প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

‘বহু বছর ধরে বন্ধ লাইব্রেরির শৌচাগার…ওই লোকটা তা হলে কে?’ ভূত চতুর্দশীর আবহে অভিজ্ঞতা লিখলেন বৈশাখী

‘ভগবানে বিশ্বাস থাকলে নাকি ভূতেও বিশ্বাস করা যায়…’ ছোট থেকে এই কথাটা প্রায়ই শুনে এসেছি। তবে আমার ক্ষেত্রে এই ধারণাটা একটু ভিন্ন।

বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:৩১
সংগৃহীত চিত্র।

সংগৃহীত চিত্র।

‘ভগবানে বিশ্বাস থাকলে নাকি ভূতেও বিশ্বাস করা যায়…’ ছোট থেকে এই কথাটা প্রায়ই শুনে এসেছি। তবে আমার ক্ষেত্রে এই ধারণাটা একটু ভিন্ন। ঈশ্বরের উপরে অগাধ বিশ্বাস থাকলেও ভূতের অস্তিত্ব মানতে আমি খানিক নারাজই বটে। বরং ছোট থেকে এই সুনামটাও ছিল যে তিন বোনের মধ্যে আমিই নাকি সবচেয়ে সাহসী।

আমার এই ধারণা ভাঙে স্নাতকোত্তর নিয়ে পড়াশোনা করার সময়ে। তখন আলিপুরে মাস্টার্স করছি। সেই সময়ে এমন একটা ঘটনার সাক্ষী হই, যা সারা জীবন আমাকে নাড়া দিয়ে যায়। ঠিক কী ঘটেছিল, কেন ঘটেছিল- এর উত্তর আমি আজও পাইনি।

কৌতূহল জিইয়ে রেখেই ঘটনাটা খোলসা করে বলা যাক। আমার অভ্যাস ছিল প্রতি বার ক্লাস শেষের পরে ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে এক বার ঢুঁ দেওয়া। নিজের মতো পড়াশোনা করতাম। লাইব্রেরি বন্ধ হওয়ার শেষ ঘন্টাটা পড়লে বেরিয়ে আসতাম। ওখানকার মানুষজনও আমাকে বেশ স্নেহ করতেন। আমি যে জায়গায় বসে পড়তাম, সেটা খুবই নিরিবিলি ছিল। এক দিন এ রকমই অভ্যেসবশত বই পড়ছি। সন্ধে সাড়ে ছ’টার পরে যথারীতি ঘর খালি হতে শুরু করে। উপরন্তু সেই দিন এমনিই লাইব্রেরিটা একটু ফাঁকা ছিল।

সন্ধে ক’টা হবে, ঠিক খেয়াল নেই। ঘরে আমি ছাড়া আর এক জন ভদ্রলোক বসে রিডিং সেকশনে। এমন সময়ে হঠাৎ গ্রন্থাগারিক একটা কাজে বেরিয়ে গেলেন। আমাকে বলে গেলেন কোনও প্রয়োজন হলে সহকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে নিতে। আমি আবার মন দিলাম পড়ায়।

এখানে বলে রাখি, কোথাও গিয়ে শৌচাগার ব্যবহার না করাটা আমার বরাবরের অভ্যেস। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিরিখে আমি বড়ই পিটপিটে। কিন্তু সেই দিন ঘটল ব্যতিক্রম। শৌচাগারটা কোন দিকে, সেটা জানার জন্য লাইব্রেরির সেই সহকর্মীকে খুঁজতে গিয়ে দেখি তাঁরও কোনও পাত্তা নেই। অগত্যা বাধ্য হয়ে আমি ওই ভদ্রলোককেই জিজ্ঞেস করলাম, “এখানে মহিলাদের শৌচাগার কোথায় বলতে পারেন?” ও দিক থেকে কোনও উত্তর এল না। কেবল একটা আঙুলের ইশারায় দেখিয়ে দিলেন। বুঝতে না পেরে আমি বাধ্য হয়ে আবার বললাম, “আপনি একটু আমার সঙ্গে আসবেন? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।” এর পরে ওই ভদ্রলোকের দেখিয়ে দেওয়া সোজা রাস্তা ধরেই গেলাম শৌচাগারের সামনে।

ভিতরে ঢোকার পরেই দরজায় একের পর এক আঘাতের শব্দ। এক বার নয়, বারবার। শেষে বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে এসে দেখি ওই ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে রয়েছেন আমার সামনে। ঠোঁটের কোণে এক অদ্ভুত হাসি। খানিক রেগেই বললাম, “আপনার কাছ থেকে আমি সাহায্য চেয়েছিলাম। তাই বলে আপনি এই রকম করছেন!” অদ্ভুত ভাবে আমার তিরস্কারের পরেও ওই লোকটার মুখের ভঙ্গিমায় কোনও পরিবর্তন এল না। এক ভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে অন্ধকার সেই বারান্দায়। আমি একরাশ বিরক্তি প্রকাশ করে চলে এলাম সেখান থেকে। পড়া শেষ করে বেরিয়ে আসার সময়ে আমার অভিজ্ঞতা সবটাই জানালাম গ্রন্থাগারিককে। তিনি খানিক অবাক হয়ে এবং কিছুটা মজার ছলে আমাকে বললেন, “মাথাটা খারাপ হয়ে গিয়েছে নাকি? এই ফ্লোরে শৌচাগার কোথা থেকে পেলি?” এখানেই শেষ নয়, ওই ভদ্রলোকের কথাও মানতে গররাজি তিনি। আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন, শেষ ব্যক্তি বেরিয়ে গিয়েছেন সওয়া পাঁচটায়। তখনও আমার মাথায় ঘুরছে অন্য কথা। হয়তো লুকিয়েচুরিয়ে বাইরে থেকে কোনও লোক এসে বসেছিলেন। হুঁশ ফিরল এর পরের প্রমাণে। গ্রন্থাগারিকের সঙ্গে ওই আগের জায়গায় গিয়ে দেখলাম এ কী! এই জায়গা তো বহু বছর ধরে বন্ধ। জং এবং ধুলোয় ঢাকা লোহার শিকলগুলিই তার প্রমাণ। বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘নো এন্ট্রি’! বুঝতে পারলাম গা ভারী হয়ে আসছে ধীরে ধীরে। শরীরে জমছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। এও বুঝতে পারলাম, আমার বলা একটা কথাও এখন তিনি বিশ্বাস করবেন না। সেই রাতটা কাটল ওই ভাবনাতেই। পরের দিন সকালে ফের যখন গেলাম লাইব্রেরিতে, প্রথমেই সেই গ্রন্থাগারিক আমাকে ডেকে বললেন, “শোন, তুই কাল কোন দিকে গিয়েছিলি?” আমি ইশারা করতেই তিনি বলে উঠলেন, “কী আশ্চর্য! আমি পুরনো মানচিত্র ঘেঁটে জানতে পারলাম তোর দেখানো জায়গায় এক সময়ে সত্যিই শৌচাগার ছিল। যদিও বহু বছর ধরে তা বন্ধ…”

ওই ভদ্রলোক কে ছিলেন, কেন আমার চোখে ওই শৌচাগারটা পড়ল, এর উত্তর আজও অধরা। কেবল একটা জিনিস বুঝেছিলাম, কিছু কিছু ঘটনা অলৌকিক হয়। পরবর্তীতে এর প্রমাণ আরও প্রবল ভাবে পেয়েছিলাম আমার বাবা এবং মায়ের মৃত্যুকে ঘিরে।

আমার বাবা অকালে চলে গিয়েছিলেন। একটি দুর্ঘটনা থেকে কোমা, আর তার পরে সম্পূর্ণ ভাবে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ। বাবা তখন হাসপাতালে ভর্তি। বাড়িতে আমি, মা আর সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে প্রার্থনা করছি ঠাকুরের কাছে। আমার বাপের বাড়িতে ঢুকতেই সামনে বাবা ও মায়ের একটি সমাবর্তন অনুষ্ঠানের ছবি ছিল। সে দিন অদ্ভুত ভাবে মায়ের ছবি তো দেখতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু বাবা কোথায়? যেন কালো আস্তরণ ঢেকে দিয়েছে জলজ্যান্ত একটা মানুষকে। আর এটা কেবল আমিই দেখতে পাচ্ছিলাম। মায়ের কাছে কিন্তু সবটাই পরিষ্কার। আমি প্রশ্ন করলাম, “বাবার ছবিটা দেখা যাচ্ছে না কেন? কেউ কি নষ্ট করে দিল?” এক দিকে বাবা হাসপাতালে জীবনের সঙ্গে লড়ছেন, অন্য দিকে হঠাৎ তাঁর ছবি এমন কালো হয়ে আসা- সবটা মিলিয়েই মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম, বাবা হয়তো আর বাড়ি ফিরবেন না। অদ্ভুত ভাবে এই ঘটনার ১১ দিনের মাথায় বাবা সত্যিই চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে।

এ বছর আরও একটা ঘটনার সাক্ষী থেকেছি আমি আর শোভন (চট্টোপাধ্যায়) দু’জনেই। মায়ের বাৎসরিকের দিন হঠাৎ সজোরে বাজ পড়ার শব্দ। সে কী কানফাটানো আওয়াজ! সত্যিই সে দিন বৃষ্টি পড়ছিল। কিন্তু শব্দের এই উৎসকে বাজ ভেবে বসার পরেই ভুলটা ভাঙল। আমাদের বাড়িতে একটা বিরাট আকারের সিঙ্ক রয়েছে। সেখানে আমার আর শোভনের স্নানের নিত্যদিনের সামগ্রী আলাদা আলাদা করে গোছানো থাকে। ঘরে ঢুকে দেখি সমস্ত জিনিস লণ্ডভণ্ড! এ দিক সে দিক উড়ছে সব কিছু। বেসিনটা পুরো ভেঙে গুঁড়ো হয়ে গিয়েছে। অন্দরসজ্জার শিল্পীদের কাছেও এই ঘটনা অবিশ্বাস্য...অপ্রত্যাশিত। পরে শোভন আমাকে বলেছিল, আমার মা এক বছর পরে অমৃতলোকে যাত্রা করছেন। এটা হয়তো এই ভাবেই মা জানান দিয়ে গেলেন...

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy