প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

পুজোর শাড়ি মানেই গরদ-তসর-মটকা নয়, দেখিয়ে দিয়েছেন দুই বঙ্গললনা

অমৃতা এবং বেদপ্রাণা দু’জনেই জানিয়েছেন, অতিমারিতে উৎসব অনেকটা আগলবদ্ধ হলেও গামছাভিত্তিক শাড়ি বা অন্যান্য পোশাকের চাহিদা কমেনি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২০ ১৯:৩৬

শাড়ির উপকরণ হিসেবে গামছা এখন খুবই জনপ্রিয়।

কলেজে পড়ার সময়েই মনের মধ্যে পাখা মেলত খেয়ালপোকা। সাধারণ পোশাককেই যদি কাঁচির ছোঁয়ায় এদিক ওদিক করা যায়। করতেনও সেরকমই। তখন থেকেই সাধারণ পোশাক অনন্য হয়ে উঠত অমৃতার হাতে। পরবর্তীতে সৃষ্টিশীলতার স্রোতে যোগ দিয়েছে সুর। গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী অমৃতা দত্ত। জনপ্রিয়তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্যস্ততাও। তার মাঝেই দক্ষ হাতে পরিচালনা করেন নিজের বুটিক ‘অমৃতাজ ক্রিয়েশন’। প্রতিটা সৃষ্টিতে নিক্তি করে মেপে দেন যত্ন ভালবাসা আর নিষ্ঠা।

তাঁর সৃষ্টিকে অন্যরকম করে তুলতে অমৃতা বেছে নিয়েছেন গামছাকে। এক ফালি এই কাপড়টুকুর সঙ্গেও জড়িয়ে থাকে পরম মমতা। কিন্তু কোথায় যেন অভাব ছিল কৌলীন্যের। পুজো এবং বাঙালিবাড়ির যে কোনও শুভকাজে জড়িয়ে থাকে গামছা। বহন করে মাঙ্গল্যচিহ্ন। কিন্তু আধুনিক শহুরে যাপনে সে ব্রাত্য। পরিচয় আটকে রয়েছে গ্রামবাংলার খেটে খাওয়া মানুষের অঙ্গসজ্জা হিসেবেই। সেই সীমারেখাটাই মুছে দিতে চেয়েছিলেন অমৃতা। জানালেন, ‘‘একদিকে মাঙ্গল্যচিহ্ন। অন্যদিকেআমাদের গ্রীষ্মপ্রধান ক্রান্তীয় দেশে আরামদায়ক হিসেবে এর উপযোগিতা। এই দু’টি দিক বিচার করে আমি গামছাকেই বেছে নিয়েছি।’’

শুধু শাড়ি বা অন্য পোশাক নয়। গামছা দিয়ে সবরকম অ্যাকসেসরিজও বানাচ্ছেন অমৃতা। তবে তাঁর সব সৃষ্টিতেই একটি জিনিস নিশ্চিত। তাঁর প্রতিটি জিনিস হ্যান্ডলুম। হাতে বোনার যত্নের পাশে সেখানে কোণঠাসা যান্ত্রিকতা। সৃষ্টিশীলতা বজায় রাখতে পরিশ্রমে কোনও কার্পণ্য করেন না অমৃতা। বর্ধমান, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত অংশ তিনি চষে ফেলেন ভাল গামছার খোঁজে। সেই সন্ধানে গিয়ে এক বার চমকেও উঠেছিলেন। যখন দেখেছিলেন বাঁকুড়ায় অপেক্ষা করে আছে স্কটিশ ব্যাগপাইপারদের পরনের হুবহু চেক। গ্রামের অখ্যাত, অজ্ঞাত তাঁতিদেরহাতের কাজকেই তুলে ধরতে চান অমৃতা। তাঁর পসরায় হাজির বিভিন্ন রকমের পোশাক। শুরুর রেঞ্জ ১৭০০ টাকা থেকে। সেরকম কাজ হলে দাম পৌঁছয় ৮০০০-এও। সেখানে গামছার সঙ্গে ধরা পড়ে লিনেন, কাঁথাকাজ এমনকি, লিনেনের যুগলবন্দিও। ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে অমৃতা তাঁর সম্ভারে এক ধরনের জিনিস বেশি রাখেন না।

নিজের সৃষ্টিতে নিজেকে সাজিয়েছেন অমৃতা

বেঙ্গালুরুর বেদপ্রাণা পুরকায়স্থর শাড়ির প্রতি টান আশৈশব। তবে শাড়ি থেকে দূরে থাকতে হয়েছিল বেশ কিছু বছর। সে সময় থাকতেন বিদেশে। শাড়ি পরার সুযোগ বিশেষ পেতেন না। বরং শাড়ি পরাতেন বান্ধবীদের। দেশে ফিরে থাকতে শুরু করলেন বেঙ্গালুরুতে তখনই মাথায় এল আইডিয়া। শাড়িকে নতুন রূপে পেশ করলে কেমন হয়! বারো হাত কাপড়ের ভোল পাল্টাতে বেদপ্রাণা বেছে নিলেন গামছাকে। তবে আজন্ম গুয়াহাটিতে বড় হওয়া বেদপ্রাণা গামছাকে বলেন ‘গামোসা’। অসমিয়া ভাষায় এই নামেই ডাকা হয় গামছাকে। সাদা-লাল সুতোয় বোনা অসমের গামছার ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। সেখানে এর ব্যবহারও ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন স্তরে।

আরও পড়ুন: লাল পাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে নারী এক লহমায় মায়াময়

গামোসা কখনও জেলে-চাষির পরনের কাপড়। কখনও আবার সেটি বিহু নাচের পোশাক। আবার একই গামছা ব্যবহৃত হয় ধর্মীয় গ্রন্থ সযত্নে জড়িয়ে রাখার কাজেও। কখনও আবার উত্তরীয়ের মতো গামছা দিয়ে সম্মান জানানো হয় কোনও শ্রদ্ধেয়কে। অতিথিকে বরণ করে নেওয়া হয় গামোসার সঙ্গে পান সাজিয়ে।

অসমের বয়নশিল্পকে তুলে ধরতে চান বেদপ্রাণা (মাঝে)

প্রাচীন অহম রাজবংশের মহিলারা এক রাতের মধ্যে বুনে ফেলতেন একটি গামছা। পরদিন যখন পুরুষরা যুদ্ধে যেতেন, তাঁদের সঙ্গে দেওয়া হত সেই গামছা। অসমের এ সব প্রাচীন রীতি সম্পর্কে ছোট থেকেই জানেন বেদপ্রাণা। তখন থেকেই তাঁর শাড়ির প্রতি অগাধ ভালবাসা।বর্তমানে তিনি বেঙ্গালুরুতে ‘বেদাস’ বুটিকের ব্যস্ত মালকিন। তাঁর হাতে অসমের গামোসা রূপ পেয়েছে শাড়িতে।

আরও পড়ুন: পুজোর শপিংয়ে গেলেন ঊষসী, কী কী বেছে নিলেন নিজের জন্য?

বেদপ্রাণা বললেন, ‘‘মেখলা চাদরে গামোসার ব্যবহার আগে থেকেই ছিল। তবে আমি শাড়িতেও নিয়ে এসেছি গামোসাকে।’’ বেদপ্রাণার শাড়ির দামের রেঞ্জ মোটামুটি ৩৫০০ টাকার আশেপাশে। সুতির সঙ্গে সিল্ক মিশিয়ে তিনি শাড়ি তৈরি করেন ‘পদ্মিনী কটন’ মেটিরিয়ালে। তাঁর মতে, এতে শাড়ির ওজন কম হয়। হয় টেকসইও।

অমৃতা এবং বেদপ্রাণা দু’জনেই জানিয়েছেন, অতিমারিতে উৎসব অনেকটা আগলবদ্ধ হলেও গামছাভিত্তিক শাড়ি বা অন্যান্য পোশাকের চাহিদা কমেনি। বাঙালির পুজোর শাড়ি মানেই গরদ-মসলিন-তসর-মটকা নয়, তা দেখিয়ে দিয়েছেন নতুন প্রজন্মের এই দুই বঙ্গললনা।

(ছবি সৌজন্য: অমৃতাস ক্রিয়েশন এবং বেদাস)

Durga Puja 2020 Durga Puja Celebration Durga Puja Fashion Durga Puja Dresses
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy