কথায় বলে, দেবী মর্ত্যে এলে সাজেন জোড়াসাঁকোর দাঁ বাড়িতে, ভোজ খান অভয়চরণ মিত্রের বাড়িতে। আর নাচ দেখেন শোভাবাজার রাজবাড়িতে। কিন্তু কেন প্রচলিত হল এই প্রবাদ? এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোন ইতিহাস?
দুর্গাপুজো ঘিরে এই প্রবাদের নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে। ১৮৩৯ সালে শিবকৃষ্ণ দাঁ-র হাত ধরে জোড়াসাঁকোর দাঁ বাড়িতে শুরু হয় দেবী দুর্গার আরাধনা। মহালয়ার ঠিক পরের দিন, অর্থাৎ প্রতিপদ থেকেই এই বনেদি বাড়ির পুজো শুরু হয়ে যায়। যবে থেকে এই বাড়ির পুজো শুরু হয়েছে, তখন থেকেই এখানকার প্রতিমার সুখ্যাতি ছিল তার অলঙ্কারের জন্য।
শিবকৃষ্ণ দাঁ নিজে সোনার গয়নায় সাজতে যেমন ভালবাসতেন, একই ভাবে মনের মতো করে দেবী দুর্গাকেও সাজিয়ে তুলতেন তিনি। জানা যায়, দেবীর জন্য হিরে-চুনী বসানো গয়না-শাড়ি বিদেশ থেকে আনানো হতো সেই সময়ে। আর সেই থেকেই লোকমুখে প্রচলিত হয় যে, দেবী মর্ত্যে এসে আগে দাঁ বাড়িতে সাজেন। আজও সেই রীতি মেনে এ বাড়িতে দেবীকে ভেলভেটের শাড়ি পরানো হয়। সঙ্গে থাকে চোখধাঁধানো অলঙ্কার।
কথিত, এর পরে দেবী যান উত্তর কলকাতার আর এক বনেদি বাড়ি, কুমোরটুলির অভয়চরণ মিত্রের বাড়িতে। সেখানে তিনি ভোজ সারেন। এই বনেদি বাড়িতে পুজোর সূচনাকাল থেকেই উমাকে মাখনের নৈবেদ্য, চালের নৈবেদ্য, নানা রকমের ভাজাভুজি, লুচি, রাধাবল্লভী, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি-সহ হরেক পদ নিবেদন করা হয়। এই রেওয়াজের কারণেই মিত্রবাড়ি জায়গা করে নিয়েছে প্রবাদে।
অবশেষে দেবী দুর্গা আসেন শোভাবাজার রাজবাড়িতে। প্রবাদে বলে, এখানে নাকি দেবী রাত জেগে নাচ দেখেন। শোনা যায়, নবকৃষ্ণ দেব তাঁর বাড়ির পুজোয় নামী-দামি বাইজিদের নিয়ে আসতেন। থাকত ইংরেজ, এবং অন্যান্য অতিথিদের বিশেষ আপ্যায়নের ব্যবস্থাও। দুর্গাপুজোর সময়ে এই বাড়ির এই এলাহী মনোরঞ্জনের আয়োজনের কথা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে ক্রমশ। কিংবদন্তি হয়ে ওঠে শোভাবাজার রাজবাড়ির নাচঘরের জলসা। আর সেই থেকেই শোনা যায়, দেবী নাকি এখানে রাতভর নাচ দেখেন।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।