মায়ের বাড়ির মতোই আমার বাড়িতেও পুজো হবে। প্রতিমাকে সাজানো হবে, নিজে হাতে ভোগ রান্না করব।
বাড়িতে দুর্গাপুজো মানে বিরাট ঝক্কি। সেই সব সামলে উঠতে না উঠতেই লক্ষ্মীপুজো। দম ফেলার ফুরসত নেই। এ দিকে পরিশ্রমের জেরে বাড়ির সবাই অসময়ে বসে ঢুলছে। যে বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়, সেই বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো আবশ্যিক। সুতরাং, আমাদের বাড়িতেও প্রতিমা এনে পুজো হবে। অতিমারির কারণে অতিথিদের আমন্ত্রণ জানাতে পারিনি। শুধুই ঘরের কয়েক জন থাকবেন। যেমন, শুভ মানে আমার বোন শুভশ্রী আসবে ওর স্বামী রাজ চক্রবর্তীকে নিয়ে। শুভ-র শাশুড়ি মা-ও হয়তো আসবেন। ওঁদের হাত ধরে আসবে আমার ‘ছোট ছেলে’ ইউভান। ইউভান আসা মানেই সারা দিন-রাত সবাইকে হাসি-হুল্লোড়ে মাতিয়ে রাখা।
লক্ষ্মীপুজোর আগের সন্ধেয় পুজোয় সব কিছু গোছগাছ করছি। খুব মনে পড়ছে ছোটবেলার কথা। তখন আমরা বর্ধমান শহরে থাকি। জ্যাঠা-কাকা-আমার বাবা মিলে যৌথ পরিবার। দেশের বাড়িতে বড় করে লক্ষ্মীপুজো হত। ঠাকুমা পুজোর দিন দুই আগে থেকে নিজের হাতে নাড়ু বানাতেন। কত রকমের নাড়ু হত! পুজোর দিনে হত রকমারি ভোগ। সব আার ঠাকুমা রাঁধতেন। পূর্ববঙ্গের মানুষদের অনেকেই লক্ষ্মী দেবীকে ইলিশ মাছ ভোগ হিসেবে দেন। আমরা এ পার বাংলার মানুষ। দেবীকে আমরা তাই নিরামিষ ভোগ দিই। তখন আমাদের বাড়িতে রান্না হত খিচুড়ি, লাবড়া, পাঁচ রকম ভাজা, পোলাও আর ছানার ডালনা। ঠাকুমার হাতের ওই ছানার ডালনা খাওয়ার জন্য আমার সারা দিন ধরে অপেক্ষা করে থাকতাম। বড় হওয়ার পরে মা, জ্যেঠিমাকে কত বার বলেছি, তোমরা সব পারলেও ঠাকুমার মতো ছানার ডালনা রেঁধে উঠতে পারলে না! আর থাকত নানা রকমের ফল, মিষ্টি।
আস্তে আস্তে আমরা বড় হলাম। কাজের কারণে কলকাতায় চলে এলাম। প্রত্যেকের নিজস্ব বাড়ি হল। মা নিজের মতো করে পুজো শুরু করলেন। তবে দুর্গাপুজো কোনও দিন আমাদের বাড়িতে হয়নি। এখন আমারও বাড়ি হয়েছে। মায়ের বাড়ির মতোই আমার বাড়িতেও পুজো হবে। প্রতিমা আসবে। ফুল দিয়ে তাঁকে সাজানো হবে। সাজবে বাড়িও। সারা দিন উপোস করব। নিজে হাতে ভোগ রান্না করব। আর মনে পড়বে ঠাকুমার কথা। আপন মনে গল্প করতে করতে নাড়ু পাকিয়েই চলেছেন। ঠোঁটে এক চিলতে হাসি। অত বয়সেও মুখে-চোখে উপোসের কোনও ক্লান্তি নেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy