আমার ছোটবেলার পুজো মানে ভিলাইয়ের পুজো। আমরা তো প্রবাসী। তাই শৈশব কলকাতায় কাটেনি। বাইরেই বড় হয়েছি।আর ভিলাইয়ের পুজো মানে গ্রাম-বাংলার পুজো। খুব বড় করে পাড়ার পুজো হতো। অামি অ্যাকটিভ থাকতাম। আমার মনে আছে ক্লাস এইট-নাইনে যখন ছিলাম ৮- ৯ কুইন্টাল চালের ভোগ রান্না হত। বেশ মজা হত। আমার কাজ ছিল ভোগে ফোড়ন দেওয়া। তাই চোখ বুজলে ছোটবেলার পুজো মানে ভিলাইয়ের পুজো মাথায় আসে। বেশ মিষ্টি একটা স্মৃতি।
এই যে আমি ঢাক বাজাতে পারি, ভোগ রান্না করতে পারি, সে সব ভিলাইয়ের পুজো থেকে শেখা। কলকাতার পুজোর সঙ্গে এ সব কানেক্ট করতে পারি না।
আমার কলকাতার পুজো অত ভাল লাগে না। যেখানে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সেটাই পুজো। যেমন এখন মুম্বইয়ের পুজো ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না। কলকাতার পুজোয় ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখা, খাওয়া ছাড়া আর কিছু নেই। এই নিয়ে বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন যাঁরা কলকাতায় থাকেন তাঁদের সঙ্গে তর্ক হয়। এমনও সময় গিয়েছে ষষ্ঠী-সপ্তমী কলকাতায় কাটিয়ে মুম্বই পালিয়ে আসতাম, তারপর অষ্টমী, নবমী, দশমী এখানে কাটাতাম।
আরও পড়ুন, ছোটবেলায় পুজোর প্রেম প্রচুর হয়েছে, নায়িকা হওয়ার পর…
সবাই বলত কলকাতার পুজো ছেড়ে কেউ ভিলাই যায়? কিন্তু ভিলাইয়ের পুজো ছাড়া অন্য পুজো ভাল লাগত না। তাই কলকাতার পুজোর আমার কোনও স্মৃতি নেই। ছোটবেলায় বাড়ির একটা পুজো হতো, সেটা অনেকদিন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে ভিলাইয়ের পুজোয় পাঁচদিন ঘুমোতাম না। ক্লাস নাইনের পর থেকে প্রত্যেক পুজোয় পাঁচদিনের আলাদা-আলাদা প্রেম হয়েছে। ষষ্ঠীর দিন অঞ্জলি দিয়ে ফিক্সড করে নিতাম বস্ এটা হয়েছে টার্গেট। সে কারণে হয়তো আরও বেশি করে ভিলাই পালিয়ে আসতাম।
এই ব্যাপারটা আবার মুম্বই বুঝতে পারে না। পুজোয় কেন ছুটি নেবে? এ ব্যাপারটা এখানে বোঝানো যায় না। তবে এখানে কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকি। তাই ছুটি ব্যাপারটা নেই। ফলে এখানে এসে আর প্রেম-টেম হয়নি। তবে এখানে আসার পর দু’বছর কলেজে পড়েছি। তারপর ঢুকে গেছি ফিল্ম লাইনে। তবে সেই সময় আমরা নবমীতে নাটক করতাম। নাটকের মাঝে যখন আধ-ঘণ্টার ব্রেক থাকতো তখন রানি মুখোপাধ্যায় নাচতে আসত।
আরও পড়ুন, ‘রানি রাসমণি’ সেজে পুজোয় শো করব, নতুন জামা কখন পরব বলুন?
তখন রানি, আজকের রানি হয়নি। ও আমাকে তখন থেকে পিঙ্কু বলে ডাকে। অনুরাগ বলে ডাকে না। আমি ওখানে ওদের পুজোর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম বহু বছর। এখন অবশ্য বয়সের সঙ্গে পুজো পুজো উত্তেজনাটা কমে গেছে। তাই সে ভাবে জামাকাপড় কেনা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বয়সের সঙ্গে মনে হয় একটা পাড়ায় একটা পুজো হোক, ভাল করে হোক।
এখন বেশি পুজো মানে টাকার অপচয়। কলকাতায় যেমন দশ মিটার অন্তর অন্তর একটা করে পুজো। লোকে খেই হারিয়ে ফেলে কোনটায় লাইন দেবেন। যেটা অপ্রয়োজনীয়। সেই ব্যাপারটা এখন মুম্বইতেও হচ্ছে। একটা পুজো ভেঙে আর একটা পুজো। সব পুজো কিছু সংখ্যক মানুষের রোজগারের পথ খুলে দিচ্ছে বটে, তবে কিছু মানুষ অভুক্ত থেকে যাচ্ছে। তাই কিছু পুজো কমিয়ে সেই টাকা অভুক্তদের পিছনে ব্যয় করলে আমার মনে হয় কাজের কাজ হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy