‘তেনাদের’ অস্তিত্ব আদৌ আছে কি নেই, সেই তর্কে আমি যাবই না। তবে তাঁদের ঘিরে আমার বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে যদি আমাকে প্রশ্ন করা হয়, তা হলে সহজ জবাব হবে, ‘আমি ভূতে বিশ্বাস করি না’। এ ক্ষেত্রে অবশ্য আমার দর্শনটা আলাদা। আমি মনে করি, মানুষের ভিতরের আতঙ্কটাই হল আসল ভূত। ছোট থেকে নানা রকম ভূতের ছবি দেখে এবং গল্প শুনেই বড় হয়ছি বলে কখনও কখনও সেগুলিকেই আমরা চোখের সামনে ভেসে উঠতে দেখি। বিজ্ঞান যাকে বলে ‘হ্যালুসিনেশন’। একাকীত্ব থেকেও অনেক সময়ে এই বিষয়গুলি হয়। মনে হয় গা ছমছম করছে। অথবা কানে অদ্ভুত কিছু আওয়াজ ভেসে আসছে।
এখন প্রশ্ন হল, আমার মতো ভূতে অবিশ্বাসী একটা মানুষ কী ভাবে ভূতের গল্প লিখতে বসল? আসলে ভূতে অবিশ্বাস করলেও এমন কিছু ঘটনার সাক্ষী হয়েছি, যার উত্তর আমি আজও খুঁজে পাইনি।
খোলসা করেই বলা যাক সবটা। এক বার উত্তরবঙ্গে অনুষ্ঠান করতে গিয়েছি। সাধারণত এমন কোথাও গেলে আমি আমার দলের সদস্যদের সঙ্গে একই গেস্ট হাউসে থাকি। কিন্তু সে দিন ঘটল ব্যতিক্রম। পর্যাপ্ত ঘর না থাকার কারণে আমার দলের সদস্যরা ছিল অন্য একটি জায়গায়। আর আমি একা উঠলাম গেস্ট হাউসে। আর সেই রাতেই তুমুল বৃষ্টি। তার উপর দোসর হল লোডশেডিং! মিথ্যে বলব না খানিক ভয় ভয় লাগছিল বটেই। এর মধ্যেই ঘটল এক অদ্ভুত কান্ড! মাঝরাতে হঠাৎ আমার ঘুম ভাঙে। দেখতে পারি বারান্দার আলো-পাখা জ্বলছে। কিন্তু আমার আজও স্পষ্ট মনে পড়ে, ঘুমোতে যাওয়ার আগে দু’টিই নিভিয়ে এসেছিলাম আমি। কে দ্বিতীয় বার জ্বালিয়েছিল বারান্দার আলো-পাখা? এর উত্তর আজও অধরা।
এর পরের ঘটনাটা এই দেশে ঘটেনি। আমি তখন সুদূর আমেরিকায়। যাঁর বাড়িতে ছিলাম, তিনি আমাকে বসতে বলে একটু বেরিয়েছিলেন। আমিও নিজের মতো টিভি দেখছি। ভয়ের সিনেমা দেখছিলাম বলে কি না জানি না, শরীরে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। পরে ওই ভদ্রমহিলাকে জিজ্ঞেস করায় আমাকে বলেছিলেন, ওই এলাকাতেই নাকি এক ভদ্রলোক থাকতেন, যাঁর মৃত্যু হয়েছিল অস্বাভাবিক ভাবে। তার পর থেকেই মাঝে মধ্যেই এমন হঠাৎ করে হাওয়া চলতে শুরু করে। আবার হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়। তিনি যে মিথ্যে বলেননি, তার প্রমাণ আমি নিজেই পেয়েছিলাম সেই রাতে। সত্যিই ভয় লাগছিল একা থাকতে। এই ভূতে অবিশ্বাসী ‘আমি’ই নাকি নিজে ফোন করে ওই ভদ্রমহিলাকে বাড়ি ডেকেছিলাম। অকপটেই বলেছিলাম, ‘আপনি দ্রুত বাড়ি আসুন। আমার ভয় করছে…’ ভাবা যায়!
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।