কখনও তিনি ‘কবীর সিংহ’-এর বন্ধু, কখনও আবার ‘দিলখুশ’ অভিনেতা! পর্দায় যে রূপ বা নামেই আসুন না কেন, তাঁর করা বিভিন্ন চরিত্র বারংবার নজর কেড়েছে দর্শকদের। টলিউড থেকে বলিউড, ওয়েব মাধ্যম থেকে বড় পর্দা, সর্বত্র দাপিয়ে কাজ করে চলেছেন, এ হেন সোহম মজুমদারের এ বার পুজোয় কী পরিকল্পনা? কলকাতা নাকি মুম্বই কোথায় কাটাবেন ৪ দিন?
আনন্দবাজার ডট কমকে সোহম জানালেন এ বার গোটা পুজো তিনি কলকাতাতেই কাটাবেন। পরিকল্পনার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, “পুজোর সব থেকে সুন্দর এবং সেরা বিষয় হচ্ছে আমরা কেউ কখনও কিছু পরিকল্পনা করি না। সবটাই হুটহাট করে ঠিক করা হয়, সে বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ি বসে আড্ডা হোক বা ঠাকুর দেখতে যাওয়া। তবে এই বছর আমার মূল পরিকল্পনা হচ্ছে, যেহেতু বহু দিন পর কলকাতায় থাকছি, এ বার গোটা পুজোয় সব দুর্গাপুজোর ছবি দেখব। মানে যা যা ছবি মুক্তি পাচ্ছে পুজোর সময়, সব দেখব। সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার পরিকল্পনা তো আছেই, তা ছাড়া বন্ধুদের সঙ্গে টুকটাক যা বেরোনোর পরিকল্পনা হবে, সেটা হবে।”
এ ছাড়াও আরও একটি বিশেষ পরিকল্পনার কথা জানালেন ‘পিপ্পা’ অভিনেতা। বললেন, “আমাদের পাড়ার পুজোতে বিসর্জনের একটা বিশাল নাচ হয়, সেই নাচে একটু অংশ নেব।” তবে অভিনেতার ঠাকুর দেখা কখন হবে, সেটা সম্পূর্ণই নির্ভর করছে ভিড়ের উপর। সোহম বলেন, “আজকাল তো শুনছি তৃতীয়া থেকে লাইন পড়ে যায় ঠাকুর দেখার জন্য। তাই দেখি কখন ভিড় এড়িয়ে ঠাকুর দেখে আসা যায়।”
পুজো মানেই ডায়েট এক দিকে, বাঙালি আরেক দিকে। অভিনেতা জানালেন তিনিও এর ব্যতিক্রম নন। এই ক’দিন তিনি একে বারেই ডায়েট মানেন না বলেই জানালেন, তাঁর বক্তব্য সাফ, “পাতুরি থেকে ফিশ ফ্রাই, ‘জাঙ্কেস্ট অফ জাঙ্ক’ থেকে একদম খাঁটি বাঙালি খাবার, রাস্তায় পাওয়া রোল- সব খাই। শেষেরটা তো সেরা। ওদের যে ওই স্যসটা দেয়, আলাদাই স্বাদ ওটার। বাজে তেলে ভাজা পকোড়াগুলি এই সময় সেরা লাগে। পুজোর সময় ডায়েট, হেলদি খাবার একদমই খাই না।”
তবে এত বছর পর গোটা পুজোয় কলকাতায় কাটাবেন ঠিক করলেও এখনও কেনাকাটা কিছুই হয়নি সোহমের। অভিনেতা জানালেন তাঁর পছন্দের পোশাকের তালিকায় পাঞ্জাবি থেকে টি-শার্ট, শার্ট সবই থাকে। এ বার পুজোর জন্য তা হলে কী কী কিনবেন? “পাঞ্জাবি তো অবশ্যই থাকবে, আমাদের বাঙালি পুরুষদের সেরা সাজ তো ওটাই। সঙ্গে টি-শার্ট, শার্ট সবই থাকবে। আমার এই একটা জিনিসের নেশা রয়েছে, জামাকাপড়ের। কেনাকাটা করতে যদি বলা হয় আমার, ভালই লাগে বেশ” মত নায়কের।
পুজোর গল্প হবে, আর ছোটবেলার পুজোর প্রসঙ্গ উঠবে না? ধুস! তাই কখনও হয়? আর সেই গল্পের ফাঁকেই নানা মজার কথা উঠে এল সোহমের কথায়। বললেন, “ছোটবেলার পুজোটা আমার কেটেছে আমার মামাবাড়িতে, টিটাগরে। ওখানে আমাদের বাড়ির পুজো হত। এখনও হয়, কিন্তু এখন আর অত যাওয়া হয় না। সব ধরনের মজাই হতো। সে ঢাকের শব্দ বলুন, বা বিসর্জন, সবই। আসলে এই পুজো আসছে আসছে এই বিষয়টাই ভাল লাগে, নাটকের প্রস্তুতি চলত এই সময়। পুজোর সময় সেই নাটক হতো। আর পুজো মানেই অঞ্জলি, আর অঞ্জলি মানেই পাড়ায় নতুন মেয়েকে দেখলাম, তাকে ভাল লাগল, মানে মিষ্টি ভাবে যতটা যা করা যায় আর কী!”
তার মানে এক সময় নিশ্চয় জমিয়ে পুজোর প্রেম হয়েছে? চোখাচোখি হলেও পুজোর প্রেম হয়নি ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’র নায়কের। তাই খানেক আফসোস, খানিক মজার সুরেই বললেন, “আমার সেই সৌভাগ্য হল না। ষষ্ঠীতে শুরু হয়ে দশমীর পরেও টিকে গেছে। পাঁচ দিনের প্রেমের ব্যাপারটা হল না। তবে, হ্যাঁ, এরম বহু বার হয়েছে যে পুজোয় কাউকে পছন্দ হয়েছে, কথাবার্তা হয়েছে, কিন্তু প্রেম ব্যাপারটা গিয়ে শেষ পর্যন্ত আর হয়ে ওঠেনি” বলেই হাসতে থাকেন অভিনেতা।
কাজের জন্য দীর্ঘ সময় মুম্বইতে কেটেছে তাঁর। কলকাতা তো বটেই, মায়ানগরীর পুজোও দেখেছেন তিনি। কী কী ফারাক লক্ষ্য করেছেন? “সবাই নিজেদের মতো চেষ্টা করে। বম্বের বাঙালিরাও ভীষণ নস্ট্যালজিক হয়ে, তারাও পাল্লা দিয়ে সুন্দর ভাবে পুজো করার চেষ্টা করে। এই পুজোর আবেগটাই তো আসল, ওখানে কিন্তু সেই আবেগের কোনও কমতি থাকে না। পুরোটা নিষ্ঠা ভাবে করে। অনেক নতুন লোকজন যারা দুর্গাপুজোর ব্যাপারে অত ওয়াকিবহাল নন তারাও আসেন দুর্গাপুজোয় দেখতে” জবাব অভিনেতার।
আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা দেবীর আগমনের। এ বার দশভুজার থেকে কী চাইবেন? এই অস্থির সময় দাঁড়িয়ে সোহম বললেন, “সবাই যাতে একটু শান্ত হয়। মনে হচ্ছে আশেপাশে সবাই খুব অখুশি। করোনার পর থেকে যা যা ঘটছে, বা ঘটে চলেছে সেগুলিতে খুশি হওয়ার তো খুব একটা বেশি কিছু দেখেনি লোকজন। খুশি হওয়ার, খুশি থাকার সুযোগগুলি যেন তারা নিজেরাই খুঁজে নিতে পারে সেটাই প্রার্থনা করব।”
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।