ছোটবেলা থেকেই পুজোর সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, আড্ডা মারা, জামা কেনা— সব মিলিয়ে ছুটি ছুটি আমেজ।
পুজো নিয়ে আমার মধ্যে কোনও আবেগ নেই। মাতামাতি ভাল লাগে না। তবে হ্যাঁ, পুজোর ওই কয়েকটি দিন আনন্দে কাটে। অস্বীকার করব না। ছোটবেলা থেকেই পুজোর সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, আড্ডা মারা, জামা কেনা— সব মিলিয়ে ছুটি ছুটি আমেজ। তার থেকেও বড় কথা, পুজোর প্রেম! পুজোয় মণ্ডপে গিয়ে সুন্দর ছেলেদের সঙ্গে চোখাচোখি করার মজাই আলাদা। মনে আছে, এক বার একটি ছেলে আমায় মণ্ডপের পিছনে নিয়ে গিয়ে পেন উপহার দিয়েছিল। সে পছন্দ করত আমায়। আমারও মন্দ লাগত না। বড় হওয়ার পরেও এ রকম অনেক গল্প তৈরি হয়েছে। পুজোর প্রেম থেকে নিজেকে বঞ্চিত করিনি কোনও দিনও। কিন্তু অভিনেত্রী হিসেবে ধীরে ধীরে খ্যাতি অর্জন করার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। একটু অন্য রকম হয়ে যায় আশপাশ।
ফ্রান্স থেকে আমার এক বন্ধু এসেছিল। এ দিকে আমার তো মনে নেই যে আমি খ্যাতনামী। রাস্তায় বেরোলে লোক জন আমাকে চিনতে পারে। আমি মনের আনন্দে বন্ধুকে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছি। কাঁধে হাত দিয়ে একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে কথা বলছিলাম। খেয়াল করলাম, লোকজন ঘুরে ঘুরে দেখছেন। আমার তো খুব রাগ হচ্ছে। ভাবছি, ‘‘এ ভাবে তাকানোর কী আছে? একটি ছেলের সঙ্গে গল্প করছি বলে? পরে মনে পড়ল, কেবল আমাদের অঙ্গভঙ্গির জন্য নয়, পর্দার বাইরে কলকাতার রাস্তায় আমায় এ ভাবে দেখে সবাই থমকে যাচ্ছে। স্কুলে প়়ড়ার সময়ে একটি ছেলেকে খুব ভাল লাগত। তার বাড়ির সামনেই আমার বান্ধবীর বাড়ি। পুজোর চার দিন ওই ছেলেটিকে দেখব বলেই বান্ধবীর বাড়িতে ডেরা বেঁধেছিলাম।
পুজোর সঙ্গে কিছু মন খারাপের স্মৃতিও রয়েছে। বাবার কাছে তখন অত টাকা ছিল না। বন্ধুরা এক এক দিন এক একটা নতুন পোশাক পরত। বাবা হয়তো খুব কষ্ট করে একটিই জামা কিনে দিয়েছেন। পরবর্তীকালে নিজে রোজগার করার পর সেই শখ পূরণ করেছি। যদিও সেই মন খারাপগুলি দীর্ঘস্থায়ী নয়। মনে গেঁথে যায়নি। তাই আজ সেগুলি নিয়ে কথা বলতে কষ্ট হয় না।
কখনও কখনও পুজোর কলতানে একঘেয়েমি চলে আসে। তাই শহর থেকে বেরিয়ে পুজোর সময়ে নিজের ঠিকানা বদলে ফেলি। কখনও পাহাড়, কখনও জঙ্গল, কখনও বা কলকাতার শহরতলীতে। অনেক বার একা একাই বেরিয়ে প়ড়েছি। হুট করে। এ বারও তেমন কিছু করতে পারি। নিজেকেই চমকে দিতে চাই। এখন তো একা থাকি। কলকাতায় থাকলে মা আমার কাছে এসে থাকবেন পুজোয়।
বাঙালি হিসেবে পুজোয় আনন্দ করব, সেটিই স্বাভাবিক। যদিও আমার বাড়িতে কোনও পুজো বা বিশেষ দিনে মাতামাতি করার চল নেই। বাবা-মা খুবই আস্তিক। কিন্তু দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজো, লক্ষ্মী পুজো— যা-ই থাকুক না কেন, সাড়ম্বরে উদযাপন করিনি কখনও। তাই পুজো শেষ হয়ে গেলে মন খারাপ করে পড়ে থাকা আমার ধাতে নেই। পুজো শেষ, রোজকার জীবন শুরু। আবার পরের বছরের জন্য বাকি আনন্দে তুলে রেখে কাজে ফিরে যাই আমি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy