অরুণিমা সিংহ। ছবি: গেটি ইমেজেস।
ট্রেনের কামরায় ছিনতাইবাজদের সামনে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। যার ‘শাস্তি’ হিসেবে তাঁকে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। উল্টো দিক থেকে আসা ট্রেনের চাকায় কাটা পড়েছিল বাঁ পা। সারা রাত যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে দেখেছিলেন, তাঁর কাটা পড়া পায়ে ভিড় করছে ইঁদুরের দল।
উত্তরপ্রদেশের অম্বেদকর নগরের মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণী অরুণিমা সিংহ তখন ২৩। জাতীয় স্তরের ভলিবল খেলোয়াড়। মুহূর্তে জীবনে নেমে এসেছিল ঘোর অন্ধকার। যদিও লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরে আসেননি। অস্ত্রোপচার করে নকল পা বসানোর পরেই অরুণিমা এভারেস্ট জয়ের সঙ্কল্প করেছিলেন। বহু লড়াইয়ের পর ২০১৩ সালের ২১ মে, সকাল ১০:৫৫। জয় করেছিলেন এভারেস্ট। প্রস্থেটিক পা নিয়ে তিনিই বিশ্বের প্রথম এভারেস্টজয়ী মহিলা।
আর সেই সাফল্যের জন্য অরুণিমাকে সম্মান জানাল ইউনিভার্সিটি অব স্ট্রাথক্লিল্ড। গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট দিল ব্রিটেনের এই ঐতিহ্যশালী বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও পড়ুন: আট বছর পর জেলমুক্ত আসিয়া বিবি, কট্টরপন্থী বিক্ষোভে অচল হওয়ার মুখে পাকিস্তান
অরুণিমার লড়াই মোটেই সহজ ছিল না। নকল পা লাগানোর অস্ত্রোপচারের পরেই অরুণিমা যখন এভারেস্ট জয়ের সঙ্কল্প করেছিলেন, সবাই ভেবেছিলেন এত বড় ‘দুর্ঘটনায়’ মেয়েটার মাথাটাও বুঝি বিগড়ে গিয়েছে। অরুণিমার কথায়, ‘‘তখন আমায় কেউ পাগল বললে রাগে-দুঃখে চিৎকার করতাম। এখন ভাল লাগে। লক্ষ্য পূরণে পাগলামি জরুরি।’’
আরও পড়ুন: তিন বছরের শিশুর মুখে চকলেট বোমা ঢুকিয়ে আগুন! ছিন্নভিন্ন শরীরে ৫০ সেলাই
‘পাগল’ বলে সারা দুনিয়া মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর ভারতের প্রথম মহিলা এভারেস্টজয়ী বাচেন্দ্রী পালের কাছে গিয়েছিলেন অরুণিমা। জানিয়েছিলেন এভারেস্ট-স্বপ্নের কথা। উত্তর পেয়েছিলেন, ‘‘তুমি যে এই অবস্থাতেও এভারেস্ট অভিযানের কথা ভেবেছ, এতেই শৃঙ্গজয় হয়ে গিয়েছে তোমার। বাকিটা কেবল লোকের জানার অপেক্ষা।’’
উত্তরকাশীতে পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় পায়ে একটু চাপ পড়লেই প্রস্থেটিকের সংযোগস্থল ফেটে রক্ত পড়ত। দাঁতে দাঁত চেপে অরুণিমা নিজেকে বোঝাতেন, এই যন্ত্রণার একমাত্র উপশম এভারেস্ট। প্রশিক্ষণ শেষ করে, কয়েকটি ছয়-সাড়ে ছ’হাজার মিটারের শৃঙ্গ আরোহণে পরে ২০১৩-র এপ্রিলে এভারেস্ট অভিযান শুরু। অসম্ভবের সঙ্গে আত্মবিশ্বাসের সে এক চরম লড়াই। আর তাতে জিতেছে আত্মবিশ্বাসই। তাই দড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় খাড়া বরফ-দেওয়ালে ক্র্যাম্পন (বরফে চলার জুতোর নীচে লাগানো কাঁটা) গাঁথার সময় যখন প্রস্থেটিক পা-টা ঘুরে গিয়ে গোড়ালি সামনে চলে এসেছিল, তখনও হাল ছাড়েননি অরুণিমা। শেরপার সাহায্যে পা ঠিক করে পরের পদক্ষেপ করেছিলেন।
আর অরুণিমাকে সম্মান জানিয়ে উচ্ছ্বসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। প্রিন্সিপাল জিম ম্যাকডোনাল্ডের মতে, ‘‘হারিয়ে না যাওয়ার এক উদাহরণ অরুণিমা। মনের জোর থাকলে সব কিছুই সম্ভব। এটাই প্রমাণ করেছেন তিনি। এই রকম এক জনকে সম্মান জানাতে পেরে আমরা খুবই খুশি।’’ আগামী প্রজন্মের কাছে অরুণিমা উদাহরণ তৈরি করেছেন বলেও মন্তব্য করেন জিম।
(সারা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে বাংলায় খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)