Inspirational Story

ডায়েট করছেন, আখেরে ক্ষতি হচ্ছে না তো? জানাচ্ছেন শর্মিষ্ঠা

দিনরাত গুগল সার্চ করে পড়ে ফেলেছেন একগুচ্ছ আর্টিকল। বদলে ফেলেছেন খাদ্যতালিকা। মাছ, মাংস, ভাত, রুটি সব ছেড়ে খাচ্ছেন ফল আর জল। কিন্তু এতে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে না তো? কথোপকথনের শুরুতেই প্রশ্নগুলো করে ফেললেন ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত

শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত

শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত

সংগৃহীত প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:২০
Share: Save:

পুজোর আগে কঠিন ডায়েট! দু’সপ্তাহে কমে যাবে ৭-৮ কেজি ওজন! ব্যায়াম না করেই হতে চান তন্বী? ইমিউনিটি বাড়াতে কী খাবেন? দিনরাত গুগল সার্চ করে পড়ে ফেলেছেন একগুচ্ছ আর্টিকল। বদলে ফেলেছেন খাদ্যতালিকা। মাছ, মাংস, ভাত, রুটি সব ছেড়ে খাচ্ছেন ফল আর জল। কিন্তু এতে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে না তো? কথোপকথনের শুরুতেই প্রশ্নগুলো করে ফেললেন ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত

বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে স্থূলতার সমস্যা ঘরে ঘরে। জীবনযাত্রায় অনিয়ম, সঠিক সময়ে খাওয়াদাওয়া না করা, কম ঘুম ইত্যাদির ফলে এই সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছে। অথচ বেশির ভাগ সময়ে মানুষ সমস্যার গভীরে না গিয়েই মোটা থেকে রোগা হওয়ার পেছনে দৌড়য়। অনেক সময়ে ফলও পাওয়া যায়। কিন্তু তা শরীরের সার্বিক ক্ষতি করে।

এই প্রসঙ্গ তুলে শর্মিষ্ঠা বললেন, “আসলে সাধারণ মানুষের ধারণা– ডায়েটিশিয়ান মানে আমায় মোটা থেকে রোগা করে দেবে। বা রোগা থেকে মোটা করে দেবে। এটা সম্পূর্ণ ভুল।” প্রসঙ্গত, দেশে দীর্ঘদিন ধরে ডায়েটিশিয়ান হিসাবে প্র্যাকটিস করছেন শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত। তাঁর ব্যান্ড ‘নিউট্রিশন মন্ত্র’-এর হাত ধরে বহু মানুষ জীবনে ছন্দ ফিরে পেয়েছেন।

সাধারণ মানুষের জীবনে এক জন ডায়েটিশিয়ানের ভূমিকাটা ঠিক কী? উত্তরে শর্মিষ্ঠা বললেন, “বেশির ভাগ মানুষই আমার কাছে এসে বলেন, আমি খুব মোটা। আমায় রোগা করে দিন। কিন্তু তাঁর যে অন্যান্য সমস্যাগুলিও রয়েছে, সেগুলি তাঁরা ভুলেই যান। সেটা ধরিয়ে দিয়ে সমস্যার সমাধানই ডায়েটিশিয়ানের কাজ।”

শর্মিষ্ঠা মনে করেন, এক জন যোগ্য ও দক্ষ ডায়েটিশিয়ানের কাজ হল কোনও মানুষকে সুস্থ থাকার চাবিকাঠি বলে দেওয়া। এবং তিনি সেটাই করে থাকেন। কিন্তু কী ভাবে? শর্মিষ্ঠা জানাচ্ছেন, “প্রথমত, আমাকে দেখে বাজে লাগছে, কেউ আমাকে দেখে খারাপ কথা বলল, বা ওজন বেড়ে গিয়েছে এই সমস্ত কথাকে উপেক্ষা করে ভেবে নিতে হবে আমাকে সুস্থ থাকতে হবে। সুস্থ থাকার জন্য প্রথমেই যেটা দরকার, তা হল ছ’মাস পর পর রুটিন চেকআপ করা। গৃহবধূ থেকে কর্মরত মহিলা বা পুরুষ, সকলের ক্ষেত্রেই এই নিয়মটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

কথাটা কিন্তু সত্য়িই। আমরা সকলেই জামা,কাপড়, গয়না ইত্যাদি অনেক কিছুই কিনি। বছরে নিয়ম করে বেড়াতে যাই। কিন্তু প্রতি ৬ মাস অন্তর নিজের শরীরের সম্পূর্ণ চেকআপ করানোর ক্ষেত্রে আমরা সে ভাবে টাকা খরচ করি না। এখানেই আপত্তি জানিয়েছেন শর্মিষ্ঠা। তাঁর মতে, এতে আখেরে শরীরের ক্ষতি তো হয়ই। বরং পরবর্তী কালে সেই সমস্যা বড় আকারও নিতে পারে। শর্মিষ্ঠা জানাচ্ছেন, “ছ’মাস অন্তর সম্পূর্ণ শরীরের চেকআপ করার পরে যদি কারও রিপোর্টে কিছু সমস্যা ধরা পড়ে, তা হলে কোনও ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।” তিনি আরও বলেন, “এখন দশ জন মেয়ের মধ্য়ে প্রায় সাত জনেরই নয় পিসিওএস বা পিসিওডি বা সিস্ট রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আর এর ফলেই কিন্তু ওজন বাড়ে।”

পরিসংখ্যান বলছে, হরমোনগত সমস্যা বা ডায়াবেটিস থাকলে মানুষের মোটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই প্যারামিটারগুলি বাড়লে বা কমে গেলে ডায়েট করা অত্যন্ত জরুরি। এই ক্ষেত্রে শর্মিষ্ঠা বলছেন, “আমি প্রধানত রোগীর রিপোর্ট দেখে কোনও সমস্যা থাকলে সেগুলিকে প্রথমে গোড়া থেকে নির্মূল করায় প্রাধান্য দিই।”

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রজন্মের কাছে বাড়ছে রোগা হওয়ার চাহিদা। তবে সব ক্ষেত্রেই ভিতর থেকে সুস্থ হওয়া ভীষণ ভাবে জরুরি। কী ভাবে দ্রুত ওজন কমানো যাবে, সেটাই ইদানীং নবীন প্রজন্মের মূল উদ্দেশ্য। আর যে সমস্ত মানুষের অন্য কোনও সমস্যা নেই, তাঁদের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা প্রযোজ্য। তবে লক্ষ্য যা-ই হোক, ডায়েট শুরু করার আগে অবশ্যই ভাল কোনও ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

এক জন যোগ্য ও দক্ষ ডায়েটিশিয়ানের কাছে চ্যালেঞ্জিং বিষয় কী? শর্মিষ্ঠার উত্তর, “যদি কোনও মানুষের শরীরে অন্যান্য রোগ বাসা বাঁধে, তাকে নির্মূল করাই হল এক জন ডায়েটিশিয়ানের প্রধান চ্যালেঞ্জ। যখন কেউ ডায়েটিশিয়ানের কাছে যান, তখন কত সময়ের মধ্যে কত কেজি ওজন কমাতে হবে তা না ভেবে তাঁর পরামর্শ মেনে চলা প্রয়োজন। তবে হ্যাঁ, সেই ডায়েটিশিয়ানের যোগ্যতা বা কোয়ালিফিকেশন দেখে তবেই তাঁর কাছে যাবেন।” প্রসঙ্গত, ডায়েটে ওজন বাড়ানো-কমানোর জন্য কোনও সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করেন না শর্মিষ্ঠা। তিনি বিশ্বাস করেন, কোনও খাবারের পরিবর্তে সাপ্লিমেন্ট কোনও দিন কাজ করে না। বরং তাঁর মতে, যাঁরা ভাবছেন সাপ্লিমেন্ট খেয়ে রোগা বা মোটা হবেন, তাঁদের ভবিষ্য়তে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই বেশি।

পুজোর আগে অনেকেই নিজেদের চেহারা ছিপছিপে করে তুলতে চান। তাঁদের জন্য বিশেষ টিপস্ দিচ্ছেন শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত

১ টেবিল চামচ জিরে সারা রাত জলে ভিজিয়ে রাখুন। ৩০ এমএল অ্যালোভেরা জুস নিন। ভোরে ঘুম থেকে উঠে দু’টি মিশিয়ে খালি পেটে রোজ খান।

এই দাওয়াই ওজন কমাতে সাহায্য করবে। শরীরকে করে তুলবে টক্সিন ফ্রি। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি, রক্তে শর্করার পরিমাণও আয়ত্ত্বে থাকবে।

আরও অপরাজিতাদের গল্প জানতে ক্লিক করুন —অপরাজিতা ২০২৩

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Women Entrepreneur Inspirational story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Share this article

CLOSE