মহালয়ার ভোর মানে বেতার ও দূরদর্শনের প্রভাতী অনুষ্ঠান। দুই অনুষ্ঠানের মূল ভিত্তি এক, দেবী দুর্গার হাতে মহিষাসুরের সংহার। একই কাহিনি কিন্তু শ্রোতা, দর্শকের মধ্যে আজও সমান ভাবে জনপ্রিয়। আটের দশকের শেষার্ধে শ্রাব্যের পাশাপাশি দৃশ্যমাধ্যমেও উঠে এসেছিল মহিষাসুর বধ পালা। দূরদর্শনের কল্যাণে বোধনের আগে মহালয়ার দিনে যেন দেবী-দর্শন হতো। দূরদর্শনে অনেকে দুর্গার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কিন্তু দুর্গা রূপে সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় যেন ছাপিয়ে গিয়েছেন সকলকে। বাঙালির মনে আজও দুর্গা হিসাবে সংযুক্তাই উজ্জ্বল। হেমা মালিনীর মতো চিত্র তারকাও দুর্গা রূপে সংযুক্তার জনপ্রিয়তার সঙ্গে পেরে ওঠেননি। ফলে দূরদর্শনকে ফের সংযুক্তাকে ফিরিয়ে আনতে হয়েছিল।
১৯৯৪-র মহালয়ায় কলকাতা দূরদর্শনে প্রথম দুর্গা চরিত্রে কাজ করেন সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন তিনি শ্রীশিক্ষায়তন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। গুরু পিগোবিন্দন কুট্টির কাছে কথাকলি শিখতেন সংযুক্তা। গুরুই এক দিন তাঁকে কলামণ্ডলমে ডেকে পাঠান। বলেন, দূরদর্শনের কোনও অনুষ্ঠানের জন্য নৃত্য শিল্পীদের অডিশন হবে। সংযুক্তা অডিশন দেন। কিন্তু তিনি জানতেন না কোন অনুষ্ঠানের জন্য অডিশন দিলেন। এটা ১৯৯৪-র জুলাই-আগস্টের ঘটনা। তার পর প্রায় দুই মাস ধরে রিহার্সালের পর শুটিং হয়।
দেবী দুর্গা যেন বাড়ির কন্যে। বাঙালি মেয়ে রূপে দেবীর পুজো করে। সেই ভাবে সাজতেন, পোশাক পরতেন সংযুক্তা। দুর্গার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য যে চুল তাঁকে পরানো হয়েছিল, সেটাও কুমোরটুলি থেকে আনা। প্রতিমার চুলই ব্যবহার করা হয়েছিল কোনও উইগ নয়। প্রথম দিকে কুমোরটুলি থেকে মাটির হাত আনা হতো। আটটি মাটির হাত তাঁর পিঠে বেঁধে দেওয়া হতো। তার এত ভার যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম! পরে ফাইবারের হাত ব্যবহার করা হত। টলিপাড়ার ফাইট মাস্টারের কাছে যুদ্ধের কৌশল শিখেছিলেন সংযুক্তা। শ্যুটিংয়ের আগে থেকে হবিষ্যি খেতেন তিনি। দূরদর্শনে শ্যুটিংয়ের সময়তেও নিরামিষ খাবার, হবিষ্যি খেতেন।
সাজ-পোশাক, অভিনয় সব কিছুর মাধ্যমে দুর্গা হয়ে উঠেছিলেন সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়। শত শত টেলিভিশন চ্যানেলে হাজার হাজার অভিনেত্রী দুর্গার চরিত্রে অভিনয় করলেও সংযুক্তার আসন টলে যায়নি। আপামর বাঙালির কাছে আজও তিনিই টেলিভিশনের শ্রেষ্ঠ দুর্গা। বেতারের বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মতো দূরদর্শনের সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অনির্বচনীয়।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।