প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

যে মহিষাসুরমর্দিনী ছাড়া মহালয়ার ভোর হয় না, জানেন তার জন্ম হল কী ভাবে? কী ভাবেই বা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ পেলেন শ্লোক পাঠের দায়িত্ব?

কায়স্থের গলায় শ্লোক, স্তোত্র, চণ্ডীপাঠ! ব্রাহ্মণ সমাজ যে তেড়ে আসবে! অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু বাণীকুমার অনড় রইলেন।

তমোঘ্ন নস্কর

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৩৪
প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

সে এক অদ্ভুত সময়। ভারতী বেতারে সদ্য জয়েন করা স্টাফ রাইটার তরুণটি প্রাণ ঢেলে লিখছেন ‘বসন্তেশ্বরী’। তাঁর মন ভারাক্রান্ত! পুরো সংসারের চাপ কাঁধে এসে পড়েছে। মাত্র ক’দিন আগেই ঘটেছে পিতৃবিয়োগ। জলালাবাদের পাহাড়ে মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে লড়তে মৃত্যুবরণ করেছেন পিতা বিধুভূষণ ভট্টাচার্য। মার্কণ্ডেয় চণ্ডী থেকে অনুবাদের কালে তাই শাস্ত্রজ্ঞানের সঙ্গে অজান্তেই মিশে গেল আবেগ ও হৃদয় নিংড়োনো আকুতি। বুঝতেই পারছেন মানুষটি কে? তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর কিংবদন্তি অনুষ্ঠান ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র রচয়িতা বাণীকুমার।

১৯৩১ সালের মার্চ মাসে বাসন্তী-অন্নপূর্ণা পুজোর কালে সরাসরি সম্প্রচারিত হল ‘বসন্তেশ্বরী’। প্রযোজনা ও চণ্ডীপাঠে রইলেন বাণীকুমার, শ্লোক পাঠে হরিশচন্দ্র বালী ও সুরকার রাইচাঁদ বড়াল। অনুষ্ঠানটি প্রভূত সাফল্য লাভ করে। তৎকালীন অধিকর্তা নৃপেন মজুমদার ঠিক করেন, এই অনুলিখনের পাশাপাশি আরও কিছু স্তোত্র ও শ্লোক সংযোজন করে দুর্গাষষ্ঠীর দিনে আর একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে। নাম হবে, ‘মহিষাসুর বধ, শারদ বন্দনা’।

তত দিনে নৃপেন মজুমদারের হাত ধরে আকাশবাণীতে প্রবেশ করেছে এক নতুন ছোকরা। গলার স্বরে বেশ ভার, রেডিয়োতে পাঠ করার মতো মিহি, সুরেলা কণ্ঠ তার নয়। এমন গলার জন্য দুই-তিন বার বাতিল হওয়ার পরেও শেষে তার উদ্যম আর জেদ দেখে তাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। রাক্ষসখোক্কস, ভূতপ্রেত, ভয় ধরানো অট্টহাস্য ইত্যাদি বিচিত্র গলা করার জন্যই তার ডাক পড়ে। নাম বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। বেশ ভাল বাড়ির সন্তান, তবে কায়স্থ।

বাণীকুমার তাঁর মননে শ্লোক-স্তোত্র পাঠের জন্য যে গলাটি ভেবে রেখেছেন, তার জন্য যেন ওই ছেলেটি আদর্শ। কর্তৃপক্ষ বাণীকুমারের এই সিদ্ধান্ত শুনে চিন্তায় পড়ল। কায়স্থের গলায় শ্লোক, স্তোত্র, চণ্ডী পাঠ! ব্রাহ্মণ সমাজ যে তেড়ে আসবে! অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু বাণীকুমার অনড় রইলেন। তিনি ছেলেটিকে দিয়েই রিহার্সাল করিয়ে দেখেছেন। অদ্ভুত এক আবেগ আছে ওই কণ্ঠে। বাণীকুমার প্রযোজক। তিনি কারণ দর্শালেন,

“ সরাসরি সম্প্রচার হবে অনুষ্ঠান। আন্দাজ করে যন্ত্র বাজাতে হবে। তাই সারেঙ্গীতে মুনশি, চেলিতে আলি এবং হারমোনিয়ামে খুশি মহম্মদ ছাড়া ভরসা করা দুষ্কর। সেটা মেনে নিলে এ-ও মেনে নিতে হবে।”

শোনা যায়, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কাছেও সম্মতি নিয়েছিলেন বাণীকুমার। কারণ তিনি জানতেন, এর ফল খানিকটা হলেও ভুগতে হবে তাকে। কিন্তু শৈশব থেকেই যে স্বপ্ন দেখে এসেছে কণ্ঠশিল্পী হওয়ার, কিন্তু রোগের কারণে বরাবরই বঞ্চিত থেকেছে, তার এই সুযোগ অবহেলা করার অবকাশ ছিল না।

অতএব সম্প্রচারিত হল সেই অনুষ্ঠান। প্রথম বার দুই ঘণ্টা পনেরো মিনিট দীর্ঘ এক অনুষ্ঠান। অথচ বাঙালি আটকে রইল রেডিয়োর সামনে। সে এক অন্য রকম ষষ্ঠী, এক অন্য সকাল।

ভারতীয় বেতার ইতিহাসে চিরকালের জন্য স্থাপিত হল এক মাইলফলক।

১৯৩২ সাল থেকে এই অনুষ্ঠান সরাসরি মহালয়ার দিন সম্প্রচার হওয়া শুরু হল। ১৯৩২-৩৬ সাল পর্যন্ত শ্লোক, স্তোত্র ও বর্ণনার নিরন্তর সংযোজন ও বিয়োজন করে অনুষ্ঠানটি দাঁড়ায় এক ঘণ্টা উনত্রিশ মিনিটে।

১৯৩৬ সালে পাকাপোক্ত নাম হল ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। তত দিনে রাইচাঁদ বড়ালের সঙ্গে সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন পান্নালাল ভট্টাচার্য। আজ ৯৩ বছর হল, সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Mahalaya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy