প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner
Sreerampore Siddheshwari Kali

নদী থেকে পাওয়া শ্মশানকালীই শ্রীরামপুরের সিদ্ধেশ্বরী! বিগ্রহের সঙ্গে জড়়িয়ে কোন কিংবদন্তী?

ঠিক সেই সময়েই ভাসা মেঘের ভিতর থেকে পূর্ণ প্রকাশ ঘটল চন্দ্রিমার! যেন আলোর কৌটোর ঢাকনা সরিয়ে দিল কেউ। দুধ সাদা জ্যোৎস্না ছড়িয়ে পড়ল চরাচরে !

তমোঘ্ন নস্কর
শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৫ ২০:৪২
Share: Save:
০১ ১৪
ঠিক সেই সময়েই ভাসা মেঘের ভিতর থেকে পূর্ণ প্রকাশ ঘটল চন্দ্রিমার! যেন আলোর কৌটোর ঢাকনা সরিয়ে দিল কেউ। দুধ সাদা জ্যোৎস্না ছড়িয়ে পড়ল চরাচরে !

ঠিক সেই সময়েই ভাসা মেঘের ভিতর থেকে পূর্ণ প্রকাশ ঘটল চন্দ্রিমার! যেন আলোর কৌটোর ঢাকনা সরিয়ে দিল কেউ। দুধ সাদা জ্যোৎস্না ছড়িয়ে পড়ল চরাচরে !

০২ ১৪
কালো শ্রীঅঙ্গ বেয়ে পড়ছে জল। সকল আলো গিয়ে জমা হল পদপ্রান্তে। এক একটি জলদানা ধারণ করছে একেকটি আলোর টুকরো, ঝকমকে হীরককণার মতো!

কালো শ্রীঅঙ্গ বেয়ে পড়ছে জল। সকল আলো গিয়ে জমা হল পদপ্রান্তে। এক একটি জলদানা ধারণ করছে একেকটি আলোর টুকরো, ঝকমকে হীরককণার মতো!

০৩ ১৪
২০০২ সালের দোল পূর্ণিমার আগের রাত! সবাই নিদ্রাচ্ছন্ন। শ্রীরামপুরের ব্যস্ততম অঞ্চলটিও ব্যতিক্রম নয়। হেঁটে চলেছে এক বালক। চরাচরে আর কেউ নেই! থানার সামনে সান্ত্রীরা বসেন, তাঁরাও আজ নেই ! পথের কুকুরগুলোও উধাও!  বালক মনকে বোঝায়, এ নিশ্চয়ই স্বপ্নে দেখা সেই বালিকার ব্যবস্থা। না হলে, গোটা শহর, থানা বা তাদের অত বড় যৌথ পরিবারের ত্রিশ-চল্লিশ জন লোক সবাই কি ঘুমিয়ে পড়তে পারে!

২০০২ সালের দোল পূর্ণিমার আগের রাত! সবাই নিদ্রাচ্ছন্ন। শ্রীরামপুরের ব্যস্ততম অঞ্চলটিও ব্যতিক্রম নয়। হেঁটে চলেছে এক বালক। চরাচরে আর কেউ নেই! থানার সামনে সান্ত্রীরা বসেন, তাঁরাও আজ নেই ! পথের কুকুরগুলোও উধাও! বালক মনকে বোঝায়, এ নিশ্চয়ই স্বপ্নে দেখা সেই বালিকার ব্যবস্থা। না হলে, গোটা শহর, থানা বা তাদের অত বড় যৌথ পরিবারের ত্রিশ-চল্লিশ জন লোক সবাই কি ঘুমিয়ে পড়তে পারে!

০৪ ১৪
ঘটনা খানিকটা এমন। ছেলেবেলা থেকে মা-ভক্ত সেই বালক। সারাক্ষণ মা মা করে। বাড়ির কেউ সে নিয়ে মাথা ঘামায় না। কিন্তু সে রাতে  অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখল বালক। এক শ্যামাঙ্গী বালিকা এসে বলছে,  ভাগীরথীর ঘাটে যেখানে ঘূর্ণিটা আছে, তার পাশেই রয়েছে সে। বালক যেন নিয়ে আসে তাকে।

ঘটনা খানিকটা এমন। ছেলেবেলা থেকে মা-ভক্ত সেই বালক। সারাক্ষণ মা মা করে। বাড়ির কেউ সে নিয়ে মাথা ঘামায় না। কিন্তু সে রাতে অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখল বালক। এক শ্যামাঙ্গী বালিকা এসে বলছে, ভাগীরথীর ঘাটে যেখানে ঘূর্ণিটা আছে, তার পাশেই রয়েছে সে। বালক যেন নিয়ে আসে তাকে।

০৫ ১৪
ঘুম ভেঙে যায়। বালক মনে মনে বলে, “আশ্চর্য! তুমি জানো না, আমি সাঁতার জানি না? নেহাতই ছেলেমানুষ! আমি করব কী? যাও বড়দের বল গিয়ে...” আবার তন্দ্রা এসেছিল বালকের। আবার স্বপ্নে আসে সেই মেয়ে। এ বার কঠিন আদেশ, “তোকে বললাম না, আমাকে নিয়ে আয়?”

ঘুম ভেঙে যায়। বালক মনে মনে বলে, “আশ্চর্য! তুমি জানো না, আমি সাঁতার জানি না? নেহাতই ছেলেমানুষ! আমি করব কী? যাও বড়দের বল গিয়ে...” আবার তন্দ্রা এসেছিল বালকের। আবার স্বপ্নে আসে সেই মেয়ে। এ বার কঠিন আদেশ, “তোকে বললাম না, আমাকে নিয়ে আয়?”

০৬ ১৪
ঘুম ভেঙে বালক কাতর হয়ে ভাবে, “স্বপ্নে আসছ যখন, তুমি তো সবই জানো! আমাদের এত বড় যৌথ পরিবার। এত জন মানুষ, এতগুলো ঘর। কোনও না কোনও ঘরে কেউ না কেউ তো জেগেই থাকবে। দোতলা থেকে একতলায় নেমে, উঠোন পেরিয়ে সদর দরজার খিল খুলে আমাকে বাইরে বেরোতে হবে। এত বড় কাজ কি কোনও বালকের পক্ষে সম্ভব!”

ঘুম ভেঙে বালক কাতর হয়ে ভাবে, “স্বপ্নে আসছ যখন, তুমি তো সবই জানো! আমাদের এত বড় যৌথ পরিবার। এত জন মানুষ, এতগুলো ঘর। কোনও না কোনও ঘরে কেউ না কেউ তো জেগেই থাকবে। দোতলা থেকে একতলায় নেমে, উঠোন পেরিয়ে সদর দরজার খিল খুলে আমাকে বাইরে বেরোতে হবে। এত বড় কাজ কি কোনও বালকের পক্ষে সম্ভব!”

০৭ ১৪
বালক আবার ঘুমিয়ে পড়ে। আর এই বার ধাক্কা আসে। সজোরে খাট ধরে ঝাঁকিয়ে দেয় কেউ।   এ বারের আদেশ যেন কিঞ্চিৎ ক্রোধমিশ্রিত, “কী-রে তোকে বললাম, তবু তুই এলি না! ”

বালক আবার ঘুমিয়ে পড়ে। আর এই বার ধাক্কা আসে। সজোরে খাট ধরে ঝাঁকিয়ে দেয় কেউ। এ বারের আদেশ যেন কিঞ্চিৎ ক্রোধমিশ্রিত, “কী-রে তোকে বললাম, তবু তুই এলি না! ”

০৮ ১৪
 ধড়মড়িয়ে উঠে পড়ে বালক। সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে পায়ে পায়ে নেমে আসে নীচে। এক-একটি ঘর পার হয় আর ধক ধক করে বুক। কিন্তু কী আশ্চর্য, সবাই আজ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন! দরজার খিল খুলে সে বাইরে বেরিয়ে আসে। পথে নামে। এমনকি, বাড়ির সংলগ্ন অত বড় সদর থানার প্রহরীদার সেপাইরাও ঘুমে মগ্ন। বালক মনে মনে ভাবে, তাই তো! যে দিন মহামায়া কংসের কারাগারে এসেছিলেন, সে দিন এমনি করেই তো সেপাই থেকে কারারক্ষী, ঘুমিয়ে ছিল সবাই!

ধড়মড়িয়ে উঠে পড়ে বালক। সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে পায়ে পায়ে নেমে আসে নীচে। এক-একটি ঘর পার হয় আর ধক ধক করে বুক। কিন্তু কী আশ্চর্য, সবাই আজ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন! দরজার খিল খুলে সে বাইরে বেরিয়ে আসে। পথে নামে। এমনকি, বাড়ির সংলগ্ন অত বড় সদর থানার প্রহরীদার সেপাইরাও ঘুমে মগ্ন। বালক মনে মনে ভাবে, তাই তো! যে দিন মহামায়া কংসের কারাগারে এসেছিলেন, সে দিন এমনি করেই তো সেপাই থেকে কারারক্ষী, ঘুমিয়ে ছিল সবাই!

০৯ ১৪
ভাগীরথীর বুকে একটা একটা করে ধাপ নামে সে। আর দুরদুর করে ওঠে বুক। সে যে সাঁতার জানে না! মনে মনে বালক বলে, “মা তুমি দেখো, সামনেই মস্ত ঘূর্ণি। আমি সাঁতার জানি না গো...”  গোড়ালি স্পর্শ করে জল। তার পরে হাঁটু ছুঁয়ে কোমর। বালক হাত ঘোরায় চার পাশে। ভেসে আসা বাসি ফুল আর মালার তবক হাতে আসে। আশ্চর্য কিছু নয়, গঙ্গার পশ্চিম পাড় জুড়ে অজস্র মন্দির।

ভাগীরথীর বুকে একটা একটা করে ধাপ নামে সে। আর দুরদুর করে ওঠে বুক। সে যে সাঁতার জানে না! মনে মনে বালক বলে, “মা তুমি দেখো, সামনেই মস্ত ঘূর্ণি। আমি সাঁতার জানি না গো...” গোড়ালি স্পর্শ করে জল। তার পরে হাঁটু ছুঁয়ে কোমর। বালক হাত ঘোরায় চার পাশে। ভেসে আসা বাসি ফুল আর মালার তবক হাতে আসে। আশ্চর্য কিছু নয়, গঙ্গার পশ্চিম পাড় জুড়ে অজস্র মন্দির।

১০ ১৪
আবার হাত ঘোরায়। এ বার যেন হাত ঢুকে যায় কিছুর ভিতরে। সেটাকে ধরেই তুলে আনে সে। আর তুলেই শিউরে ওঠে বালক;  অর্ধগলিত পচা শব। পাঁজর ধরে সে তুলে এনেছে। সভয়ে দূরে ছুড়ে দিয়ে, ঠকঠক করে কাঁপে বালক। কেউ যেন অলক্ষ্যে, অদৃশ্যে আশ্বস্ত করে তাকে। আবার হাত ঘোরায় বালক। আর তখনই হাত স্পর্শ করে কিছু। এ অতিন্দ্রীয় স্পর্শ! মন বলে, হ্যাঁ এটাই... তুলে আনে হাত।

আবার হাত ঘোরায়। এ বার যেন হাত ঢুকে যায় কিছুর ভিতরে। সেটাকে ধরেই তুলে আনে সে। আর তুলেই শিউরে ওঠে বালক; অর্ধগলিত পচা শব। পাঁজর ধরে সে তুলে এনেছে। সভয়ে দূরে ছুড়ে দিয়ে, ঠকঠক করে কাঁপে বালক। কেউ যেন অলক্ষ্যে, অদৃশ্যে আশ্বস্ত করে তাকে। আবার হাত ঘোরায় বালক। আর তখনই হাত স্পর্শ করে কিছু। এ অতিন্দ্রীয় স্পর্শ! মন বলে, হ্যাঁ এটাই... তুলে আনে হাত।

১১ ১৪
তার পরে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! স্নান সেরে পাথরের বালিকা দেবী শ্যামা উঠে আসেন। পূর্ণিমার আগের রাত, পরিপূর্ণ চাঁদের আলো। দেবীর কালো গা থেকে ঝরে পড়া জল দানারা ভাস্বর হীরককণা হয়ে ওঠে আলো ধরে।

তার পরে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! স্নান সেরে পাথরের বালিকা দেবী শ্যামা উঠে আসেন। পূর্ণিমার আগের রাত, পরিপূর্ণ চাঁদের আলো। দেবীর কালো গা থেকে ঝরে পড়া জল দানারা ভাস্বর হীরককণা হয়ে ওঠে আলো ধরে।

১২ ১৪
দেবীকে মাথায় করে মহানন্দে ঘরে ফিরে আসে বালক। কী আশ্চর্য! এত ক্ষণ পথ শূন্য ছিল। এখন দুই সারমেয় পিছু নিল। তাকে বাড়ি অবধি এসে এগিয়ে দিয়ে গেল। যেন সাক্ষাৎ মহাকাল দেখে গেলেন তাঁর কর্ত্রীর ঘরখানি।  যেমন করে মেয়ে দেওয়ার আগে বাবা দেখে যায় তার মেয়ের ঘর...

দেবীকে মাথায় করে মহানন্দে ঘরে ফিরে আসে বালক। কী আশ্চর্য! এত ক্ষণ পথ শূন্য ছিল। এখন দুই সারমেয় পিছু নিল। তাকে বাড়ি অবধি এসে এগিয়ে দিয়ে গেল। যেন সাক্ষাৎ মহাকাল দেখে গেলেন তাঁর কর্ত্রীর ঘরখানি। যেমন করে মেয়ে দেওয়ার আগে বাবা দেখে যায় তার মেয়ের ঘর...

১৩ ১৪
সে দিন ছিল দোলপূর্ণিমার আগের দিন। এর ঠিক পনেরো দিন পরে অমাবস্যা তিথিতে সেই বালকের পূজা নিয়ে প্রতিষ্ঠা নিলেন মা।

সে দিন ছিল দোলপূর্ণিমার আগের দিন। এর ঠিক পনেরো দিন পরে অমাবস্যা তিথিতে সেই বালকের পূজা নিয়ে প্রতিষ্ঠা নিলেন মা।

১৪ ১৪
শ্রীরামপুর থানার পাশে শ্রীরামপুরের ছোট মা সিদ্ধেশ্বরী। আজও প্রতিটি পূজায় অজস্র ভক্ত সমাগম হয় সেখানে। মা সিদ্ধেশ্বরীর দরবার লাগে সেখানে। নদী থেকে পাওয়া দেবী শ্মশানকালী হলেন সবার মা। তথ্যঋণ: স্বামী পরমানন্দ গিরি মহারাজ।  (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।

শ্রীরামপুর থানার পাশে শ্রীরামপুরের ছোট মা সিদ্ধেশ্বরী। আজও প্রতিটি পূজায় অজস্র ভক্ত সমাগম হয় সেখানে। মা সিদ্ধেশ্বরীর দরবার লাগে সেখানে। নদী থেকে পাওয়া দেবী শ্মশানকালী হলেন সবার মা। তথ্যঋণ: স্বামী পরমানন্দ গিরি মহারাজ। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy