তিনি দুঃখ, দুর্গতি নাশ করেন, তাই তিনি দুর্গা। বাড়ির কেউ যাত্রা করলে, বড়রা বলেন, ‘দুগ্গা দুগ্গা’। প্রার্থনা থাকে, সফর নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হোক। যাত্রা শুভ হোক। বিশ্বাস থাকে, যাত্রাপথে ঘরের মানুষটিকে আপদ-বালাই স্পর্শ করতে পারবে না। কারণ, দুর্গা সহায় হবেন। দুর্গাকে এতটাই ভরসা বাঙালির। দেবী পার্বতী কী করে দুর্গা হলেন? উত্তর রয়েছে স্কন্দ পুরাণে।
অসুর হিরণ্যাক্ষরের বংশধর ছিলেন রুরু, সেই রুরুর পুত্র দুর্গম অসুর। সমুদ্রমন্থনে অমৃতের ভাগ জোটেনি অসুরদের। সেই ক্ষোভ সঙ্গে পিতা রুরুর মৃত্যুর ক্রোধে দেবতার ওপর প্রতিশোধ নিতে দুর্গম মরিয়া হয়ে ওঠেন। ত্রিলোকের অধিশ্বর হওয়ার নেশায় দুর্গম বেদ দখলের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, ব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় জ্ঞানের ভাণ্ডার যে বেদ। অসুরকুলগুরু শুক্রাচার্যের নির্দেশে দুর্গম অসুর ব্রহ্মার তপস্যা শুরু করেন। তুষ্ট হন ব্রহ্মা। অমরত্ব এবং চার বেদের সম্পূর্ণ অধিকারী হওয়ার বর চেয়ে বসেন দুর্গম। ব্রহ্মা, দুর্গমকে চার বেদের অধিকার দেন। যদিও অমরত্বের বর তিনি দেননি। কেবল বলেছিলেন, কোনও পুরুষ দুর্গমকে বধ করতে পারবে না।
বর মিলতেই দুর্গম অসুর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন, দেবতাদের কাছ থেকে স্বর্গ ছিনিয়ে নেন। দেবতারা আশ্রয় নেন সুমেরু পর্বতে। ত্রিলোকে নেমে আসে দুর্দশা। দেবতারা তখন শিবের দ্বারস্থ হন। শিবের নির্দেশে দেবী পার্বতী অসুরদলনী উগ্র রূপ ধারণ করেন। বিন্ধ্যাচলে ১০ দিন ধরে দেবীর সঙ্গে দুর্গম অসুরের যুদ্ধ চলে। অবশেষে দুর্গম অসুরের সংহার করেন দেবী। বেদের অধিকার ফিরে পান দেবতারা। দেবরাজ ইন্দ্র ফিরে পান স্বর্গের অধিকার। ত্রিলোকে শান্তি ফিয়ে আসে। দুর্গম অসুরকে বধ করেই দেবী হয়ে ওঠেন দুর্গা।
‘দেবীপুরাণ’-এ রয়েছে, দেবী দেবতাদের ‘দুর্গম’ শত্রু-সংকট-ভয় থেকে রক্ষা করেছিলেন বলেই তাঁর নাম দুর্গা। ‘শব্দকল্পদ্রুম’ জানাচ্ছে, ‘দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা’ অর্থাৎ যিনি ‘দুর্গ’ নামের অসুরের নিধন করেছিলেন, তিনিই দুর্গা।
শাস্ত্রে রয়েছে, ‘‘দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ। উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত। রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ। ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।’’ এর মাধ্যমে ‘দুর্গা’ শব্দের প্রতি অক্ষরের তাৎপর্য জানা যায়। ‘দ’-র অর্থ দৈত্যনাশ, ‘উ’ অক্ষরটি বিঘ্ন নাশকে নির্দেশ করে, ‘রেফ’ বা ‘র’-র অর্থ রোগনাশ, ‘গ’-র অর্থ পাপনাশ, শেষের আ-কার-র অর্থ ভয় ও শত্রুনাশ। অর্থাৎ দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রুকে নাশ করেন যিনি, তিনিই দুর্গা। দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রু এই পাঁচটি বস্তু মানুষের দুর্গতির কারণ। এদের নাশ করেই দেবী দুর্গা দুর্গতিনাশিনী হয়েছে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।