অনির্বাণ চক্রবর্তী এবং ‘একেন বাবু’ বর্তমানে সিনেমাপ্রেমী বাঙালিদের কাছে সমার্থক। তবে এ বার পুজোয় কোনও রহস্যের সন্ধানে তিনি শহর ছাড়ছেন না। বিগত কয়েক বছরের ‘রীতি’ ভেঙে এ বার তিনি কলকাতাতেই পুজো কাটাবেন।
বহু বছর পর ফের প্রাণের শহরেই উৎসবমুখর দিন কাটাবেন অনির্বাণ। কিন্তু কেন এই বছর পুজোয় বেড়াতে যাওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে অভিনেতা আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, “অনেক বছর বাদে এ বার পুজোতে কলকাতাতে থাকব। আমি এ বার পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে উঠতে পারিনি, দেরি হয়ে গিয়েছে। এই সময়টা আমি যে কলকাতা ছেড়ে চলে যেতে চাই, সেটা নয়। কিন্তু এই সময় শ্যুটিং বন্ধ থাকে, লম্বা একটা ছুটি পাওয়া যায়, মোটামুটি সপ্তমী থেকে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত। আগে থেকে তাই পরিকল্পনা করে নেওয়া যায় যে এই সময়ে আমি ছুটি পাবই। সেই জন্যই প্রতি বছরই পুজোয় বেড়াতে যাই। কিন্তু এ বার দেরি হয়ে গিয়েছে।”
তা হলে শহরে বসে পুজো কাটানোর জন্য কী কী পরিকল্পনা করেছেন? পর্দার ‘একেন বাবু’ বলেন, “এই উৎসবের সময় সবাই খুশিতে, আনন্দে থাকে যে সেটা আমার দেখতে ভাল লাগে। কিন্তু একই সঙ্গে পুজোর সময় যে প্রচণ্ড ভিড় হয়, আওয়াজ হয় সেটা পছন্দ করি না। আমি নিরিবিলিতে থাকতেই ভালবাসি। তাও এখন তো অনেক নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে, যে নির্দিষ্ট সময়ের পর মাইক বাজবে না, বা কিছু। মোটামুটি সেটা মানা হয়, নিয়মের খুব একটা অন্যথা হতে দেখা যায় না। যদিও শেষ কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা নেই আমার, যেহেতু থাকি না। কিন্তু এই সময় যে সারা ক্ষণ গান বাজে, ভিড় হয়, ওটা আমার ঠিক... একটু সমস্যা হয়। কিন্তু ছোটরা যে এই সময় খুব আনন্দে থাকে সেটা অবশ্য ভাল লাগে।”
ভিড় পছন্দ করেন না যখন তবে কি এ বার কলকাতাতে থেকেও ‘প্যান্ডেল হপিং’ মিস করবেন? অভিনেতা বলেন, “আমি ছোট থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঠাকুর দেখি না। ছোটবেলা কেটেছে বজবজে। ওই সময়ের পুজোর স্মৃতি বলতে যেটা সব থেকে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে, সেটা হল পাড়ার কাছে যে পুজো হতো সেই মণ্ডপে বসে থাকতাম। ওখানেই কাটত দিন। অনেক ঠাকুর দেখতে যাব সেটা কোনও দিনই করতাম না। গোটা পুজোয় এক দিন আমরা সবাই মিলে কলকাতার ঠাকুর দেখতে যেতাম। সে দিন বাইরে খেতাম। আবার সন্ধ্যার আগে বাড়ি চলে যেতাম। সন্ধ্যার ওই ভিড় এড়িয়ে যেতাম। ফলে আমি প্যান্ডেল হপিং খুব একটা উপভোগ করি না। তবে দু’টো আয়োজনের সঙ্গে এ বার যুক্ত হয়েছি। তাই আশা করা যায় সেই সূত্রে ক’টা ঠাকুর দেখা হবে। এ ক্ষেত্রে সুবিধা হল যে অনেক রকম তো ব্যবস্থা করা থাকে, তাই লাইন দিয়ে, ভিড় কাটিয়ে ঠাকুর দেখতে হয় না। এক এক বার যা দেখেছি, ভিড় আর লাইন... সেটা আমার পক্ষে কোনও ভাবেই সম্ভব হবে না।''
তবে, অনির্বাণ জানান, তাঁর এ বার পুজো পরিক্রমার পরিকল্পনা থাকলেও পুজোর কেনাকাটা তিনি করেন না। কিন্তু কেন? এই বিষয়ে তাঁর মত, “আগে হতো, এখন আর হয় না। এখন আমি আমার খুব প্রিয় কয়েকজনের জন্য হয়তো পুজোর উপহার হিসেবে কিনি। আমার পরিচিত মহলের যে বাচ্চারা রয়েছে তাঁদের জন্য কিনি, কারণ ওদের দেখলে আমার নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। আর আমার নিজের কথা বলতে গেলে, পেশার জন্য সারা বছর ধরে এত কেনাকাটা হয় যে পুজোর চার দিনের জন্য চারটি জামা, এই গুরুত্ব আর নেই। সেটা বয়স বলুন বা পেশা, সেটার আর আগ্রহ পাই না।”
আর পুজোর প্রেম? সেটা নিশ্চয় কখনও না কখনও হয়েছে? অনির্বাণ জানান পুজোর ‘ভাল লাগা’ হলেও, প্রেমটা ঠিক হয়নি কখনও। তাঁর কথায়, “পুজোর সময় প্রেম সে রকম হয়নি। ছোটবেলায় তো প্রচুর এক তরফা প্রেম থাকে যে একে ভাল লাগে, ওকে ভাল লাগে, সেগুলি য়ে খুব দীর্ঘস্থায়ী হতো সেটা নয়। মানে এই বছর পুজোয় এ হলে, পরের বার আরেকজন।” বলেই হাসতে থাকেন অভিনেতা। তার পরে জানান, “কাউকে দেখে হয়তো ভাল লেগেছিল, কিন্তু কখনও উঠে পড়ে তাকে খুঁজে বের করতেই হবে, সে কোন পাড়ায় থাকে, নাম কী জানার জন্য যে এনার্জি দরকার সেটা আমার কোনও কালেই ছিল না। সুতরাং দেখে ভাল লাগলেও, ওটাকে প্রেম বলা যায় না। তবে এই অভিজ্ঞতা হয়েছে যে পুজোর সময় যাকে দেখে ভাল লেগেছে পুজোর পর দেখে আর ভাল লাগেনি।”
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।