ক্রাইমিয়া-চুক্তিতে সই পুতিনের, ফোন মনমোহনকে

পশ্চিমী দুনিয়ার যাবতীয় হুমকি, নিষেধাজ্ঞাকে এক ফুঁয়ে উড়িয়ে ক্রাইমিয়াকে নিজের দেশের অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিটিতে সই সেরে ফেললেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর ফলে ইউক্রেনের এই উপদ্বীপটির রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্তি এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা বলেই মত কূটনীতিকদের।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মস্কো ও কিয়েভ শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৪ ০২:০০
Share:

পশ্চিমী দুনিয়ার যাবতীয় হুমকি, নিষেধাজ্ঞাকে এক ফুঁয়ে উড়িয়ে ক্রাইমিয়াকে নিজের দেশের অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিটিতে সই সেরে ফেললেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর ফলে ইউক্রেনের এই উপদ্বীপটির রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্তি এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা বলেই মত কূটনীতিকদের। পুতিনের এই পদক্ষেপের পরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেপ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে পশ্চিমী দুনিয়া। তারই অঙ্গ হিসেবে এ দিনই শিল্পোন্নত আটটি দেশের সংগঠন জি-৮ থেকে রাশিয়াকে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেছেন ফ্রান্সের বিদেশমন্ত্রী।

Advertisement

পশ্চিমী দুনিয়ায় ক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়া রাশিয়া অবশ্য এখনও নিজের অবস্থানে অনড়। আর সেটা বোঝাতেই এ দিন সই-পর্ব সারার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে ফোন করেন তিনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দিনের বন্ধু ভারতকে পাশে পেতেই তাঁর এই প্রচেষ্টা বলে মত কূটনীতিকদের। দু’পক্ষের আলোচনায় মনমোহনকে ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন সঙ্কট ব্যাখ্যা করেন পুতিন। মনমোহন তাঁকে জানান, নয়াদিল্লি আগাগোড়াই ঐক্য এবং আঞ্চলিক সংহতি বজায় রাখার পক্ষে। কূটনৈতিক পথেই বর্তমান সঙ্কট নিরসনের পথ মিলবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রাশিয়ার সঙ্গে জুড়তে চেয়ে ক্রাইমিয়ায় যে গণভোট হয়েছিল, তাকে পশ্চিমী দুনিয়ার একাধিক দেশ অবৈধ বললেও পুতিন প্রশাসন যে তাতে কান দিতে নারাজ, তা আজ ফের স্পষ্ট করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। রুশ পার্লামেন্টে কিছুটা আবেগের সঙ্গেই তাঁর ঘোষণা, “জনগণের হৃদয়ে এবং মননে ক্রাইমিয়া সব সময়ই রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।” এ দিন ক্রাইমিয়ার প্রধানমন্ত্রী সের্গেই আকসিয়োনভকে পাশে নিয়েই কৃষ্ণসাগরের এই উপদ্বীপটিকে রাশিয়া-ভুক্ত করার প্রস্তাবিত চুক্তিতে সই করেছেন পুতিন। আর তার পরেই ক্রাইমিয়া জুড়ে গেল রুশ মানচিত্রে।

Advertisement

রাশিয়ার এই পদক্ষেপের পরে ইউক্রেনের অন্তর্বর্তী সরকারের আশঙ্কা, যে কোনও মুহূর্তে তাদের দেশে হামলা চালাতে পারে পুতিন প্রশাসন। ইউক্রেনের পাল্টা হিসেবে তারা এ দিন জানিয়ে দিয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। পুতিন অবশ্য আজ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ইউক্রেনের আশঙ্কাকে উড়িয়ে বলেছেন, “আমরা ইউক্রেনকে ভাঙতে চাই না। আমাদের সেটা করার কোনও প্রয়োজনও নেই।” ইউক্রেন-সঙ্কট নিয়ে পশ্চিমী দুনিয়ার ‘বাড়াবাড়ি’-তে ক্ষুব্ধ পুতিনের সাফ কথা, “পশ্চিমী দেশগুলি সীমা লঙ্ঘন করে নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখাচ্ছে রাশিয়াকে। ওদের সঙ্গে লড়াইয়ে আগ্রহ নেই আমাদের। ওরা সার্বিয়া থেকে কসোভো আলাদা হওয়ার সময়ে কিন্তু আপত্তি করেনি। ক্রাইমিয়ার বেলায় ওদের যত আপত্তি!”

রাশিয়া ইউক্রেনকে ভাঙতে চায় না বলে পুতিন জানালেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ দিনও ফের কড়া ভাষায় আক্রণ করেছেন মস্কোকে। তাঁর হুঁশিয়ারি, ইউক্রেনে নাক গলানো বন্ধ না করলে আরও ঝামেলার মুখে পড়তে হবে রাশিয়াকে। জাপানও আজ রাশিয়ার উপরে বিনিয়োগ এবং ভিসা উদারীকরণের ক্ষেত্রে কিছুটা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ব্রিটেনও জানিয়ে দিয়েছে, তারা ক্রাইমিয়াকে এখনও ইউক্রেনের অংশ হিসেবেই মনে করে।

তবে এ সবে হেলদোল নেই রাশিয়ার। রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ডুমাও প্রেসিডেন্টের সুরেই সায় দিয়ে বলেছে, “আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। ক্রাইমিয়ার রুশভাষী মানুষদের সঙ্গে আমরা বিশ্বাসঘাতকতা করব না।” আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা তালিকায় রাশিয়ার প্রথম সারির একাধিক কর্তার নাম জুড়ে যাওয়াতেও বিচলিত নয় ডুমা। উল্টে তাদের কটাক্ষ, “ডুমার সব সদস্যকেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুক আমেরিকা! আমরা নিষেধাজ্ঞায় ভয় পাই না।”

ইউক্রেন প্রশ্নে আমেরিকার সঙ্গে গলা মিলিয়েছে ফ্রান্সও। ইউক্রেন সঙ্কট এবং ক্রাইমিয়ার গণভোট নিয়ে অসন্তোষের জেরে রাশিয়াকে জি-৮ থেকে সাসপেন্ড করার কথা আজ ঘোষণা করেছে তারা। এই গোষ্ঠীভুক্ত অন্য সাতটি দেশ আগেই বলেছিল, জুন মাসে রাশিয়ার সোচিতে জি-৮ সম্মেলনে যোগ দেবে না। রাশিয়াকে ছাড়াই বৈঠক করবে বাকি সাতটি দেশ। এ দিন হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাশিয়া সম্পর্কে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, আগামী সপ্তাহে আমেরিকা-সহ জি ৭-ভুক্ত অন্য দেশগুলি অর্থাৎ ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, কানাডা, ইতালি এবং জাপান এক যোগে আলোচনায় বসে ঠিক করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন