পুজোর মুখে বেজায় ব্যস্ততায় দিন কাটছে অভিনেতা রোহন ভট্টাচার্যের। বর্তমানে তিনি রাজ চক্রবর্তীর 'হোক কলরব' ছবির শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত। রাত জেগে জেগে কাজের মধ্যেও কি পুজোর জন্য কোনও পরিকল্পনা করতে পেরেছেন? আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে আড্ডায় কী জানালেন রোহন?
এ বার পুজো কী ভাবে কাটানোর পরিকল্পনা করেছেন ‘ভজ গোবিন্দ’? রাত জেগে শ্যুটিংয়ের পর ক্লান্তি মাখা গলায় অভিনেতা বলেন, “এই যে শ্যুটিং চলছে, সেটা শেষ হবে। তখন বিশ্রাম নেব পুরো। এখন খুবই চাপে রয়েছি। বেশ কয়েকটা দিন এক টানা গোটা রাত ধরে শ্যুটিং রয়েছে। তা ছাড়া অন্যান্য দিনেও সকাল সকাল কল টাইম থাকছে। তাই পুজোর ক’দিন একদম বিশ্রাম নেব। একটু খাওয়া-দাওয়া করব ইচ্ছে মতো। শ্যুটিং চলে যখন আমি কড়া ডায়েট মেনে চলি। আর শ্যুটিং শেষ হলেই পুজো শুরু হবে, তাই ওই সময় যা যা খেতে ভালবাসি সেগুলি খাব, যেমন বিরিয়ানি, চিজ কেক এসবই।” আর ঠাকুর দেখা? সেটা পুরোটাই কি এ বার মুলতুবি থাকবে? রোহন জানান তিনি ছোট থেকেই ঠাকুর দেখতে যান না তেমন। তাঁর কথায়, “ছোট থেকে কখনই ঠাকুর দেখতে যাওয়া হয় না। আমার কাছে পুজো মানেই বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, আড্ডা দেওয়া, পরিবারকে সময় দেওয়া, এ সবই। তবে, ওই পুজো পরিক্রমা, অনুষ্ঠান- যেটুকু যা থাকে, যাই। তবে নিজে থেকে আমি ওই ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখি না।”
আরও পড়ুন:
শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত যখন, তখন নিশ্চয় কেনাকাটা কিছুই হয়নি? অভিনেতা জানালেন আন্দাজটা একে বারেই ঠিক। “এখন সারা বছরই কেনাকাটা চলতে থাকে, আমার মনে হয় পুজোর কেনাকাটা বিষয়টা অনেকের জীবন থেকেই এই কারণে উঠে গেছে। অনলাইন বা শপিং মলে গিয়ে যা পছন্দ হয় কিনে ফেলি। অনেক কিছু পড়েই থাকে, পরা হয়নি এমনও থাকে যা নতুনই, সেগুলিই পরি”, জানান রোহন।
তবে তিনি বলেন, পুজোয় যে একে বারেই নতুন জামা পান না সেটা নয়। পুজোর ‘উপহার’ আসে, তাও মা-দিদির থেকে। রোহনের কথায়, “পুজোর সময় একটা অভ্যাস থাকে যে নতুন কিছু একটা পরতেই হবে, সেটা আমার মা আমাকে দেয়। পুজোয় মা নতুন জামা আমাকে দেয়ই প্রতি বছর। দিদি দেয় কিছু একটা। আমি নিজে কিছু কিনি না। অন্যদের জন্য কিনি, মানে মা-দিদিদের জন্য।”
আড্ডা, বিশ্রাম এসবের মাঝে কি অষ্টমীর অঞ্জলি দেবেন? নাকি তাতেও ফাঁকি পড়বে? রোহন জানালেন, “যতদিন আমার বাপি ছিল, আমি অষ্টমীর অঞ্জলি দিতাম। আমার বাপি পুরোহিত ছিলেন। উনি নিজে দুর্গাপুজো করতেন। বাপি চলে যাওয়ার পর থেকে ২০২১ থেকে এখনও পর্যন্ত আমার অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়া হয়নি। দেখা যাক, ভগবান যদি চায় আমি নিশ্চয় দেব। আমি ঈশ্বরে ভীষণ বিশ্বাস করি। আমার মনে হয় ঈশ্বরের যেটা ইচ্ছে হয় সেটা হবেই। দেবী চাইলে আমি নিশ্চয় অঞ্জলি দেব।”
গল্প করতে করতেই রোহন এদিন জানালেন তাঁর ছোটবেলা কেটেছে উত্তর কলকাতায়। পাড়া সংস্কৃতির সঙ্গে তিনি দারুণ পরিচিত। তবে, এই মুহূর্তে ইন্ডাস্ট্রির বেশ জনপ্রিয় মুখ তিনি। কর্মজীবনে কাটিয়ে ফেলেছেন এক দশকেরও বেশি সময়। এখন পিছু ফিরে তাকালে ছোটবেলার পুজোর কোন স্মৃতি মনে পড়ে? অভিনেতা বলেন, “আমাদের বাড়ি লাগোয়া মাঠে পুজো হতো। প্যান্ডেলের একটা দিকে আমার বাড়ি। আমরা ৭-৮ জন বন্ধু ছিলাম, ভীষণ মজা করতাম। যেহেতু উত্তর কলকাতায় বড় হয়েছি, একটা অন্য রকমের ৯০ দশক দেখেছি। আমাদের আনন্দ শুরু হতো প্যান্ডেলের বাঁশ পড়া থেকে। কাপড় লাগানোর আগে ওই বাঁশের কাঠামোর মধ্যে আমরা ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতাম। বাঁশ বেয়ে বেয়ে উঠতাম। মা খুব বকাবকি করত যে পড়ে গেলে হাত পা ভাঙবে। ঠাকুর আনতে যেতাম সবাই মিলে। পুজোর সময় সবাই বাড়ি থেকে হাত খরচ পেতাম, কেউ ২০ টাকা, কেউ ৫০ টাকা, কেউ ১০০ টাকা। যে যেমন পেত সেগুলি এক জায়গায় করে সবার জন্য সমান ভাবে খরচ করা হতো। এরম কোনও ব্যাপার ছিল না যে আমি বেশি দিচ্ছি, ও কম দিচ্ছে। আমাদের মধ্যে দারুণ মিল ছিল। ওই সময়টা দারুণ ছিল।” শুধু তাই নয়, এক বার ঠাকুর দেখতে গিয়ে নাকি হারিয়েও গিয়েছিলেন অভিনেতা! হ্যাঁ, সেই স্মৃতি হাতড়ে বলেন, “এক বার ৫-৬ জন বন্ধু মিলে ঘুরতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলাম। খুঁজে পাচ্ছিলাম না কী করে ফিরব। বাড়ি থেকে পুলিশ স্টেশনে চলে গিয়েছিল। তার মধ্যে আমাদের সঙ্গে একটা ছোট বাচ্চা ছিল, আমার পিসির ছেলে। বাড়ি ফেরার পর প্রচণ্ড মার খেয়েছিলাম।”
পাড়ায় এত্ত হুটোপুটি চলত যখন, তখন নিশ্চয় পুজোয় এক-আধটা প্রেম হয়েছে? রোহনের জবাব, “প্রেম না সে ভাবে হয়নি। সুন্দর মেয়েদের দেখা, একটু তাকিয়ে থাকা, পিছন পিছন যাওয়া এ সবই হতো আর কী। কেউ কথা বললে একটা আলাদাই অনুভূতি হতো তখন। হয়তো আমার দিকেও কেউ তাকাচ্ছে, আমিও তাকাচ্ছি। কিন্তু আমি এত কিছুর মধ্যে ব্যস্ত ছিলাম যে প্রেম করতে পারিনি।”
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।