না, না! তারও টোটকা আছে জ্যোতিষ শাস্ত্রবিদদের কাছে। জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে, শুক্রের অবস্থান যাঁদের গ্রহ-নক্ষত্রে খারাপ, তাঁরা সব সময় সঙ্গে যে কোনও একটা রুপোর সামগ্রী রাখুন। যেমন, রুপোর আংটি পরুন। বা, মানি ব্যাগে একটা রুপোর মুদ্রা। আর সব সময় সঙ্গে একটা সাদা রুমাল থাকুক। অন্য কোনও রঙের নয়, সব সময় সাদা রুমাল ব্যবহার করুন। যখনই পারবেন, মাতৃস্থানীয়া মহিলাকে যে কোনও উপায়ে সেবা করুন। তা হলে শুক্রের খারাপ প্রভাব থেকে জীবনে রক্ষা মিলতেই পারে। পুজোয় প্রেমে পড়বেন।
ভেনাস ওরফে শুক্র গ্রহ মানেই ভালোবাসা, প্রেম, পরিণয়ের দেবতা। অথচ আবার হিন্দু জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে শুক্র হল শত্রু গ্রহ। ভালবাসা-প্রেমে শত্রুতা? হ্যাঁ, সেটাও তো যুগ-যুগান্ত চলে আসছে। প্রেমে ব্যর্থতা মানেই তো গুপ্ত শত্রুতা! যাকে পেলাম না, যে আমার হল না, তার ক্ষতি করে দাও। এর চেয়ে বড় শত্রুতা আর কী হতে পারে? আসলে শুক্র নিয়ে মহাভারতের ব্যাখ্যাই বোধ হয় সঠিক! তাতে বলা আছে, শুক্র নিজেকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। একটা ভাগ দেবতাদের জ্ঞানের উৎস। পিতামহ ভীষ্মের রাজনৈতিক জ্ঞানের গুরু ছিলেন শুক্র। এবং আরেকটা ভাগ অসুরদের জ্ঞানের উৎস।
বৈদিক পুরাণ মতে, যোগের আচার্য শুক্র অসুর তথা দৈত্যদের দেবতা। শুক্র-র অর্থ নির্মল, স্বচ্ছ, উজ্জ্বল, প্রাচীন ঋষি ও দেবতা। নব গ্রহের অন্যতম গ্রহ। সূর্য থেকে দূরত্বের বিচারে শুক্র সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ। আবার শুক্র-কে বলা হয়, পৃথিবীর ‘বোন গ্রহ’! যেহেতু, গ্রহ-শাস্ত্র অনুসারে পৃথিবী ও শুক্রের মধ্যে গঠনগত উপাদানে আর আচার-আচরণে বড় মিল আছে।
সপ্তাহের একটি দিন শুক্রর নামে শুক্রবার। যিনি সপ্তর্ষি মন্ডলের অন্যতম। ভৃগু মুনির পুত্র শুক্র-কে হিন্দু ধর্মগ্রন্থে শুক্রাচার্য, অসুরাচার্য বলে উল্লেখ করা আছে। দৈত্যগুরু শুক্রের গায়ের রঙ সাদা। বাহন রথ, ঘোড়ায় টানা। রথের সামনে আগুন রঙের ৮টি ঘোড়া বাঁধা। শুক্র-র কোনও উপগ্রহ নেই। এর অধিদেবতা ইন্দ্রানী। দুই স্ত্রী— গো এবং জয়ন্তী। দুই স্ত্রীর গর্ভে মোট ৫ সন্তান।
শুক্রর শুভ প্রভাবে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে। বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়। কর্মক্ষেত্রে উন্নতি অনিবার্য। সামাজিক সম্মান প্রাপ্তি ঘটে। রসায়ন বিদ্যায় বিরাট সাফল্য লাভ হয়। আবার শুক্রের অশুভ প্রভাবে নানান রোগভোগ শরীরে লেগেই থাকে। অনেক চেষ্টাতেও জীবনে বাবা-মা হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয় না। পারিবারিক সমস্যা এবং আর্থিক ঝামেলা ভোগ করতে হয়। শারীরিক ভাবে কিডনি, মূত্র সম্পর্কিত রোগভোগ, গলার সমস্যায় ভোগার আশঙ্কা থাকে।
এই মন্ত্রোচ্চারণে মনুষ্য জীবনের আয়ু বাড়ে। সৃষ্টিশীল কাজে উন্নতি ঘটে। জীবনে সম্মান লাভ ও বৃদ্ধি হয়। শরীর ও মন সবসময় চাঙ্গা থাকে। মনের মতো জীবনসঙ্গী পাওয়া যায় ব্যবসায় চূড়ান্ত সফলতা আসে। শুক্র লগ্নের জাতক-জাতিকারা খুব শৌখিন হয় সাধারণত। সব সময় ফিটফাট থাকতে, চার পাশের সব কিছু ফিটফাট রাখতে পছন্দ করে। শুক্র বিবাহের উপর প্রভাব বিস্তার করে। দাম্পত্য জীবনে সুখ পাওয়া-না পাওয়া সেই ব্যক্তির গ্রহ-নক্ষত্রে শুক্রের ভাল-মন্দ অবস্থানের উপর নির্ভরশীল।
প্রতিটি গ্রহের মিত্র ও শত্রু গ্রহ থাকে। সে ভাবে শুক্রর মিত্র গ্রহ বুধ ও শনি। শত্রু গ্রহ রবি ও চন্দ্র। শুক্রর শত্রু গ্রহের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার টোটকা হল, সব সময় সঙ্গে একটা ছোট হলেও রুপোর সামগ্রী রাখুন। যেমন, রুপোর আংটি পরা যেতে পারে। অথবা, মানি ব্যাগে একটা রুপোর কয়েন রাখতে পারেন। আর শুক্র যাঁদের জীবনে নিম্নগামী, তাঁরা অবশ্যই সবসময় সাদা রুমাল সঙ্গে রাখুন, সাদা রুমাল ব্যবহার করুন। আর যখনই সুযোগ পাবেন মাতৃস্থানীয়া মহিলাকে যে উপায়েই হোক, সেবা করুন। এবার দেখুন, শুক্র দেবতা আপনার জীবন মঙ্গলময় করেন কি না! এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy