প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

যাত্রাঘট থেকে জোড়া ইলিশ, দশমীকে ঘিরে থাকে একাধিক লোকাচার

মহাসমারোহে যে দেবীর পুজো চলে তিন-চার দিন ধরে, তাঁর ফিরে যাওয়ার দিন দশমী। এ দিন দেবী অপরাজিতা রূপে পূজিতা হন। বিজয়ী হওয়ার বাসনায় এই পুজো করা হয়।

সৌভিক রায়

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:২৮
প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

ষষ্ঠীতে যে দেবীর বোধন হয়, যাঁকে আবাহন করা হয়, আমন্ত্রণ জানানো হয়, পুজো করা হয়, তাঁর ফেরার দিন হল দশমী। ঘট নাড়িয়ে, তিরকাঠির সুতো কেটে দেন পুরোহিত। চলে বিসর্জনের পুজো। প্রতিমা নিরঞ্জন পরে হলেও, দশমী তিথি পড়ার পরে দর্পণে দেবীর বিসর্জন সম্পন্ন করে ফেলা হয়।

বিসর্জনের পুজোর পরে দেবী ‘অপরাজিতা’ রূপে পূজিতা হন। ‘অপরাজিতা’ দেবী দুর্গারই আর এক রূপ। এ দিন সাদা অপরাজিতা গাছকে দেবীরূপে কল্পনা করে পুজো হয়। দেবীর কাছে প্রার্থনা জানানো হয়, ‘‘হে অপরাজিতা দেবী, তুমি সর্বদা আমার বিজয় বর্ধন কর।’’ বিজয় কামনাই অপরাজিতা পুজোর আদত উদ্দেশ্য। প্রাচীন কালে বিজয়া দশমীতে রাজারা যুদ্ধযাত্রা করতেন। চাণক্যের ‘অর্থশাস্ত্র’ অনুযায়ী, এটাই যুদ্ধযাত্রার শ্রেষ্ঠ সময়। পণ্ডিত রঘুনন্দন ‘তিথিতত্ত্ব’ গ্রন্থেও একই কথা বলেছেন। মনে করা হয়, রাজা যদি দশমীর পরে যাত্রার সূচনা করেন, তা হলে তার পরাজয় হয় না। দশমীর দিন রাজারা অস্ত্র পুজো করতেন। বীরভূমের কোনও কোনও গ্রামে আজও দশমীতে বাড়ির দা, বঁটি, কোদাল, খড়্গ ইত্যাদিকে পুজো করা হয়।

দশমী ঘিরে রয়েছে একাধিক লোকাচার। দশমীতে বহু বাড়িতেই দেবীকে পান্তা নিবেদন করা হয় ভোগে। চার দিন বাপের বাড়িতে ভালমন্দ খাওয়া। পাছে শিব ক্ষিপ্ত হয়ে যান, তাই শেষ দিনে শাক-ভাতের ব্যবস্থা। দেবী কৈলাসে ফিরে গেলে মহাদেব বলবেন, ‘বাপের বাড়িতে কী খেলে?’ দেবী উত্তর দেবেন, ‘গরিব পিতা তেমন কিছুই খাওয়াতে পারেননি। শাক-ভাত খেয়ে এলাম।’ গ্রামের পুরনো রীতি অনুযায়ী, বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি ফেরা মেয়েরা যে ভাবে বাসি খাবার খেত, সেই আচার মেনে উমাকেও ‘পান্তাভাত’ নিবেদন করা হয়।

দেবীর কৈলাসে ফেরার খবর দিতে এক কালে বনেদি বাড়িতে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর রেওয়াজ ছিল। এখন শোলার নীলকণ্ঠ পাখি রাখা হয়। শোভাবাজার রাজবাড়িতে ফানুস ওড়ানো হয়। মেয়ে-বউরা দেবীকে বরণ করেন। সিঁদুরদান হয়। মা দুর্গা এবং তাঁর সন্তানদের মিষ্টিমুখ করিয়ে, তাম্বুলে বরণ করে নেওয়া হয়। তার পরে দেবী রওনা হন নিরঞ্জনের উদ্দেশ্যে। ‘বেড়া অঞ্জলি’ নামের একটি রীতি দেখা যায় কোনও কোনও পরিবারে। দশমীর দিন বরণ সেরে সূর্যাস্তের পরে ঠাকুরদালান থেকে প্রতিমা বার করে আনা হয়, তার পরে বাড়ির মহিলারা দেবীকে প্রদক্ষিণ করে অঞ্জলি দেন। এই প্রথাকে বলা হয় ‘বেড়া অঞ্জলি’। কোথাও কোথাও কনকাঞ্জলির রীতিও আছে।

বাড়িতে বাড়িতে এ দিন ‘যাত্রা ঘট’ বসানো হয়। ‘যাত্রা ঘট’ দেখে যাত্রা করলে কোনও বিপদ-আপদ স্পর্শ করতে পারবে না– এটাই প্রচলিত বিশ্বাস। পূর্ব বাংলা থেকে আসা ছিন্নমূল মানুষের কাছে এ যেন দুর্গাপুজোর এক সংস্করণ। পাড়ার বারোয়ারিতে অষ্টমীর অঞ্জলি, দশমীর বরণ আর নিজ গৃহে যাত্রা ঘট পাতা– এই তো ছিল ভিটে হারানো মানুষগুলোর দুর্গাপুজো।

‘যাত্রা ঘট’ কী?

দশমীতে বাড়ির অন্দরে কোনও স্থানে ধান, দূর্বা, সিঁদুরের ফোঁটা দিয়ে ঘট বসানো হয়। তাতে আমের পল্লব, পান, কলা থাকে। এটাই ‘যাত্রা ঘট’। যাত্রা ঘটে জোড়া বেল সমেত বিল্বডাল রাখতেও দেখা যায় কিছু বাড়িতে। ধূপ, ধুনো জ্বেলে, খই-দই-মুড়কি-মিষ্টি দেওয়া হয় ঘটের সামনে। সমৃদ্ধি চেয়ে কড়ি, তেল-সিঁদুর মাখানো টাকা (মুদ্রা) আর জোড়া পুঁটি রাখা হয়। আনা হয় কদম ফুল, যা দরজায় দরজায় টাঙানো হয়। দেবীর পায়ে ছোঁয়ানো তেল-সিঁদুর দিয়ে চৌকাঠে, সিন্দুকে ফোঁটা দেওয়া হয়। পুঁটি মাছের গায়ে সিঁদুর দিয়ে ‘যাত্রা’ করানো হয়। সেই পুঁটি মাছ রান্না করা হয় বাড়িতে। অনেক পরিবার ওই মাছ চালে (বাড়ির ছাদে) ছুড়ে ফেলে, এমনই নাকি রেওয়াজ। কারও কারও বাড়িতে (মূলত বাঙাল বাড়িতে) জোড়া ইলিশ আনার নিয়ম আছে দশমীতে। ফের জোড়া ইলিশ ঢুকবে শ্রীপঞ্চমীতে। মাঝের ক’মাস ইলিশ ধরা বা খাওয়ার নিয়ম নেই।

বাঙালিদের কাছে মাছ অত্যন্ত শুভ। মাছ দেখে বা খেয়ে যাত্রা করাকে শুভ হিসাবে গণ্য করা হয়। দেবী দুর্গা বাড়ির মেয়ে। যে দিন মেয়ে বাপের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়, সে দিন যাতে তাঁর যাত্রা শুভ হয়, তার জন্য মাছ এসে পড়েছে নিয়মে। মাছ এনে, গায়ে সিঁদুর লাগিয়ে দেওয়া হয়। মনে করা হয়, দেবী মাছ দেখে যাত্রা শুরু করলে, নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছবেন। এমনকী, দেবীকে মাছ নিবেদন করার পরে বিভিন্ন বাড়িতে প্রতিমা বিসর্জনের নিয়ম আছে। বাড়ির এয়োরা মাছ খেয়ে দেবী বরণ করেন। রাঢ় বাংলায় বিভিন্ন এলাকায় আজও দশমীর সকাল মাছ ধরতে দেখা যায় স্থানীয়দের। রীতিটি ‘মাছ যাত্রা’ নামে পরিচিত।

ফরিদপুরের বাঙালরা আবার দশমীর দিন এক অন্য রকম লোকাচার পালন করেন। বিগত বছরে পুজো হওয়া লক্ষ্মীসরায় মাটি দিয়ে ধানবীজ রোপণ করা হয়। গোটা কার্তিক মাস ধরে তাতে জল দেওয়া হয় প্রতিদিন। তার পরে সংক্রান্তিতে অর্থাৎ কার্তিক পুজোর দিন সেই সরার উপরে পাঁচটি ঘট পাতা হয়। আতপ চাল দিয়ে ঘট ভর্তি করে, তার উপরে জলপাই বসিয়ে, তাতে গামছার আচ্ছাদন দিয়ে পুজো করা হয়। কার্তিক কিন্তু শস্যদেবতা, ফসল রক্ষক। আবার কার্তিককে সন্তানদানের দেবতা জ্ঞানে পুজো করা হয়। ক্ষেতের ফসল সন্তানের সমতুল্য, তাই হয়তো এমন নিয়ম।

কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে দশমীতে ‘যাত্রামঙ্গল’ নামের একটি অনুষ্ঠান হয়। রাজ পরিবারের সদস্যদের বিশেষ কিছু জিনিস দর্শন করতে হয়। আজকাল প্রতীকী দর্শনের মাধ্যমে রীতি বজায় রাখা হচ্ছে। বলা হয়, এগুলো দেখলে বছর শুভ হবে। দশমীর দিনে যাত্রা ঘট পাতা হোক বা অপরাজিতা পুজো, সব কিছুর সঙ্গেই বিজয় কামনা জুড়ে গিয়েছে। এই দিন দেবী অসুরকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন, শ্রীরামচন্দ্র রাবণকেও হারিয়েছিলেন এই দিনে। তাই দশমীর প্রতিটি আচারের মধ্যে যেন লুকিয়ে থাকে জয়ী হওয়ার আশীর্বাদ পাওয়া আকুতি।

‘আনন্দ উৎসব ২০২৫’-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। প্রেজ়েন্টিং পার্টনার ‘মারুতি সুজ়ুকি অ্যারেনা’। অন্যান্য সহযোগীরা হলেন ওয়েডিং পার্টনার ‘এবিপি ওয়ানস্টপ ওয়েডিং’, ফ্যাশন পার্টনার ‘কসমো বাজ়ার’, নলেজ পার্টনার ‘টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’, ব্যাঙ্কিং পার্টনার ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’, কমফোর্ট পার্টনার ‘কার্লন’।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy