স্কুলের স্মৃতি উসকে দেওয়া হোক বা সামাজিক বার্তা, যাঁর ভিডিয়ো দেখলেই কখনও মুখে হাসি ফুটে ওঠে, তো কখনও মনের অব্যক্ত কথা চোখের সামনে দেখা যায় তিনিই অনুস্মিতা দত্ত। দেখেছেন, এই নাম বললে কি চেনা যায় তাঁকে? তিনি যে সকলের কাছে ‘মিস দত্ত’ হিসেবেই পরিচিত। যাঁর ‘সাবিত্রীইইইইই…’ ডাক সকলেই চেনেন। বর্তমানে সেই মিস দত্ত ওরফে অনুস্মিতা, তাঁর পুজো সংক্রান্ত ভিডিয়ো নিয়ে বেজায় ব্যস্ত। আর এ সব ব্যস্ততার ফাঁকেই ভাদ্রের এই তপ্ত দুপুরে তাঁর সঙ্গে আড্ডা জমেছিল আনন্দবাজার ডট কমের।
পুজো পুজো গন্ধে ছেয়ে গিয়েছে বাতাস। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। বাঙালিদের পুজোর কেনাকাটাও চলছে জোরকদমে। মিস দত্তর-ও কি কেনাকাটা হল? গল্প করতেই করতেই অনুস্মিতা বলেন, “আমি যেহেতু সারা বছর কেনাকাটা করি তাই পুজোর জন্য অমন আলাদা করে সত্যি বলতে হয়ে ওঠে না। তবে এক-দুটো হয়েছে। মা একটা দিয়েছে। ছোট থেকে এটা একটা প্রথা চলে আসছে, মা-বাবার তরফ থেকে একটা জামা পাই, সেটা পেয়েছি। আর দিদা একটা দেয়, সেটাও হয়েছে। আপাতত পুজোর জামা বলতে এই দুটোই হয়েছে।”
নিজে যতই কেনাকাটা করি না কেন, বড়দের থেকে এই প্রাপ্তিগুলি আদতেই যেন এক ভাল লাগা বয়ে আনে, এ কথা স্বীকার করে নেন অনুস্মিতাও। বর্তমানে তিনি নেটপ্রভাবী। বহু মানুষ তাঁর অনুরাগী, ভিডিয়ো দেখেন। এখনও কি আগের মতোই ঠাকুর দেখতে যাওয়া হয়? এই বিষয়ে তিনি জানালেন, যে মানুষ ছেঁকে ধরার ভয়ে নয়, বরং অন্য একটা কারণের জন্যই ‘প্যান্ডেল হপিং’ করেন না। অনুস্মিতা বলেন, “আগে বন্ধুদের সঙ্গে রাত জেগে ঠাকুর দেখা হতো, কিন্তু এখন বয়স বাড়ছে তো... তাই ওই ভিড়ের মধ্যে গিয়ে ঠাকুর দেখা হয় না। তবে এই যে কোথাও গেলে, মানুষ এসে আমার সঙ্গে কথা বলে, আমার খুবই ভাল লাগে সেটা। খালি ওই পুজোর ভিড়, তার মধ্যে ধাক্কাধাক্কি আমার ভাল লাগে না। আমি যেহেতু সামাজিক উদ্বেগে ভোগা একজন মানুষ তাই আমার অত ভিড় ভাল লাগে না। পছন্দ করি না। আমার কমপ্লেক্সে পুজো হয়, তাই এই ক’দিন ওখানেই কাটে আমার।”
কমপ্লেক্সের পুজো ছাড়া আর কী কী পরিকল্পনা করেছেন অনুস্মিতা এ বার পুজোয়? তিনি বলেন, “এ বারের পুজোতে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও পরিকল্পনা হয়নি। আমি খুব হুটহাট পরিকল্পনা করি। তাই, শেষ মুহূর্তেই সব পরিকল্পনা হবে যে কী করব না করব। তবে, আমার কিছু বন্ধু কলকাতায় ফিরছে পুজোর সময়, তো ওদের সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা আছে আপাতত।”
এখন যতই খ্যাতি আসুক, কাজের হাত ধরে বাঙালির ঘরের মেয়ে উঠুন না কেন তিনি, পিছু ফিরে দেখলে ছোটবেলার পুজোর কোন স্মৃতি মনে পড়ে তাঁর? এই জনপ্রিয় নেটপ্রভাবী বলেন, “আমি এটা বললে হয়তো লোকেদের কথা শুনতে পারি, তাও বলছি, যেহেতু আমার বাবার ব্যবসা, গোটা বছর তো তেমন কোনও ছুটি পেতেন না। তাই পুজোর এই চারটে দিনের জন্য আমরা গোটা পরিবার বেড়াতে চলে যেতাম। এরম ৪-৫ বছর আমরা পরপর কলকাতার বাইরেই পুজো কাটিয়েছিলাম। তার পর থেকে কলকাতাতেই পুজোর সময়গুলি কাটিয়েছি। গত ১০ বছর এই সময়টা এখানেই কেটেছে। এই সময় এখন আর অন্য কোথাও যাই না। আসলে যতই যা হোক না কেন, ভারত কেন, পৃথিবীর যেখানে খুশি চলে গেলেও কলকাতার পুজো, কলকাতার পুজো। ওই অনুভূতি অন্য কোথাও আসে না।”
কলকাতার পুজোর অনুভূতি অন্য কোথাও যেমন পাওয়া যায় না, তেমনই পুজোর প্রেমের অনুভূতি-ও কিন্তু আলাদাই হয়। আর এই অনুভূতির স্বাদ কি কখনও পেয়েছেন অনুস্মিতা? প্রশ্ন শুনেই আক্ষেপের সুর তাঁর গলায়। বললেন, “আমার এই গল্পটা এতটাই দুঃখজনক যে কী বলি! আমি প্রত্যেক বছর আজ অবধি পুজোতে ‘সিঙ্গল’। ওই ধারাটা আমি বজায় রেখে চলেছি। আশা করছি, পরের বছর এটা যেন ভাঙে। যাতে আমিও পরের বছর বলতে পারি আমারও শাড়ি ধরার, কুচি ধরার কেউ আছে।”
দুর্গাপুজো সংক্রান্ত তাঁর ভিডিয়োটি ইতিমধ্যেই ভাল সাড়া পেয়েছে। কিন্তু এই পুজোয় কি মিস দত্তের ভিডিয়োতে ‘সাবিত্রীইইই…’ ডাক শোনা যাব? প্রশ্ন শুনে হেসে নিয়ে বলেন, “সাবিত্রীর সঙ্গে পুজোর একটা কন্টেন্ট ভাবা হচ্ছে। দেখা যাক, কতদূর কী হয়।”
‘সাবিত্রী’ আর তার গৃহকর্ত্রীর ভিডিয়ো আসবে কিনা এই পুজোয় সেটা সময়ই বলবে, তবে দেবীর কাছে অনুস্মিতার এই পুজোয় একটাই জিনিস চাওয়ার। “সবাই যেন শান্তিতে থাকে। ভাল থাকে। সবার ভাল হোক। খালি আমার আশেপাশের মানুষরা নন, সবাই যেন ভাল থাকেন”, প্রার্থনা মিস দত্তের।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।