ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে সাংহাইয়ে মৃত ৩৬

বছর শেষের রাত। বর্ষবরণ উৎসবে যোগ দিতে হুয়াংপু নদীর ধারে চেন ওয়াই স্কোয়্যারে জড়ো হয়েছিলেন অন্তত হাজার দশেক মানুষ। কিন্তু শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেল উৎসব। ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাত ছোঁয়ার আগেই মানুষের হুল্লোর বদলে গেল কান্নায়। স্রেফ ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে মারা গেলেন ৩৬ জন। আহত অন্তত ৪৭।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

সাংহাই শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৯
Share:

পদপিষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছেন বহু মানুষ। সাংহাইয়ে। ছবি: রয়টার্স।

বছর শেষের রাত। বর্ষবরণ উৎসবে যোগ দিতে হুয়াংপু নদীর ধারে চেন ওয়াই স্কোয়্যারে জড়ো হয়েছিলেন অন্তত হাজার দশেক মানুষ। কিন্তু শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেল উৎসব। ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাত ছোঁয়ার আগেই মানুষের হুল্লোর বদলে গেল কান্নায়। স্রেফ ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে মারা গেলেন ৩৬ জন। আহত অন্তত ৪৭।

Advertisement

সন্ধে নামতেই হুয়াংপু নদীর ধারে লাইট শো দেখতে ভিড় জমেছিল বেশ। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তে থাকে ভিড়ের চাপ। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় সাড়ে ১১টা নাগাদ। কোনও মতে বেঁচে ফিরেছেন জৌ ঝিজিয়ান। বললেন, “কেউ এক জন পিছন থেকে আমার চুল খামচে ধরেছিল। বেশ টের পাচ্ছিলাম, বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে। ঘাড়ের কাছে তাঁর নিশ্বাস এসে পড়ছিল। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মেয়ে চিৎকার করে যাচ্ছিল ‘দয়া করে আমায় বাঁচাও। আর পারছি না।’ মাটিতে তখন লুটিয়ে পড়ে অন্য এক তরুণীর নিথর দেহ।” জানালেন, কোনও মতে দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন জৌ। পড়ে গেলেই সাক্ষাৎ মৃত্যু। কয়েক মুহূর্তে বদলে গেল ছবিটা। ভিড়টা তখন কিছুটা হালকা। আর্তনাদও যেন কমেছে। তবে এক পা এগোনোর উপায় নেই। জৌ জানালেন, চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে দেহ।

প্রতি বছরই এই এলাকায় ভিড় জমান মানুষ। কিন্তু এ বার কী এমন হল? সন্দিহান তদন্তকারী কর্তারা। স্পষ্ট করে এখনও কিছু জানা যায়নি। তবে একটি সূত্রের খবর, কাছেই একটি বাড়ি থেকে ১০০ ডলারের মতো দেখতে সবুজ কাগজের টুকরো ওড়ানো হয়েছিল। তাতেই হুড়োহড়ি পড়ে যায়। অনেকে ভেবে বসেন, এটাও উৎসবের অংশ। সত্যিকারের ডলার ভেবে ছুটে ধরার চেষ্টা করেন কিছু লোক। প্রত্যক্ষদর্শীদের কারও কারও দাবি, কারা কাগজ উড়িয়েছিল, তা-ও তাঁরা দেখেছিলেন। কিন্তু পরিণতি যে এমন কিছু হতে চলেছে, তা টের পাননি।

Advertisement

কুই টিংটিং নামে ২৭ বছরের তরুণী যেমন জানালেন, বেশ কয়েকটা নোট তিনি পেয়েছিলেন। তবে নকল বুঝতে পেরে ফেলে দেন। সামনে তত ক্ষণে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। কান্না ভেজা গলায় কুই বললেন, “কী বীভৎস দৃশ্য! ধাক্কাধাক্কিতে এক দল মানুষ পড়ে গিয়েছে। তাঁদের পাড়িয়ে দিয়েই চলে যাচ্ছে আর এক দল।”

সাংহাই পুলিশ অবশ্য এখনই ওই নকল নোট ওড়ার ঘটনাকেই দুর্ঘটনার কারণ বলতে নারাজ। তদন্ত চলছে, আহতদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে জানিয়েই তারা মুখে কুলুপ এঁটেছে।

ভিড় এড়িয়ে একটু ফাঁকা জায়গা দেখে দাঁড়িয়ে ছিলেন শিয়াও জি। দূরে দাঁড়িয়েই উপভোগ করছিলেন উৎসবের মেজাজ। বললেন, “হঠাৎ দেখি, ভিড়টা গতি হারিয়ে কেমন যেন ছটফট করছে। চারপাশে তখন চিৎকার আর কান্নার আওয়াজ। ভয়ে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল।”

স্থানীয় সাংবাদিক গৌ শিয়ানঝংয়ের বক্তব্য, নদীর ধারে একটা সিঁড়ির কাছে ধাক্কাধাক্কি লেগে গিয়েছিল। কিছু লোক সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছিল। অনেকে নামছিল। সাড়ে এগারোটা নাগাদ হঠাৎই এক মহিলা ও একটি বাচ্চার কান্নার শব্দ ভেসে আসে। শিয়ানঝংয়ের কথায়, “তার পরই কেউ চেঁচিয়ে ওঠে। ধাক্কা দেবেন না! কেউ পড়ে গিয়েছে!” সেই শুরু। তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ। আহতদের নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে। আজ সকালেও হাসপাতালের লবিতে অসংখ্য উদ্বিগ্ন মুখের ভিড়। বন্ধুবান্ধব-পরিজনের খোঁজে সারা রাত হত্যে দিয়ে পড়ে রয়েছেন তাঁরা। দুপুর নাগাদ হঠাৎ একটা খবর আসতেই আরও গুমোট হয়ে উঠল পরিবেশ। জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন এক মহিলা। জানা গেল, গত কাল রাতের ঘটনায় তাঁর বছর ষোলোর মেয়েটি আর নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন