প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

রাজবাড়ি থেকে আসে ১৫ টাকা অনুদান, পুরুষরা নারী বেশে জল আনে - কৃষ্ণনগরের মালোপাড়ার জগদ্ধাত্রী পুজো এক অনন্য ঐতিহ্য!

এই পুজোর নেপথ্যে রয়েছে রাজা ও তাঁর প্রজাদের মধ্যে গভীর বন্ধনের ইতিহাস।

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:২৯
সংগৃহীত চিত্র।

সংগৃহীত চিত্র।

নদিয়ার কৃষ্ণনগরে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের হাত ধরে বাংলায় প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা হয়। সেখানেই কালক্রমে স্থানীয় মালো - অর্থাৎ - মৎস্যজীবী সম্প্রদায় শুরু করে এক ব্যতিক্রমী মাতৃআরাধনা। এই পুজো, যা 'মা জলেশ্বরী'-র পুজো নামেও পরিচিত, আজও বহন করে চলেছে কিছু শতবর্ষ প্রাচীন ও ঐতিহ্যপূর্ণ প্রথা। যা এটিকে কৃষ্ণনগরের অন্যান্য জগদ্ধাত্রী পুজো থেকে স্বতন্ত্র পরিচয় দিয়েছে।

১. মালোপাড়ায় পুজোর সূত্রপাত - মহারাজার সহানুভূতি ও ১৫ টাকার কাহিনি:

কী ভাবে শুরু: মালো সম্প্রদায় মূলত রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী প্রতিমা নিরঞ্জনের দায়িত্ব পালন করত। এক সময় এলাকার এই মৎস্যজীবীরা রাজবাড়ির মতো নিজেদের পাড়ায় জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করার ইচ্ছা প্রকাশ করে মহারাজের কাছে আবেদন জানান। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর অনুগত প্রজাদের কথায় সম্মতি দেন এবং পুজোর প্রচারে সহায়তা করেন।

১৫ টাকার সেই রেওয়াজ: পুজোর খরচ নির্বাহের জন্য রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সেই সময় মালোদের ১৫ টাকা অনুদান দেন। সেই অনুদানের রেওয়াজ আজও চলে আসছে। পুজো কমিটির কর্তারা জানান, আজও রাজবাড়ি (বর্তমান উত্তরসূরিদের) থেকে এই প্রতীকী ১৫ টাকা না এলে মালোপাড়ার বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পুজোর কাজ শুরুই হয় না। যদিও বর্তমানে এই অর্থের কোনও মূল্য নেই। কিন্তু, এটি রাজা ও তাঁর প্রজাদের মধ্যের দীর্ঘ দিনের সম্পর্কের ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। (যদিও অন্য মতে, রাজা সতীশচন্দ্র রায়ের দ্বিতীয় রানি ভুবনেশ্বরী দেবী এই ১৫ টাকা দিয়ে পুজোর শুভ সূচনা করেছিলেন।)

২. ধুনো পোড়ানোর প্রথা - আঁশটে গন্ধ ঢাকতে এক মণ ধুনো:

মালোপাড়ার জগদ্ধাত্রী পুজোর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল, ধুনো পোড়ানো। এটি শুধু কোনও সাধারণ রীতি নয়, এর নেপথ্যে রয়েছে এক লোককথা।

কারণ: প্রচলিত আছে, এক বার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই জেলেপাড়ায় পুজো দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু মৎস্যজীবী এলাকা হওয়ায় চার পাশে মাছের তীব্র আঁশটে গন্ধে তিনি বেশ অস্বস্তি বোধ করেন। তাই, মহারাজাকে স্বস্তি দিতে পুজোর আয়োজকরা ধুনো পুড়িয়ে সেই গন্ধে আঁশটে গন্ধ ঢাকার বন্দোবস্ত করেন।

রীতি: সেই দিন থেকে রাজা প্রতি সম্মান জানাতে এবং পরিবেশ শুদ্ধ রাখতে আজও নবমী তিথিতে এই পুজোয় ধুনো পোড়ানোর রীতি চলে আসছে। ভক্তরা তাঁদের মানত পূরণ হলে মাথায় বা হাতে ধুনুচি/সরা রেখে ধুনো পোড়ান। অনেক সময় প্রায় এক মণ ধুনো পোড়ানো হয় এই পুজোয়!

৩. পুরুষদের নারী বেশে জল আনা - এক স্বতন্ত্র ঐতিহ্য:

মালোপাড়ার এই পুজোর এক অদ্ভুত এবং ব্যতিক্রমী প্রথা হল — দেবীর ঘট স্থাপনের জন্য পুরুষরাই শাড়ি পরে নারী সেজে জলঙ্গী নদীতে জল ভরতে যান। এই রীতিকে 'জল সাজা' বলা হয়।

কারণ/বিশ্বাস: এই প্রথার সঠিক উৎস জানা না গেলেও, প্রচলিত মত হল -

ধর্মীয় কারণ: পুজো কমিটির কোনও কোনও সদস্যের মতে, এখানে ধর্মরাজ শিব হিসাবে পূজিত হন। শিবের শরীর থেকে নারীর সৃষ্টি হয়েছিল বলে মনে করা হয়। দেবতাকে তুষ্ট করতে এবং নারীশক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক সময় স্থানীয় নিম্নবর্গের মানুষরা এই প্রথা চালু করেন।

ঐতিহ্য: এটি বহু পুরনো রীতি। পাড়ার যুবকেরা মধ্যরাতে ঘোমটা দেওয়া বউ সেজে কাঁখে কলসি নিয়ে ব্যান্ড পার্টি ও ঢাকের বাজনার সঙ্গে নদীঘাটে যান। এই প্রথা মাতৃশক্তির প্রতি সম্মান জানানোর একটি রূপ বলে বিবেচিত হয়।

কৃষ্ণনগরের মালোপাড়ার মা জলেশ্বরীর এই পুজো কেবল একটি বারোয়ারি উৎসব নয়। এটি নদিয়ার এক প্রাচীন ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতির জীবন্ত দলিল। যেখানে আজও রাজকীয় অনুদান, প্রতীকী পবিত্রতা এবং ব্যতিক্রমী ঐতিহ্য এক সুতোয় বাঁধা।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Jagadhatri Puja 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy