পুজোর ঠিক মুখেই ভারতে লঞ্চ করে গেল আইফোন ১৭ সিরিজ। আর মুম্বইয়ের অ্যাপ্ল স্টোরের সেই ইভেন্টে বাংলা থেকে উপস্থিত ছিলেন মাত্র একজন, প্রেরণা দাস। সেই অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা থেকে পুজোর পরিকল্পনা, প্রেম সবটা নিয়েই আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে আড্ডা জমালেন এই জনপ্রিয় নেটপ্রভাবী।
আড্ডার প্রথমেই উঠে আসে আইফোন ১৭ সিরিজের লঞ্চ প্রসঙ্গ। সেখানেই কথায় কথায় প্রেরণা জানালেন পুজোর আগে এবং জন্মদিনের ঠিক পরেই একটা ফাটাফাটি উপহার পেয়েছেন এই ইভেন্টে গিয়ে। আন্দাজ করতে পারছেন কী সেটা? আইফোন ১৭ প্রো! সেই গল্প শুনিয়ে বলেন, “খুবই ভাল অভিজ্ঞতা হল। এখান থেকে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে একটি প্রিমিয়াম হোটেল রুমে থাকা, অনুষ্ঠানটি, সবটা সামনে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা ভীষণই ভাল। সে দিন থেকেই প্রচণ্ড ভিড় হয়েছিল আইফোন কেনার। আমাদেরও আইফোন ১৭ প্রো দেওয়া হয়েছে উপহার হিসেবে।” বলেই হেসে ফেলেন তিনি। হাসির বিরতি নিয়ে ফের বলেন, “গোটা বিষয়টাই খুব এক্সাইটিং ছিল। আর বাংলা থেকে যেহেতু আমি একাই গিয়েছিলাম তাই একটু বিশেষ অনুভূতি হচ্ছিল। খুবই ভাল অভিজ্ঞতা সবটা মিলিয়ে।”
পুজোর আগে এমন ফাটাফাটি উপহার প্রসঙ্গে প্রেরণার মত, “এটা আমার জন্য জন্মদিন এবং পুজো মিলিয়েই একটা উপহার বলা যায়। জন্মদিনের দিনই আমায় কলকাতা থেকে মুম্বই উড়ে যেতে হয়েছিল। আমি বরাবরই আমার জন্মদিন নিয়ে খুবই উত্তেজিত থাকি, প্রায় মাসখানেক আগে থেকে সবাইকে বলতে থাকি ‘আমার জন্মদিন আসছে, আমার জন্মদিন আসছে’, সেখানে জন্মদিনে হয়তো লোকজনের সঙ্গে কাটাতে পারিনি বা বিশাল কিছু পরিকল্পনা করতে পারিনি, কারণ কাজ সবার আগে। আর এত ভাল একটা কাজ এসেছে যখন কেন করব না? তাই জন্মদিনের রাতেই আমায় শহর ছাড়তে হয়েছিল, কিন্তু সেখানে গিয়ে জন্মদিনের একটা সুন্দর উপহার পেলাম।”
অনুষ্ঠান শেষে শহরে ফিরেছেন তিনি। মহালয়ার ভোরের হাত ধরে পুজোর আবহ যেন আরও একটু জাঁকিয়ে বসল। সপ্তাহখানেকও বাকি নেই পুজোর। পরিকল্পনা কি কিছু হল? “যত বয়স বাড়ে সবাই পুজোর পরিকল্পনা করা ছেড়ে দেয় বলে আমার মনে হয়। পুজোর ওই রেশটাও পুজোর ওই আলো, মণ্ডপ দেখেই মনে পড়ে। এই সময় দাঁড়িয়ে আমি হয়তো বলতে পারব না যে পুজোর সঠিক দিনক্ষণ কী, কিন্তু আমি বরাবরই পুজো ভীষণ ভালবাসি। পুজোর সময় যাঁরা কলকাতা ছেড়ে বেরিয়ে যান তাঁদের একদম সহ্য করতে পারি না। পুজো নিয়ে মেতে থাকতে ভালবাসি। কিন্তু এখন এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গিয়েছি যেখানে কাজ আর কর্তব্য সবার আগে, তাই পুজো নিয়ে অনেক আগে থেকে আর লাফালাফি করা হয় না। এখনও আমার জামাকাপড় কেনা হয়নি। হয়তো শেষ মুহূর্তে গিয়ে যেটা পাব সেটা তুলে নেব, কিন্তু পুজো নিয়ে লাফালাফি করতে ভালবাসি। কিন্তু কোনও পরিকল্পনা নেই”, জানালেন প্রেরণা।
কিন্তু তাও, যাঁদের সঙ্গে হামেশাই তাঁকে দেখা যায় অর্থাৎ এই কন্টেন্টের দুনিয়ার বাকি চেনা মুখ, ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার পরিকল্পনা নেই কোনও? বা ঠাকুর দেখার? প্রশ্ন শুনেই প্রেরণার সহজ জবাব, “পুজোর সময়টা আসলে আমাদের সবারই খুব কাজের ব্যস্ততা থাকে। বন্ধুরা যেহেতু একই ইন্ডাস্ট্রির, কাজটাও তাই একই সঙ্গে থাকে অনেক সময়। ফলে সে ভাবেই মজা করা হয়। এরম হয় যে শ্যুট রাত ১১-১১.৩০ টায় শেষ হল, তার পর আমরা সবাই বেরিয়ে গেলাম ঠাকুর দেখতে। সবটাই হঠাৎ হঠাৎ করে ঠিক হয়, সে আড্ডা হোক বা ঠাকুর দেখা।”
আরও পড়ুন:
কেনাকাটা এখনও হয়নি যে সেটা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু পুজোর কেনাকাটা করতে গেলে দোকানের কোন দিকে পা বাড়ান? সাবেকি পোশাক নাকি ওয়েস্টার্ন? “সারা বছর এত ওয়েস্টার্ন পরি, কেনাকাটা করি, কাজের জন্য কেনাকাটা করতেই হয়, তবে আমি ‘বোল্ড’, সুন্দর, ‘সেক্সি’ অনুভব করি শাড়িতেই। পুজোর সময়টা সাবেকি সাজে সাজতেই পছন্দ করি। মা-বাবাকে বলেছি তাই যা উপহার দেবে সেগুলি যেন সাবেকি পোশাক হয়, নিজেও কিনেছি তাই। প্রেমিককেও বলেছি ‘যে উপহার দিবি সেটা যেন শাড়ি বা চুড়িদার হয়’। পুজোর ক’টা দিন আমি খাঁটি বাঙালি সেজে ঘুরতে চাই”, জবাব এই নেটপ্রভাবীর।
কাজের ব্যস্ততার সঙ্গে বেড়েছে জনপ্রিয়তাও। বাঙালির ঘরে ঘরে এখন দারুণ চেনা মুখ তিনি। কিন্তু তাও এই সময় দাঁড়িয়ে পিছু ফিরে তাকালে বা ছোটবেলার প্রসঙ্গ উঠলেই কোন স্মৃতি মনে পড়ে যায় জানতে চাওয়ায় প্রেরণা জানালেন, “আমার গোটা পরিবারের কেউ ঠাকুর দেখতে পছন্দ করে না। ছোটবেলায় আমার বাবা আমায় নিয়ে গিয়ে তার বন্ধুবান্ধবদের ক্লাবে বসিয়ে দিত। সেখানে বাকিদের বাচ্চা-কাচ্চারাও থাকত। আড্ডা দিতাম, গল্প করতাম। মা-বাবা কেউই খুব একটা ভিড় পছন্দ করে না, তাই আমাদেরও ঠাকুর দেখায়নি খুব একটা। আমি তো বিগত কয়েক বছরে কলকাতায় থাকার সময় নিজে নিজে ঠাকুর দেখা শুরু করেছি। নইলে ছোটবেলায় ওই ক্লাবেই সবাই মিলে ক্যাপ-বন্দুক ফাটাতাম, খেলতাম, আড্ডা দিতাম, রাতে খাবার খাইয়ে, আইসক্রিম খাইয়ে বাড়ি নিয়ে যেত। এখন আমি ঘোরাঘুরি করি একটু। পুজোয় মাঝরাতে, বা গোটা রাত ধরে ঠাকুর দেখতে ভাল লাগে।”
আর পুজোর প্রেম? অষ্টমীর অঞ্জলির ফাঁকে আড়চোখে পছন্দের মানুষকে দেখা, হয়েছে নাকি? প্রশ্ন শুনেই হেসে ফেলেন তিনি। তার পর জবাব আসে, “হ্যাঁ, এ সব তো প্রচুর করেছি। ছোটবেলা থেকেই তো পাকা তো, বাড়ির লোকজনও জানে, পাড়ার লোকেরাও বলতো খুব পাকা একটা মেয়ে।” ফের হাসতে থাকেন। বলেন, “ছোটোবেলায় তাই মণ্ডপে চলে যেতাম, জানতাম এই মণ্ডপে আসবে, খুঁজেছি যে অঞ্জলি দিচ্ছে কিনা, সেই সময়ই অঞ্জলি দিয়েছি। এই সমস্ত করেছি সত্যি বলতে। সিঙ্গল থাকলে আমি ছেলেপুলে একটু বেশি দেখি। আমার মনে হয় এটা সবার দেখা উচিত। আমি আমার প্রেমিককেও বলি, ‘আমি একমাত্র সুন্দর মেয়ে নই পৃথিবীতে, তুমিও মেয়ে দেখো, আমিও ছেলে দেখি। দেখার জন্য দেখব শুধু। তুমিও জানো আমি তোমার প্রতি লয়াল, আমিও জানি তুমি আমার প্রতি লয়াল।” প্রেরণার মতে, পুজোতে সুন্দর ছেলেমেয়ে সবার দেখা উচিত। নইলে সাজার অর্থ কী থাকল? যদিও তিনি জানালেন যে তিনি সাজেন যাতে তাঁকে আরও বেশি সুন্দর লাগে। এই নেটপ্রভাবী বলেন, “আমার মনে হয় সাজলে একটা আলাদা আত্মবিশ্বাস পাওয়া যায়। তবে পুজোয় সুন্দর সেজে বেরোনো উচিত, খাওয়া দাওয়া করা উচিত, ছেলে-মেয়ে দেখা উচিত আর অবশ্যই অনেক ঘুরে বেড়ানো উচিত কারণ পুজোটা বছরে এক বার আসে।”
সাজগোজের কথা উঠলই যখন তখন কি আর নেটপ্রভাবীর থেকে টিপ্স না নিয়ে থাকা যায়? এই প্যাচপ্যাচে গরম, কখনও রোদ কখন বৃষ্টিতে মেকআপ ঠিকঠাক রাখার জন্য টিপ্স দিয়ে প্রেরণা বলেন, “যাঁদের খুব তেলতেলে ত্বক, বা খুব ঘামো আমার মতো, মানে আমি এত ঘামি যেন মনে হয় স্নান করেছি তাই আমার মনে হয় ‘প্রাইমার’ আর ‘ফিক্সার’ এই দুটো ভাল করে, ভাল ব্র্যান্ডের ব্যবহার করা উচিত। আমি যতই ঘামি এটার কারণেই কিন্তু আমার মেকআপ একদম ঠিক থাকে। ‘ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার’ বা কম্প্যাক্ট পাউডারও ভাল কোনও ব্র্যান্ডের ব্যবহার করা উচিত। এই ৩টি জিনিস ঠিক থাকলে বাকি সব ঠিকই থাকে।”
আড্ডার শেষে দেবীর কাছে কী প্রার্থনা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি কখনই ‘আমার এটা চাই, ওটা চাই’ বলে ঈশ্বরের কাছে চাইতে পারি না। সব সময় চাই ঈশ্বর সবাইকে ভাল রাখুক, দেখে রাখুক। আমি বিশ্বাস করি তিনি আমার সঙ্গে সব সময় আছেন।”
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।