Advertisement
Myths About Goddess Durga

দেবী দুর্গা কে? কেন এ ভাবে পুজো করা হয় তাঁর?

সমস্ত দেবতার সম্মিলিত শক্তিতে দেবী দুর্গার সৃষ্টি। সেই দেবীই অসুরদের নিধন করে দেবতাদের বাসস্থান স্বর্গকে পুনরুদ্ধার করেন।

আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:০৩
Share: Save:

তিনি দুর্গতি নাশ অর্থাৎ সঙ্কট মোচন করেন, তাই তিনি দুর্গা!

কিন্তু কী তাঁর প্রকৃত পরিচয়?

অসুরেরা যখন দেবতাদের যুদ্ধে হারিয়ে স্বর্গ দখল করে নিল, তখন সমস্ত দেবতার সম্মিলিত শক্তিতে দেবী দুর্গার সৃষ্টি। সেই দেবীই অসুরদের নিধন করে দেবতাদের বাসস্থান স্বর্গকে পুনরুদ্ধার করেন।

তবে প্রশ্ন হল, সকল দেবতার মিলিত শক্তিতে সৃষ্ট নারীরূপী দুর্গা যদি একা সব অসুরদের যুদ্ধে হারাতে পারেন, তাহলে সকল দেবতা মিলে তা করতে পারলেন না কেন? এ ক্ষেত্রে শক্তি তো দুই ক্ষেত্রেই সমান-সমান!

আসলে হিন্দু শাস্ত্র মতে, এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা। তাঁর নিজেরই তিনটি রূপ।

ব্রহ্মা অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা

বিষ্ণু অর্থাৎ পালনকর্তা

মহেশ্বর বা শিব অর্থাৎ ধ্বংসকর্তা।

আলাদা রূপ বটে, কিন্তু আলাদা সত্ত্বা নয়। পৃথক স্ত্রী-ও নেই এঁদের। সবটাই মানুষের কল্পনা।

ঠিক এমনটাই কথিত, মা দুর্গার হাতে শুম্ভ-নিশুম্ভ নিধনের কাহিনিতে। সেই যুদ্ধে অসুরেরা দুর্গার বিরুদ্ধে রক্তবীজ নামের অসুরকে লেলিয়ে দেয়। রক্তবীজ দৈত্যের বৈশিষ্ট্য হল, তার দেহ থেকে মাটিতে যত ফোঁটা রক্ত পড়বে, ততগুলিই নতুন অসুর জন্ম নিয়ে দুর্গার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

এ হেন রক্তবীজের রক্ত যাতে মাটিতে এক ফোঁটাও না পড়ে, তার জন্য দুর্গা নিজের দেহ থেকেই কালীকে সৃষ্টি করেন। মা কালী রক্তবীজের শরীরের সমস্ত রক্ত পান করেন। নতুন অসুরের সৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়। এবং তার পরে বাদবাকি সব অসুরদের নিধন করেন দুর্গা।

যা দেখে শুম্ভ মা দুর্গাকে হুঙ্কার দেন যে, "তুমি গর্ব করো না। কারণ, তুমি অন্যের সাহায্য নিয়ে যুদ্ধে জিতেছে। উত্তরে দুর্গা বলেন, "একা আমিই এ জগতে বিরাজিত। আমি ছাড়া দ্বিতীয় কে আছে? রে দুষ্ট, এই সব দেবদেবী আমারই বিভূতি! দ্যাখ, এরা আমার দেহে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এর পর অন্যান্য সব দেবী, যাঁদের দেবী দুর্গা, মা কালীরও আগে সৃষ্টি করেছিলেন, তাঁরা সবাই দুর্গার দেহে বিলীন হয়ে যান। এবং‌ দুর্গা যুদ্ধে শুম্ভকে পরাজিত করেন।

প্রশ্ন হচ্ছে, দুর্গা কেন বলেছেন; 'এ জগতে একা আমিই বিরাজিত?' আসলে দুর্গা মানেই তো শিব বা মহেশ, আবার মহেশ মানেই পরমব্রহ্ম।

শ্রীকৃষ্ণ একই কথা বলছেন, গীতা-র সপ্তম অধ্যায়ে। যার মূল কথা, এই জগতে সব কিছুই 'আমি' হতে উৎপত্তি। জগতে এমন কিছুই নেই যাতে 'আমি' নেই।

কৃষ্ণ আবার এমন কথা বলছেন কেন? কারণ, তিনি বিষ্ণুর পূর্ণ অবতার। অর্থাৎ কৃষ্ণ মানে বিষ্ণু। যে বিষ্ণু আবার পরমব্রহ্ম।

আর ব্রহ্মা যেহেতু সৃষ্টিকর্তা, চারদিকে সর্বদা নজর রাখতে হয় তাঁকে। তাই ব্রহ্মার কাঁধের উপরে চার দিকে ঘোরানো চারটে মাথা। এবং তার সঙ্গে মিলিয়ে ব্রহ্মার নারীশক্তির সরস্বতী হলেন জ্ঞানের দেবী।

বিষ্ণু পালনকর্তা, কিন্তু কিছু পালন করতে হলে দরকার ধনসম্পদ। বিষ্ণুর তাই নারীশক্তি মা লক্ষ্মী, ধন-সম্পদের দেবী।

শিব নিজেই হলেন ধ্বংসকারী। তাঁর নারীশক্তি তাই দেবী দুর্গা। যিনি অসুরদের নিধন করেছেন।

দেবী দুর্গা কী এবং কেন, এই তার কাহিনি। বাঙালির বিশ্বাসে দুর্গার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর গোটা পরিবারকেও মর্ত্যে টেনে আনা হয় পুজোর সময়ে। লক্ষ্মী-সরস্বতী, কার্তিক-গণেশ। একচালার দুগ্গা ঠাকুরের চালচিত্রের উপরে শিব। এমনকী সব দেবদেবীর বাহনরাও থাকে দুর্গাপুজোর মূর্তিতে। দুর্গার বাহন সিংহ, লক্ষ্মীর পেঁচা, সরস্বতীর হাঁস, গণেশের ইঁদুর, কার্তিকের ময়ূরও ঠাঁই পায় দুর্গার সঙ্গে সঙ্গে। সপরিবার পুজো পান দুর্গা। ভক্তদের নিজেদের পারিবারিক কল্যাণের প্রার্থনায়!

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Myths and Facts Goddess Durga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE