দুর্গাপুজো দরজায় কড়া নাড়ছে। চারিদিকে এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। আর তারই ফাঁকে রুক্মিণী মৈত্রর সঙ্গে আড্ডা জমেছিল আনন্দবাজার ডট কমের। পুজোর প্ল্যান থেকে প্রেম, বাদ গেল না কিছুই।
গত বছর পুজোয় ছবি মুক্তি পেলেও, এ বার তেমন কিছু নেই। তা হলে পুজো কী ভাবে কাটাচ্ছেন রুক্মিণী, কী পরিকল্পনা রয়েছে জানতে চাইলে অভিনেত্রী বলেন, “পুজো মানেই আড্ডা, পুজো মানেই কাছের মানুষকে আরও কাছে করে পাওয়া। স্কুলে পড়তাম যখন, তখন আমার বন্ধুরা প্রায় সারা বছর আমার বাড়িতেই থাকত। ওরা আমার বাড়িতেই বড় হয়েছে, যতটা না নিজের বাড়িতে। আমার মা ওদের মা বেশি, আমার মা কম। তাই পুজোর এই কটা দিন খুব চেষ্টা করি যাতে ওদের দিতে পারি। আমি খুব বেশি কাজ করি না। পুজো পরিক্রমায় যাই, এখন একটু আগে থেকে প্যান্ডেল দেখে নিতে পারি। কিন্তু পুজোর এই পাঁচটা দিন আমি আমার বন্ধুদেরকে আগলে রাখি। আমার বাড়িতে আড্ডা বসবেই। তখন কিন্তু আমাদের একদমই এ রকম দেখতে লাগে না। মায়ের পুরনো জামা পরে, ভোর তিনটে-চারটে অবধি প্রচুর আড্ডা, মশকরা চলে। আমাদের বন্ধুদের একটাই নিয়ম, আমরা যদি একে অন্যের ‘লেগপুল’ আর অপমান না করতে পারি, তাহলে কিন্তু আমরা বন্ধু নই।’’
কেবল বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা নয়, রুক্মিণী জানান তাঁর কাছে পুজো উৎসবের থেকে অনেক বেশি উদ্যাপন। অভিনেত্রীর কথায়, “পুজোয় আমরা মায়ের পুজো তো করি, কিন্তু আমার মনে হয় এই সময়টা আমাদের বাঙালিদের এক ছাতার তলায় এনে দেয়। সিনেমা হলে ঢুকলে দেখবেন আমরা একই সঙ্গে হাসি, একই সঙ্গে কাঁদি, একই সঙ্গে হাততালি দিই। যেন ওই ২০০-৩০০ জনকে এক করে দেয় সিনেমা হল। আর দুর্গাপুজো তেমনই একটা বড় সিনেমা যেটা পাঁচ দিন ধরে চলে, সবাই একই তালে তাল মেলাই। হাসি, উদ্যাপন করি, খুশি হই, ছবি তুলি। আমার কাছে দুর্গাপুজো অবশ্যই একটা উৎসব, কিন্তু তার থেকেও বড় উদ্যাপন।”
তবে গোটা পুজোয় রুক্মিণী কলকাতায় থাকবেন কি না সেটা নির্ভর করে তাঁর দাদার উপর। অভিনেত্রী বলেন, “পুজোর সময় আমি মূলত কলকাতায় থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু যেহেতু আমার পরিবারের অনেকেই দিল্লিতে থাকেন, তাই দাদা, বৌদি, ভাইঝি এখানে এলে, এখানেই পুরোটা থাকি। নইলে এখানে অর্ধেক পুজো কাটাই, ওখানে অর্ধেক। দুটো মিলিয়েই আমার পুজো চলে। দিল্লিতেও খুব সুন্দর পুজো হয়।’’
পুজো মানেই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে হালকা চোখাচুখি, কিংবা, অঞ্জলির সময় পাশে দাঁড়িয়ে দেবীকে মনের কথা জানানো। নায়িকার জীবনেও কি এমন পুজোর প্রেমের ছোঁয়া লেগেছিল কখনও? রুক্মিণী জানান, “পুজো মানেই প্রচুর প্রেম’’। তারপর মুচকি হেসে বলেন, “ছোটবেলায় পুজো মানে প্রেম প্রেম একটা ব্যাপার থাকত আমাদের। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমার দাদা খুবই পসেসিভ ছিল। পুজোর সময় দাদা আর ওর ৭-৮ জন বন্ধু মিলে আমার পুরো সিকিউরিটি গার্ড হয়ে যেত। এমন না যে আমায় ১০০ জন প্রেম প্রস্তাব দিত। কিন্তু তাও...। আমার কোনও দিন পুজোতে প্রেম হয়নি।’’ বলতে গিয়েই হঠাৎ অন্য কথা মনে পড়ায় তিনি বলেন, “না, না এক বার হয়েছিল। ক্লাস সিক্সে, পুজোয় একটা এক বারই প্রেম হয়েছিল। আমার দিদার বাড়িতে আমার এক ছোটবেলার বন্ধু ষষ্ঠীর দিন আমার দিকে তাকিয়ে ‘হাই’ বলেছিল। এরপর সপ্তমীতে বলেছিল, ‘ওমা! তোকে খুব সুন্দর লাগছে।’ অষ্টমীতে অঞ্জলির পর জানায় ওর নাকি আমায় ভাল লাগে। আর নবমীতে ‘আই লাভ ইউ’ বলেছিল। দশমীর দিন যেই বলেছে ‘আমায় বিয়ে করবি’, অমনি ‘এক থাপ্পড় মারব’ বলায় পালিয়ে গিয়েছিল। সেটাই ছিল আমার পুজোর প্রথম প্রেম।’’ বলেই হাসতে থাকেন অভিনেত্রী।
আরও পড়ুন:
পুজো মানে তো কেবল প্যান্ডেল হপিং বা প্রেম নয়। পুজো মানে কবজি ডুবিয়ে খাওয়া-দাওয়াও। কিন্তু অভিনেতা, অভিনেত্রীরা তো কড়া ডায়েটের মধ্যে থাকেন। পুজোতেও কি সে সব মানবেন? রুক্মিণী সাফ জানান, “পুজো মানে নো ডায়েট। মায়ের নাম নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করলে কোনও অসুবিধা হয় না। আমি গ্যারেন্টি দিচ্ছি।” শুধু তাই নয়, তিনি জানান তাঁর পছন্দের খাবার বাসন্তী পোলাও, মাটন। লুচি, পায়েসও রয়েছে সেই তালিকায়। তবে, তাঁর ‘ঠাম্মার হাতের পায়েস’ সেরা বলেই জানান অভিনেত্রী।
দেবী দুর্গার আগমনে এখনও কিছুটা সময় বাকি। তবুও তিনি এ বার দেবীর থেকে একটাই জিনিস চাইবেন যাতে, “সবাই খুব সুখে, শান্তিতে থাকে।”
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।