Atlanta

‘ঈশ্বরই রক্ষা করেছেন’, বন্ধুর অনুরোধ সত্ত্বেও টাইটানের টিকিট না কাটায় প্রাণ বাঁচল পিতা-পুত্রের

কাজের ব্যস্ততাকে ঢাল করলেও গোটা ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত গলদ লক্ষ করেছিলেন ব্লুম। এত দিন পর সে কথা অকপটে স্বীকার করে নেওয়ার পাশাপাশি, ঈশ্বরকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩ ১১:৫৬
Share:

ডুবোযান টাইটান। —ফাইল চিত্র।

বরাত জোরে প্রাণ রক্ষা বোধ হয় একেই বলে! বন্ধু তথা ‘ওশানগেট’ সং‌স্থার অন্যতম অং‌শীদার স্টকটন রাশের অনুরোধ সত্ত্বেও টাইটান ডুবোযানে চেপে অতলান্তিকের অতলান্তে যেতে চাননি আমেরিকার লাস ভেগাসের বাসিন্দা জয় ব্লুম। কাজের ব্যস্ততাকে ঢাল করলেও গোটা ব্যবস্থাপনার মধ্যে অনেক নিরাপত্তা সংক্রান্ত গলদ লক্ষ করেছিলেন তিনি। এত দিন পর সে কথা অকপটে স্বীকার করে নেওয়ার পাশাপাশি প্রাণে বেঁচে যাওয়ার জন্য ঈশ্বরকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।

Advertisement

শুক্রবার একটি সাক্ষাৎকারে ব্লুম জানিয়েছেন, তিনি এবং তাঁর ২০ বছর বয়সি পুত্র সিনকে টাইটানে চড়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ প্রত্যক্ষ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন রাশ। জানিয়েছিলেন যে, মরশুমের শেষ সফরের জন্য আর মাত্র দু’টি আসন পড়ে রয়েছে। ব্লুম বন্ধুর প্রস্তাব নাকচ করায় ওই দুই আসনের যাত্রী হিসাবে অতলান্তিকের গভীরে পাড়ি দেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ এবং তাঁর পুত্র সুলেমান। তার পরের ঘটনাপর্ব এখন গোটা বিশ্বই জানে।

গত ১৮ জুন গ্রিনিচ সময় অনুযায়ী (জিএমটি) দুপুর ১২টা নাগাদ পাঁচ অভিযাত্রীকে নিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনে অতলান্তিকের ১৩ হাজার ফুট গভীরে নেমেছিল টাইটান। সমুদ্রের উপরে থাকা সহযোগী জাহাজ ‘পোলার প্রিন্স’কে প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর সিগন্যাল পাঠানোর কথা ছিল টাইটানের। কিন্তু দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ টাইটানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে টাইটানের ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও টাইটান না ফেরায় আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনীর কাছে খবর পৌঁছয়।

Advertisement

২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও টাইটানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। ১৯ জুন আমেরিকা এবং কানাডার উপকূলরক্ষী বাহিনী টাইটানের খোঁজে নামে। সমুদ্রের ৪০০০ মিটার গভীরে শব্দ নিরীক্ষণ যন্ত্র পাঠানো হয়। সিএনএন এবং রোলিং স্টোন ম্যাগাজ়িনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে ৩০ মিনিট অন্তর বেশ কয়েকটি জোর শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। কোথা থেকে শব্দ আসছিল সেটি চিহ্নিত করে ২১ জুন দূরনিয়ন্ত্রিত একটি সমুদ্রযানকে জলের গভীরে পাঠানো হয়। ৯৬ ঘণ্টার মতো অক্সিজেন ছিল টাইটানে। কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর তিন দিন কেটে গিয়েছিল, ফলে অক্সিজেনের পরিমাণও কমছিল। তাই দ্রুত উদ্ধারের জন্য আরও দু’টি দূরনিয়ন্ত্রিত সমুদ্রযান পাঠানো হয়। কিন্তু তখনও কোনও হদিস পাওয়া যায়নি টাইটানের। ২২ জুন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টে ৪৮ মিনিটে আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনী জানায়, টাইটানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।

অনুমান করা হচ্ছে, জলের প্রবল চাপে ডুবোযানটি দুমড়ে গিয়েছিল। এই ধরনের ডুবোযান কার্বন ফাইবার এবং টাইটানিয়াম দিয়ে তৈরি করা হয়। যদি তাতে কোনও ত্রুটি থাকে বা কোনও ভাবে চিড় ধরে তা হলে দুমড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ভাবেই হয়তো শেষের মুহূর্ত ঘনিয়ে এসেছিল ডুবোযানের। ওই জলের চাপে কোনও মানুষেরই বেঁচে থাকার কথা নয়। উপরন্তু, সামুদ্রিক প্রাণীর আক্রমণও দেহ না পাওয়ার নেপথ্যে অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে এই দুর্ঘটনায় মৃত শাহজাদা এবং তাঁর পুত্রের প্রতি শোকজ্ঞাপন করে টাইটানের প্রযুক্তিগত দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ব্লুম। জানান যে, ভিডিয়ো গেমের একটি জয়স্টিকের মাধ্যমে টাইটানকে নিয়ন্ত্রণ করা হত। এমনকি আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যাত্রীরা যে ভিতর থেকে টাইটানকে খুলতে পারবেন না, সে কথাও জানতে পারেন ব্লুম। সে সব দিক বিবেচনা করেই, ছেলের উৎসাহ সত্ত্বেও গভীর সমুদ্র অভিযানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। যদিও বন্ধু রাশের যে এর পিছনে কোনও অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না, সে কথা উল্লেখ করে ব্লুম বলেন, “ওর কাছে এটা স্বপ্ন ছিল। ও খুব ভাল একটা মানুষ। আমি ওকে ভালবাসতাম। কিন্তু ও ভীষণ জেদি আর একগুঁয়ে ছিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন