দাদা চলে যাওয়ার পর থেকে পুজো নিয়ে আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছি আমরা। এ বছর আমাদের বাড়িতে শোকের আবহ।
এ বছর আমাদের বাড়িতে শোকের আবহ। চলতি বছরের মে মাসে আমার এক তুতো দাদাকে হারিয়েছি। করোনা কেড়ে নিয়েছে তাঁকে। দাদা চলে যাওয়ার পর থেকে পুজো নিয়ে আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছি আমরা। তার অন্যতম কারণ, দেশের বাড়ির পুজোয় দাদার উৎসাহ, খাটাখাটনি ছিল সব থেকে বেশি। আমাদের পরিবার অনেক ছড়ানো। দিল্লি, মোরাদাবাদ, আমেরিকার বাসিন্দা বহু আত্মীয়। গত বছরেও অনেকে আসতে পারেননি অতিমারির কারণে। এ বছর সবাই বলে দিয়েছেন, আমাদের এ বারের মতো ছেড়ে দাও। এ দিকে দুয়ারে মা। তাঁকে তো ফেরানো যায় না। তাই নমো নমো করে পুজো হবে।
পুজোর কথা লিখতে বসে দাদার মুখটাই বার বার ভেসে উঠছে। গত বছরেও আত্মীয়রা না আসতে পারায় আমায় বলেছিল, ‘তুই পুজোর ঘর থেকে লাইভে আয়। আমরা ওই দেখে অঞ্জলি দেব।’ এক বছরের মধ্যে সেই মানুষটাই নেই! এ বছরের পুজোয় তাই হাতোগোনা কিছু মানুষ থাকবেন। কাকা ওখানে থাকেন। তিনিই সব আয়োজন করবেন। কলকাতা থেকে আমি, বাবা যাব। জানেন, এখনও মায়ের শাড়ি কেনা হয়নি। ইদের সময় আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলাম, চলতি বছরের পুজোয় আমার কাশ্মীরি বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানাব। ওঁদের সঙ্গে রোজা রেখেছি। ওঁরা আমার বাড়িতে দুর্গাপুজোয় আসবেন। এর থেকে বড় ধর্ম সমন্বয় আর হয় না। সেই ইচ্ছেতেও বাধা পড়েছে। বন্ধুরা আমাদের পারিবারিক দুর্ঘটনার খবর শুনে জানিয়েছেন, এ বছর থাক। তাঁরা আগামী বারে আসবেন।
এর মধ্যেই এক কাশ্মীরি ভাই নিজের হাতে লাল সিল্কে জরির কাজ করে অদ্ভুত সুন্দর একটি কাশ্মীরি শাড়ি তৈরি করেছেন। শাড়িটি ভীষণ পছন্দ হওয়ায় ঠিক করেছি, ওই শাড়িতেই এ বছর আমার মা সাজবেন। এটাও তো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিরই নিদর্শন।
আমাদের বাড়িতে পুজোয় চারটে দিন রকমারি নিরামিষ রান্না হয়। পনির, ছানার ডালনা, লুচি, পোলাও, ফুলকপির তরকারি, ভাজা, পায়েস মিলিয়ে এলাহি কাণ্ড। আর থাকে নানা ধরনের মিষ্টি। এ সব ফেলে মোটেই আমিষ খাবার খেতে ইচ্ছে করে না। এ বারেও সে সব হবে। আর খেতে বসে দাদার কথা মনে পড়বে। প্রতি বছরের মতো এ বারেও জোড় পরে অষ্টমীর অঞ্জলি দেব। নতুন জামা পরব শুধুই ষষ্ঠীতে। আমার মায়ের কথা রাখতে। মা বলতেন, ষষ্ঠীতে নতুন পোশাক গায়ে তুলতেই হয়। বাকিগুলো সারা বছরে পাওয়া জামা-কাপড় দিয়েই হয়তো হয়ে যাবে। এ বার বাবাও নতুন পোশাক গায়ে তুলতে চাইছেন না। কেনাকাটার কথা তুলতেই ভারী গলায় বলেছেন, এ বারটা থাক। আসছে বছর আবার হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy