তথাকথিত বিপদসীমার উপর দিয়েই উড়ে যাচ্ছিল এম এইচ-১৭। তবু এড়ানো যায়নি ক্ষেপণাস্ত্র। বুক মিসাইল হানায় নিমেষে খতম ২৯৮টি প্রাণ।
সেই ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যেই ওই একই উড়ান পথে আজ ইউক্রেনের দু’টি যুদ্ধ বিমান গুলি করে নামাল জঙ্গিরা। পূর্ব ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক এবং লুহানস্কের মাঝে দ্মিত্রিকায় এই ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশের অনুমান, এই হানার পিছনেও রুশপন্থী জঙ্গিরা। ওই পথে আসামরিক উড়ান চলাচল আপাতত বন্ধ থাকলেও আন্তর্জাতিক উড়ান নির্দেশিকা বদলের এখনই কোনও ইঙ্গিত নেই।
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেনের মতো পরিস্থিতি গাজাতেও। ইজরায়েলকে ক্রমাগত চ্যালেঞ্জ করছে প্যালেস্তাইনি জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস। তাদের দাবি, অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র তাদের হাতে রয়েছে। বছর দু’য়েক আগেই ইজরায়েল দাবি করেছিল, হামাসের কাছে বিমান ধ্বংস করার মতো বেশ কিছু মারক ক্ষেপণাস্ত্র আছে। তাদের আশঙ্কা, লিবিয়ায় গদ্দাফি শাসনের অরাজকতার সুযোগ নিয়ে বেশ কিছু অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র চোরাই পথে হামাসের হাতে চলে আসে। গাজা থেকে বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র হানা তাই অসম্ভব নয়।
গাজায় সাম্প্রতিক সংঘর্ষের প্রথম দিকেই ইজরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল হামাস। সরাসরি বিমানবন্দরে না হলেও হামাসের ক্ষেপণাস্ত্র আজ সকালেই আছড়ে পড়েছে বিমানবন্দর থেকে মাইল খানেক দূরে। জনশূন্য এলাকা বলে ক্ষয়ক্ষতি অবশ্য বিশেষ হয়নি।
এই ধরনের হামলার আশঙ্কাতেই আগামী চব্বিশ ঘণ্টা ইজরায়েলে সব বিমান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা। পরিষেবা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপেরও বেশ কিছু বিমান সংস্থা। ইজরায়েল ও জার্মানির মধ্যে দিনে অন্তত দশটি করে বিমান চালায় লুফৎহানসা। আগামী ৩৬ ঘণ্টা বিমান পরিষেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারাও। এয়ার ফ্রান্সও অনির্দিষ্ট কালের জন্য পরিষেবা স্থগিত রাখছে। যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দিতেও রাজি বহু মার্কিন ও ইউরোপীয় বিমান সংস্থা।
ব্যতিক্রম শুধু ব্রিটিজ এয়ারওয়েজের। লন্ডন থেকে তেল আভিভ— দিনে অন্তত দু’বার বিমান চলাচল অব্যাহত রাখতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, গাজার পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক তাঁরা। উড়ান বাতিল করার কোনও প্রয়োজন এখনও পর্যন্ত দেখছেন না তাঁরা।
ব্রিটিজ এয়ারওয়েজের এই অবস্থান নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে উড়ান বিশেষজ্ঞ মহলে। শুধু পূর্ব ইউক্রেন নয়, সমস্ত যুদ্ধ-বিধ্বস্ত উড়ান পথ নিয়েই নতুন করে আলোচনার দাবি তুলেছেন তাঁরা। যেমন, এম এইচ ১৭-র ক্ষেত্রে যে ৩২ হাজার ফুট নিরাপদ উচ্চতার কথা বলা হচ্ছে, উড়ান বিশেষজ্ঞদের দাবি, তা বাড়িয়ে দেওয়া হোক।
ইজরায়েলে আপাতত বিমান চলাচল বন্ধ রাখলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকের উপর দিয়ে উড়ছে আমেরিকার বহু যাত্রিবাহী বিমান। সিরিয়া-আফগানিস্তানের মতো এলাকার উপর দিয়েও উড়ান অব্যাহত। ইউনাইটেড ফ্লাইট ৮২ রোজ নিউ জার্সি থেকে দিল্লি যাতায়াত করছে আফগানিস্তানের উপর দিয়েই।
মার্কিন প্রশাসনের একটা বড় অংশ অবশ্য ইজরায়েলে স্বাভাবিক বিমান পরিষেবা চালু রাখার পক্ষে। বেন গুরিয়নের কাছে হামাসের হামলার কিছু ক্ষণ পরেই ইজরায়েলে উড়ে যান নিউ ইউর্কের প্রাক্তন মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ। তাঁর দাবি, “বেন গুরিয়ন বিশ্বের অন্যতম সুরক্ষিত বিমান বন্দর। এখানে পরিষেবা বন্ধ রাখা মানে হামাসকেই এক প্রকার জিতিয়ে দেওয়া।” মার্কিন বিমান প্রশাসনের কাছে তাঁর আর্জি, “স্বাভাবিক বিমান পরিষেবা চালু রাখুন। সন্ত্রাসবাদের কাছে মাথা নোয়াবেন না।”
গাজায় নিহত বেড়ে ৬৫০
সাড়ে ছ’শোয় পৌঁছল গাজা-সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা। যুদ্ধ বিরতির আলোচনার চললেও রণে ভঙ্গ দিচ্ছে না ইজরায়েল। পাল্টা মারছে হামাসও। বুধবার গাজার একটি স্কুলে মিলেছে একটি রকেট লঞ্চার। এ দিন ইজরায়েলে পৌঁছেছেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান-কি মুন এবং ইজরায়েলি প্রশাসনের সঙ্গে শান্তি-বৈঠকে বসার কথা তাঁর। এ দিন দোহায় একটি সাংবাদিক বৈঠক করে হামাস প্রধান খালেদ মেশাল বলেন, “ইজরায়েল গাজা ধ্বংস করতে এসেছে। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার। তবে মানুষই তা প্রতিরোধ করেছে।”