সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি। দু’দিন পরেই বিশ্বকর্মা পুজো। কুমোরটুলি থেকে পটুয়ার ঘর শূন্য করে একে একে রওনা দিচ্ছে মূর্তি। বায়না করে যাওয়া বিশ্বকর্মাকে নিয়ে যেতে এসেছে কোনও এক কারখানার এক দল শ্রমিক। লরিতে প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার সময় যা হয়, হইচই-হুল্লোড় চলছে। তার উপরে বিশ্বকর্মা পুজোয় আমোদের বহরটা খানিক বেশিই! এহেন হই-হট্টগোলে বাহন হাতির শুঁড় গেল ভেঙে। ভাঙা শুঁড় নিয়েই উদ্দাম নাচ চলছে লরির উপরে।
এ দৃশ্য চেয়ে চেয়ে দেখছিলেন কিংবদন্তি অভিনেতা জহর রায়। জাতে ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটার’-এর কি এমন ঘটনা কেবল দেখে সাধ মেটে? লিখে ফেললেন ‘কমেডি স্কেচ’ ভিডিয়োর স্ক্রিপ্ট। তবে বিশ্বকর্মা পুজো নিয়ে নয়, বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করেই তৈরি হল কৌতুক-চিত্রনাট্য।
দুর্গাপ্রতিমা আনার পথে ভেঙে গেল অসুর। এখন উপায়? মহিষাসুরকে ছাড়া কি মহিষাসুরমর্দিনীকে মানায়? বার হল একখানা উপায়। পাড়ার কাঠবেকার নেপালচন্দ্র ওরফে ন্যাপাকেই মহিষাসুর সাজিয়ে মণ্ডপে দাঁড় করিয়ে রাখা হল। চার দিন মণ্ডপে কেমন করে মহিষাসুরের ‘প্রক্সি’ দিল ন্যাপা? কী কী কাণ্ড হল? সেই মজার কাহিনি নিয়েই জহর রায়ের সৃষ্টি ‘ন্যাপাসুর বধ’। পুজোর আগেই রেকর্ডিং হল। ‘ন্যাপাসুর বধ’ সুপার হিট! দেদার বিক্রি হল। সে বছর মণ্ডপে মণ্ডপে বাজল জহর রায়ের সেই দুরন্ত সৃষ্টি।
সম্ভবত ‘ন্যাপাসুর বধ’-এর কল্যাণেই জীবন্ত মডেল-সহ দুর্গা ঠাকুরের ধারণা বাসা বেঁধেছিল মানুষের মনে। ধীরে ধীরে বাস্তবেও ঢুকে পড়ল সে জিনিস। নয়ের দশকের শেষ থেকে এই সহস্রাব্দের শূন্য দশকে মফস্সল-গাঁ-গঞ্জে তাই ‘জ্যান্ত দুর্গা’ ছেয়ে গিয়েছিল। জীবন্ত মডেল-সহ সপরিবার দুর্গাকে রাখা হতো মণ্ডপে, উপচে পড়ত ভিড়। বহু শিল্পী রং মেখে, সেজে বাড়তি উপার্জন করতেন পুজোর ক’দিন। পুজোর উদ্যোক্তারা রীতিমতো মাইকে হেঁকে লোক ডাকতেন। ঘোষণা হতো, ‘এ বারের বিশেষ আকর্ষণ জীবন্ত মডেল-সহ জ্যান্ত দুর্গা...’।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।