি বলে ব্যাখ্যা করেন তিনি। কিছুটা জোর দিয়েই মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, সলমন এ সবের কিছুই জানতেন না। হোয়াইট হাউসের অতিথিকে ‘বিব্রত’ করার জন্যই এই প্রসঙ্গটি তোলা হয়েছে বলে দাবি ট্রাম্পের।

সৌদির সাংবাদিক হলেও জীবনের শেষ দিকে খাসোগি পেশাগত ভাবে যুক্ত ছিলেন আমেরিকার এক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। সৌদি রাজপরিবারের সমালোচনায় নিয়মিত কলম ধরতেন সেখানে। সেই খাসোগি ২০১৮ সালে তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুলে সৌদির দূতাবাসের ভিতরে প্রবেশ করে আর বেরোননি। পরে তাঁর মৃত্যুর খবর মেলে। অভিযোগ, সৌদি দূতাবাসের ভিতরেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগ ওঠে, ওই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে সৌদির যুবরাজের মদত রয়েছে। খাসোগির হত্যাকাণ্ড ঘিরে ওই সময় তোলপাড় হয়েছিল আমেরিকায়।

Advertisement

পরে ২০২১ সালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টও সেই অভিযোগকে আরও জোরালো করে। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, খাসোগিকে বন্দি করা বা তাঁকে হত্যা করার নেপথ্যে সলমনের হাত থাকতে পারে। ওই রিপোর্ট সেই সময় বিভিন্ন মার্কিন সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। রিপোর্ট অনুসারে, “২০১৭ সাল থেকে সৌদির নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সে দেশের যুবরাজের। ফলে যুবরাজের অনুমোদন ছাড়াই সৌদির আধিকারিকেরা কোনও অভিযান চালাবেন, এমন সম্ভাবনা খুবই কম।”

ওই রিপোর্টের প্রসঙ্গ টেনে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে এক সাংবাদিক জানতে চান, সৌদির যুবরাজকে কী ভাবে বিশ্বাস করবেন আমেরিকাবাসী। সেই প্রশ্নেই ঈষৎ মেজাজ হারান ট্রাম্প। প্রশ্ন সম্পূর্ণ হতে না হতেই সটান জবাব দেন, “আপনারা মিথ্যা কথা বলছেন।” খাসোগি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আপনি এমন একজনের কথা বলছেন যিনি অত্যন্ত বিতর্কিত ব্যক্তি ছিলেন। আপনি যাঁর কথা বলছেন, তাকে অনেকেই পছন্দ করতেন না। আপনি তাঁকে পছন্দ করুন বা না করুন… এ সব হয়ে থাকে।” এর পরে যুবরাজ সলমনের দিকে তাকিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “উনি (সলমন) কিছুই জানতেন না। এ বার এ বিষয়টি আমাদের এখানেই থামিয়ে দেওয়া উচিত। আমাদের অতিথিকে এ ধরনের প্রশ্ন করে আপনি (সাংবাদিকের উদ্দেশে) বিব্রত করবেন না।”

এই একটি বিষয় আলোচনায় উঠে আসায় স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েন সলমনও। খাসোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে সৌদি যে যথাযথ তদন্ত চালাচ্ছে, তা-ও বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। ট্রাম্পের পাশে বসে তিনি বলেন, “এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা এবং একটি বড় ভুল। তদন্তের জন্য আমরা সকল পদক্ষেপ করেছি। এমন ঘটনা যাতে পুনরায় না-ঘটে, তার জন্যও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।”

সাত বছরের আগের সেই হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ ফের আলোচনায় উঠে আসার পরে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন খাসোগির স্ত্রী হানান এলাটর খাসোগি। ট্রাম্পের উদ্দেশে তিনি লেখেন, ‘আমার স্বামীকে হত্যা করার কোনও যুক্তি থাকতে পারে না। জামাল (খাসোগি) একজন ভাল, সোজাসাপটা এবং সাহসী মানুষ। অনেকে তাঁর মতামত এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়ে একমত না-ও হতে পারেন। যুবরাজ বলছেন তিনি দুঃখিত। তা হলে তাঁর উচিত আমার সামনে এসে আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া। আমার যা ক্ষতি হয়েছে, তা মিটিয়ে দিতে হবে তাঁকে।’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement