পুজোর আগে ধারাবাহিকের ব্যস্ততা তুঙ্গে। আগে ভাগে যতটা কাজ গুছিয়ে নেওয়া যায় আর কী। যদিও উৎসবের মরসুমে এই ‘ব্যস্ততা’কে বেশ উপভোগ করছেন রাজনন্দিনী পাল। এই মুহুর্তে দর্শকদের চোখে তিনি ‘রাজরাজেশ্বরী রাণী ভবানী’। এ দিনও সেই ধারাবাহকেরই চলছিল শ্যুটিং। তার ফাঁকেই আনন্দবাজার ডট কমের কাছে ধরা দিলেন অভিনেত্রী।
রাজনন্দিনী বলেন, “ব্যস্ততা জেনেই সবাই ধারাবাহিকে কাজ করতে আসে। শ্যুটিং মানেই পরিশ্রম। দেখে যতটা সহজ মনে হয়, ততটা নয়। প্রতিটা মিনিট সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আর এটাই আমার কাছে নতুন অভিজ্ঞতা। প্রতি দিনই আমাদের মাথায় চিন্তা থাকে যেন অনেকটা দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে পারি। সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ় করার সময়ে এত কিছু বুঝিনি। ধারাবাহিকে মানসিক চাপটা তুলনায় বেশি। আর সেটা জেনেই আমি এখানে এসেছি। তবে আমার কিন্তু বেশ লাগছে!”
পুজোর ক’দিন-ও কি এই একই নিয়মে বাঁধা? নায়িকা বলেন, “না, পুজোর সময়ে আমাদের কাজ থাকবে না। অবশ্যই কিছু দিন ছুটি পাব। দশমীর এক বা দু’দিন পর থেকেই আবার কাজ শুরু।”
দর্শকমহল থেকে এত ভালবাসা কুড়োচ্ছেন ‘রাণী’-মা। টিআরপি তালিকাতেও প্রথম পাঁচে জায়গা ধরে রেখেছে এই ধারাবাহিক। কেমন অনুভূতি নায়িকার? তিনি বলেন, “আমি সত্যিই আপ্লুত। আমাদের ধারাবাহিক নিয়ে খুব চর্চা হচ্ছে সর্বত্র। সকলে যে ভাবে আমাকে গ্রহণ করেছেন, তার জন্য বার বার ধন্যবাদ চাইছি। আশা করি এই ভাবেই আরও এগিয়ে যাব আমরা।” এমনকি, অভিনেত্রী জানান, কেবল প্রশংসা নয়, দর্শকদের অভিযোগও মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত তিনি।
তবে পুজোর ক’টা দিন এই চরিত্র থেকে ছুটি পেলেও ব্যস্ততা থেকে রেহাই নেই রাজনন্দিনীর। তিনি বলেন, “আগে আমাদের বাড়িতে যখন দুর্গাপুজো হতো, তখন অনেক পরিকল্পনা থাকত। এখন আর সেই অর্থে কিছু ভাবি না। গোটা পুজো আমার পরিক্রমা থাকবে, উদ্বোধনীর অনুষ্ঠান থাকবে। সেই সব নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। এ ক্ষেত্রে আমার মা এবং আমাকে যাঁরা 'ম্যানেজ' করেন, তাঁদের কাছ থেকেও অনেকটা সাহায্য পাই।”
পুজোর সাজসজ্জা ও কেনাকাটির কথা কিছু ভেবেছেন? রাজনন্দিনীর মতে, “সাজগোজ তো করতেই হয় কাজের সূত্রে। তবে পরিবারের সকলের জন্য কেনাকাটা কিছুটা শুরু করেছি।” অভিনেত্রী জানান, তাঁর কাছে ব্যস্ততা সামলে ‘অনলাইন কেনাকাটা’ই ভরসা।
পুজোর সময়ে ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে? কখনও কি রাজনন্দিনীর মনের দরজায় কড়া নেড়েছিল ‘পুজো-প্রেম’? যদিও এ ক্ষেত্রে নায়িকা বেশ উদাসীন। তাঁর কথায়, “প্রেম নিয়ে কোনও দিনই বিশেষ মাথা ঘামাইনি। বন্ধুদের সঙ্গে গল্প-আড্ডা করতে গিয়ে কোনও ছেলের দিকে তাকানো আর হয়ে ওঠেনি। আশেপাশে পরিবার, বন্ধুবান্ধব থাকলে বাকি মানুষগুলির অস্তিত্ব আমার কাছে ফিকে হয়ে যায়। ফলে পুজোর প্রেমটা ছোটবেলাতেও হয়নি, এমনকী এখনও নয়। যে দিন থেকে শাড়ি পরতে শুরু করলাম, সে দিন থেকে শাড়ি সামলাতেই ব্যস্ত। আর তা ছাড়া পুজো পরিক্রমার ব্যস্ততা তো রয়েছেই। কাজে বেরিয়ে কারও সঙ্গে চোখে চোখে কথা বললে, সেটা কি ভাল দেখাবে?”
প্রেমের কথা না হয় পাশেই সরানো থাকল। দেবীর কাছ থেকে এ বার কী চাইবেন অভিনেত্রী? তাঁর সহজ জবাব, “কোভিডের সময়ে মা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ওই কষ্টটা সহ্য করতে পারছিলাম না। সেই সময়ই দেবীর কাছে মায়ের সুস্থতা কামনা করেছিলাম। এ ছাড়া কোনও বছরই কিছু চাই না। আমার কাছে আসলে চাওয়ারই কিছু নেই। আমি খুবই ভাগ্যবতী যে আমি যে কাজটা ভালবাসি, সেটাই করে খেতে পারছি। এত ভাল ভাল কাজের প্রস্তাব আগেও এসেছে, এখনও আসছে। স্বাধীন ভাবে কাজ নির্বাচন করার অধিকার আছে। সুস্থ আছি, সফল আছি। যদি কিছু চাওয়ার থাকে তা হল মনের জোর। সেই জোর দিয়েই যেন নিজের এবং অন্যের জন্য ভাল করতে পারি। এটাই আমার জীবনের মূলমন্ত্র।”
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।