Advertisement
London Durga Puja

Durga Puja 2021: আশায় আছি, এই বছর আমরা সব ‘দশভুজা’ মিলে ‘অসুর’ নিধন করে আবার সিঁদুর খেলতে যাব

রীতিমতো কুমোরপাড়া থেকে মূর্তি বানিয়ে নিয়ে গিয়ে সব নিয়ম কানুন মেনে লন্ডনে আমরা পুজো করি।

আমাদের এই ছোট পুজোমণ্ডপে গেলে কেন জানি না মনে হয় এটা আমার নিজের বাড়ির পুজো।

আমাদের এই ছোট পুজোমণ্ডপে গেলে কেন জানি না মনে হয় এটা আমার নিজের বাড়ির পুজো।

চন্দ্রা চক্রবর্তী
লন্ডন শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২১ ১২:০৯
Share: Save:

কথায় আছে, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে! তা বাঙালিদেরও তাই। পৃথিবীর যেখানেই যাক, আরও দু’চাট্টি বাঙালি জুটিয়ে একখানা ঘট সাজিয়ে হলেও ‘দুগ্গা দুগ্গা’ বলে বছরে এক বার মা দুর্গাকে ডেকে এনে হইচই করবেই! রীতিমতো কুমোরপাড়া থেকে মূর্তি বানিয়ে নিয়ে গিয়ে সব নিয়ম কানুন মেনে লন্ডনে আমরা পুজো করি। শুধু রাস্তার মাঝখানে প্যান্ডেল বাঁধাটাই যা বাকি। সেটাও কোনও দিন করেই ছাড়ব!

Advertisement

আজীবনের সব গপ্পো উল্টে দিয়ে গত বছর মা দুর্গা কোভিড ‘অসুর’-এর কাছে হেরে যাওয়াতে আর পুজোআচ্চা কিছুই হল না। তাই তার আগের বছরের হুল্লোড়ের স্মৃতি নিয়েই সময় কেটেছে।

লন্ডনে বিরাট বিরাট পুজো হয়। আর দল বেঁধে বাঙালি, অবাঙালি, বাঙালি বিয়ে করা সাহেবসুবো—সব্বাই মিলে ওই কটা দিন চুটিয়ে আনন্দ, গান বাজনা, নাটক, খাওয়াদাওয়া, পরনিন্দা-পরচর্চা, হল্টার নেক ব্লাউজ পরে সাজগোজ—সব কিছুই হয়। নর্থ লন্ডনের ক্যামডেন বা হ্যারোর মতো বড়োপুজোর না হলেও, উইম্বলডন কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের যে পুজোতে গিয়ে ঠাকুর সাজাবার জন্য আমি হাত লাগাই, আর দুর্গা মূর্তির চোখের দিকে তাকিয়ে এক অদ্ভুত আবেগে নিজের চোখের জল আটকানোর বৃথা চেষ্টা করি, সেই পুজোটা হয় মরডেন স্টেশনের কাছে স্যামস হলে। আমাদের এই ছোট পুজোমণ্ডপে গেলে কেন জানি না মনে হয় এটা আমার নিজের বাড়ির পুজো। সবাই বড্ড আন্তরিক, অফিসের লাঞ্চ টাইমে গেলে ফেরার সময় কেউ না কেউ ঠিক এক দিকে ডেকে নিয়ে গিয়ে এক থালা খিচুড়ি, লাবড়ার তরকারি আর দু’একটা মিষ্টি জোর করে হাতে তুলে দেয়।

বিদেশে সব মেয়েই দশভুজা!

বিদেশে সব মেয়েই দশভুজা!

লন্ডনের পুজোগুলো কলকাতার পুজোর সঙ্গে দিন মিলিয়েই হয়। আমেরিকাবাসীদের মতো আমাদের উইকেন্ড পুজো নয়। ষষ্ঠীর বোধন থেকে সপ্তমীতে ভোর রাতে উঠে কলাবউ স্নান করানো (টেমসের জলের সঙ্গে ইন্ডিয়ান পাড়া থেকে কিনে আনা বোতলের গঙ্গা জল মিশিয়ে বউকে স্নান করানো হয়), নিয়ম মতো ঢাক বাজিয়ে ঘট স্থাপন থেকে শুরু করে সন্ধিপুজো—পাঁচ দিনের যাবতীয় বিধি মেনেই কর্মকর্তারা পুজোর আয়োজন করেন। ধুনুচি নাচও বাদ যায় না। অন্য সময় যাদের ‘আঙ্কল’ বলি, তাঁদেরই কয়েক জন এই পাঁচ দিন নিরামিষ খেয়ে পুরোহিত মশাইয়ের আসন নেন, আর চমৎকার উচ্চারণে মন্ত্রপাঠ করেন। ঘট মাথায় পুরোহিতকে মাঝখানে রেখে মেয়েরা গোল হয়ে ঘুরে কিছু আচার পালন করি। অনেকেই এই ক’টা দিন অফিস থেকে ছুটি নেন। কিন্তু যারা পারি না, তারা অফিস ফেরত বাড়ি গিয়ে বর-বাচ্চাকে তাড়া দিয়ে নিজের মেকআপ শেষ করে আবার মণ্ডপে এসে কাজে হাত লাগাই। পুরোহিতের হাতের কাছে টুকটাক জিনিস এগিয়ে দেওয়া, অঞ্জলি দেওয়া, খাবার পরিবেশন করা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা—কাজ তো কিছু কম থাকে না।

Advertisement

এই করে ক’টা দিন মেতে থাকা। তার পর এসে যায় সিঁদুর খেলার দিন! লক্ষ করে দেখেছি, যে সব মেয়ে অন্য দিনগুলিতে কোনও না কোনও কারণে মণ্ডপে এক বারও আসতে পারে না, তারা কিন্তু থালায় একটু মিষ্টি, এক কৌটো সিঁদুর, ক’টা ফুল নিয়ে ঠিকই সিঁদুর খেলার সময়টায় চলে আসে আর চেনা-অচেনা সব্বার গালে কপালে সিঁদুর দিয়ে বিজয়িনীর মতো হাসিতে নিজেকে রাঙিয়ে নেয়। আমাদের মণ্ডপে লোকজনকে বাড়িতে আসা জামাইয়ের মতো করে রীতিমতো সেধে ‘আর একটু নাও’ বলে খাওয়ানো হয়। আমাদের মা দুগ্গা খুব লাকি। আমরা তাকে জলে ফেলি না। তিনি বিসর্জনের পর কোনও এক কর্মকর্তার বাড়ির গ্যারেজে আশ্রয় পান।

আমাদের মণ্ডপে লোকজনকে বাড়িতে আসা জামাইয়ের মতো করে রীতিমতো সেধে ‘আর একটু নাও’ বলে খাওয়ানো হয়।

আমাদের মণ্ডপে লোকজনকে বাড়িতে আসা জামাইয়ের মতো করে রীতিমতো সেধে ‘আর একটু নাও’ বলে খাওয়ানো হয়।

আমরা যারা বিদেশে থাকি, তারা মা দুর্গার সঙ্গে প্ল্যান করে এই সময় বাপের বাড়ি আসতে পারি না। তাই মাকে বিদায় দেবার সময় আমাদের কষ্ট হয়তো দেশের মেয়েদের চেয়ে আর একটু বেশি। বিদেশে সব মেয়েই দশভুজা! মা কে বিদায় দিয়েই আবার নিজের জগতের জুতোসেলাই থেকে চণ্ডীপাঠে ফিরে যাই। গত বছর অসুর ‘করোনা’ মাকে হারিয়ে দিলেও এই বছর আশায় আছি, আমাদের মতো সব ‘দশভুজা’ মিলে অসুর নিধন করে আবার সিঁদুর খেলতে যাব। প্রাণ ভরে সাজব। আর একশো আটটা প্রদীপ জ্বালতে জ্বালতে পৃথিবীর অসুখ সারাবার জন্য প্রার্থনা করব…।

(লেখিকা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.