পুজোর মাত্র আর ক’টা দিন বাকি। এ দিকে পুজোর কেনাকাটা থেকে মণ্ডপসজ্জার শেষ মুহূর্তের সমস্ত তোড়জোড়ে জল ঢেলে দিল প্রকৃতি। দ্বিতীয়ায় প্রবল বৃষ্টির জেরে গোটা শহর জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। একাধিক মণ্ডপের বাইরের অংশ ভেঙেচুরে গিয়েছে। বাঁশ, পাটাতন জলে ভাসছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ ছবিটা একই। এমন অবস্থায় কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় থিম শিল্পী, এবং এই বছর যিনি নলিন সরকার স্ট্রিটের পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন সেই সনাতন দিন্দাকে ফোনে ধরল আনন্দবাজার ডট কম। কী জানালেন তিনি?
মণ্ডপের কী অবস্থা জানতে চাইলে এক রাশ হতাশা নিয়ে সনাতন দিন্দা জানালেন, “আমি রাতে সাড়ে ৩টে নাগাদ ফিরেছি। গড়িয়ায় থাকি, বাইপাস হয়ে ফিরেছি। এত বৃষ্টি কখনও দেখিনি। বাইপাসের অত জল কাটিয়ে বাড়ি ঢুকে শুনি প্যান্ডেলের চাতাল অবধি জল ঢুকে গিয়েছে। স্টেজের অনেক জায়গায় ভেঙেচুরে গিয়েছে। প্যান্ডেলের ইনস্টলেশন যে ভাবে করা তাতে কোনও ক্ষতি হয়নি বলেই খবর পেলাম। এর পর যদি বৃষ্টি হয় তখন আর আমি কিছু করতে পারব না। সব থেকে ভয়ংকর, বিদ্যুতের যোগাযোগ সমস্ত বন্ধ রাখতে বলেছি ইলেকট্রিশিয়ানদের, কারণ ওতে কী বিপদ ঘটবে কেউ জানে না। আমার যে আলোক পরিচালক আশিস, ও সাড়ে ৮ টায় বাড়ি গিয়েছে। এখন যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে আর কিছু করতে পারব না আমি।”
মণ্ডপসজ্জার কাজ আর কত বাকি ছিল, বা যে ক্ষতি হল সেটা কী ভাবে সামাল দেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নতুন করে কিছু করার পরিকল্পনা নেই। আমার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। আজ একটু খালি আলোগুলি পরীক্ষা করে দেখার ব্যাপার ছিল, কিন্তু সেগুলি কিছুই করা যাবে না। আমি ইলেকট্রিশিয়ানকে বলে দিয়েছি যত ক্ষণ না জল নামে তত ক্ষণ বিদ্যুতের কোনও কাজ করা যাবে না। এখন বিদ্যুতের সংযোগ পুনঃস্থাপন করলে কোন বিপদ ঘটবে কেউ জানে না। সবই ভাগ্যের উপর এখন। মন খারাপ করে বাড়িতে বসে রয়েছি। বাইপাসের যা অবস্থা, এ দিকে আমার বাড়ির গ্যারেজে পর্যন্ত হাঁটু অবধি জল, এ সবের মধ্যে আমি প্যান্ডেলে পৌঁছতে পারব কিনা সেটাও জানি না। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এত আয়োজন, এত কিছু... এত পরিশ্রম করে কলকাতার এত মানুষ খেটে কাজ করেছেন, সেগুলি যদি সাধারণ মানুষ না আসেন দেখতে তা হলে কীসের পুজো, কীসের আয়োজন এত? সব বৃথা হয়ে গেল।”
যে মণ্ডপে বা কুমোর পাড়ায় প্রতিমা ভিজে গিয়েছে সেগুলির কী হবে? মাত্র ক’টা দিন সময় হাতে তাতে সবটা শুকিয়ে নতুন করে কি কিছু করার সম্ভব? সনাতন দিন্দার সাফ জবাব, “বৃষ্টি তো বলছে আজও হবে। এমনকী আগামীকালও হতে পারে। ঠাকুর শুকানোর কোনও উপায় নেই। যে ঠাকুর সাজ-পোশাক পরে ফেলেছে তাকে শুকানোর কোনও উপায় নেই। যদি মাটির ঠাকুর শুধু থাকে, তা হলে সেটা শুকানোর অনেক উপায় আছে। কিন্তু জল জমার পর এখন যা অবস্থা গোটা শহরের সমস্ত প্যান্ডেলে কেউ সাহস করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে কিছু করতে পারবেন না।”
তবে প্রতিমার থেকে শিল্পীর বেশি চিন্তা আলোকসজ্জা এবং আলোক শিল্পীদের নিয়ে। “আলোক সজ্জা নিয়ে যাঁরা খেলা করেছেন আমি জানি না তাঁদের কী অবস্থা। কোথায় কী গোলযোগ দেখা দেবে জানা নেই। আমার প্যান্ডেলে আমি যেমন পারব না। সব নষ্ট হয়ে যাবে। সবই খোলা জায়গায় রাখা। অসহায় বাড়িতে বসে রয়েছি। যদি ওখানে পৌঁছতে পারতাম তা হলেও কিছু একটা করার চেষ্টা করতাম”, জবাব সনাতন দিন্দার।
এ দিন তিনি এও জানান যে তাঁর ছেলেরা প্যান্ডেলেই রয়েছেন, সারা রাত কাজ করেছেন তাঁরা। এমনকী ড্রেন পরিষ্কার পর্যন্ত ওঁরা করেছেন পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে, যাতে ঠাকুর পর্যন্ত জল না পৌঁছয়। তবে সনাতন দিন্দা এখনও আশা ছাড়েননি। জানালেন, “এখন যদি টেনে দুই ঘণ্টা রোদ ওঠে, তা হলে আমার প্যান্ডেলের বাইরের অংশে কোনও ক্ষতি হবে না।”
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।