প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

মা শুভদুর্গা আসলে কে? সর্বত্রই তিনি কিন্তু দুর্গার ভিন্ন রূপ হিসেবে পরিচিতা

চট্টগ্রাম, বগুড়া, মময়মনসিংহ বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন কথায় বিভিন্ন ভাষ্য। কিন্তু সর্বত্রই ইনি দুর্গার ভিন্ন রূপ, পার্বতী বলেই পরিচিতা। যিনি মানুষের কল্যাণে নিজেই নিজেই নিজের ব্রত প্রচার করেন।

তমোঘ্ন নস্কর

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:২৮

এই প্রসঙ্গে খুব স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন জাগতেই পারে পৌরাণিক দূর্গার সঙ্গে চন্ডীর যোগসূত্র থাকলেও তাঁদেরকে লৌকিক দুর্গা বলে অভিহিত করা হচ্ছে কেন?

ক্ষেত্র সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, বঙ্গজ প্রাচীন সংস্কৃতিতে এই সমস্ত লোকিক দেবদেবীরা তাদের ঐশী, দৈবী সংযোগ ছাড়াই মানুষের দেবতা বা লোকেশ্বর হয়ে যুগ যুগ ধরে রয়ে গিয়েছেন।

মানুষের মনে স্থির নির্দিষ্ট বিশ্বাস ছিল— ‘‘হারালে পায়, ম’লে জিওয়, নিধনের ধন হয়, অপুত্রার পুত্র হয়, খাঁড়ায় কাটে না, আগুনে পোড়ে না, জলে ডোবে না, কাটা মাথায় জোড়া লয়, সতীন মরে ঘর হয়, রাজা মরে রাজ্য পায়। ” (প্রবচন)

পৌরাণিক ধর্মগুলি যখন ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠা পেতে লাগল, পৌরাণিক মতবাদগুলি যখন ধীরে ধীরে ভারী হয়ে প্রভাব বিস্তার করতে লাগল, তখন পৌরাণিক এবং লৌকিকের মধ্যে একটা অদৃশ্য সমঝোতা তৈরি হয়ে গেল। মানুষের মনের ভিতরেই অনেক লৌকিক দেবদেবী পৌরাণিকত্বের আড়ালে নিজেদেরকে লুকিয়ে এক হয়ে গেলেন।

আবার, অনেক পৌরাণিক ধারণা অবস্থা প্রেক্ষিতে গড়ে ওঠা লৌকিকের সাথে মিলেমিশে গেল। বিভিন্ন লৌকিক দুর্গা দেবী চণ্ডিকা, দেবী সিংহবাহিনী দেবী গনেশ জননী। তাঁরা ভাবনায় শিব-দুর্গার সঙ্গে এক আবার কর্মে, ব্রত যাপনে ভিন্নও বটে।

‘মা দুর্গা’ নামটি মঙ্গলদায়িনী শক্তি হিসেবে বাঙালির মননের গভীরে গেঁথে গিয়েছে। তার আরেকটি প্রকৃষ্টতম উদাহরণ হল, মা শুভদুর্গার পূজা। মা শুভদুর্গা মায়ের একটি লৌকিক রূপ হিসাবে ধরা হয়।

মা শুভদুর্গা অতি সামান্যেই তুষ্ট। যে কোনও দিন, যে কোনও মাস বা শুভ তিথির দিবা ভাগে স্নান সেরে পরিচ্ছন্ন গাত্রে, শুদ্ধ মনে একটি মাটির সরায় কলা পাতায় দুধ-কলা আর চালের নৈবেদ্য সাজিয়ে মা’কে এক মনে স্তব করলেই মা এসে ভক্তের কল্যাণ করেন, এমনই বিশ্বাস।

বলবেন, ‘যাহ, এমন আবার হয় নাকি! মায়ের পূজা কোনও নির্দিষ্ট দিন- তিথি নেই!

মায়ের ব্রত কথাটিই যে এমন— ” বিপদের দিনে চরম আকুল হয়ে মাকে ডাকলেই তিনি সাড়া দেন।”

আসুন জানা যাক, ‘‘সে এক সময়। সে সময়ে মস্ত সব রাজা-রাজড়াদের বাস। গরিব বিধবা এক ব্রাহ্মণী আপনার সন্তানকে নিয়ে অতি কষ্টে সুতো কেটে দিন অতিবাহিত করেন। সন্তানটির বৃদ্ধি কাল, তার বন্ধুবান্ধবদের দেখে আর বিবিধ ভালমন্দ, মাছ মাংস খাবার লোভ করে। কিন্তু তাদের এমনই অবস্থা, যে শাক পাতা জোগাড় করতেই দিন সাঙ্গ হয়। একদিন সে ছেলে ব্রাহ্মণীর কাছে কেঁদে পড়ল। ব্রাহ্মণীর অত পয়সা কোথায়? অনেক কষ্টে এক মেছুনিকে এই শর্তে রাজি করালেন যে, মাছের ঝোলটি রাঁধা হয়ে গেলেই সেই ঝোলটি তুলে রেখে ভাজা মাছটি দিয়ে দেবেন। যেমন কথা তেমন কাজ। দুপুরবেলা খেতে বসে সেই স্বাদ গ্রহণ করে, ছেলে তো আরও লালায়িত হয়ে পড়ল।না জানি মাছের স্বাদ কেমন হবে? কিন্তু ওই যে, কথা আছে না, লোভে পাপ আর পাপে পাপে মৃত্যু। ছেলেটিও তাই করল।

একদিন রাজার হাঁসগুলি যখন চরতে বেরিয়েছে সে, একটি হাঁসকে হত্যা করে তার মাংস খেল। এ দিকে সেই দৃশ্য ধরা পড়ল রাজার এক বিশ্বস্ত কর্মচারীর চোখে। রক্ষীর দল ছেলেকে নিয়ে হাজির করল রাজার সম্মুখে। এমন ভীষণ পাপের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ব্রাহ্মণীর কাছে খবর যাওয়া মাত্র ব্রাহ্মণী আকুল হয়ে কেঁদে পড়লেন। সেই ভর দুপুরে আলুথালু বেশে ঘরের কোণে মা শুভ-দুর্গার নাম করতে বসলেন।

এক দিকে ব্রাহ্মণী মা দুর্গার নাম করেন। অন্য দিকে এ গ্রামের পথে লাঠি হাতে, জটাধারী বৃদ্ধা বার হলেন ভিক্ষায়। ভিক্ষা করতে করতে তিনি এসে হাজির হলেন সেই হাঁসের পালকের কাছে। পথের থেকে দুর্বাঘাস তুলে, পুকুরের জল নিয়ে ছড়া দিতেই হাঁস জীবন ফিরে পেল।

রাজার কাছে ১০৮ টি হাঁসের সংখ্যাটি ঠিক থাকায়, সেই ছেলেটিও নির্দোষ প্রমাণ পেয়ে ছাড়া পেয়ে গেল। উপরন্তু দরিদ্র ব্রাহ্মণকে পীড়া দেবার জন্য মার্জনা হিসাবে, রাজকন্যা ও অর্ধেক রাজত্ব দিলেন রাজা।

সব নিয়ে জাঁকজমক করে বাড়ি ফিরে, ব্রাহ্মণীর কাছে সন্তান এসে শোনে মা শুভদুর্গার কথা। কাঁদতে কাঁদতে সে বেরলো দুর্গা মায়ের খোঁজে।

বটগাছের তলায় মা দুর্গা জটাজুটো ধারী, নড়ি হাতে বৃদ্ধার বেশে দর্শন দিলেন। বললেন, ‘‘আমিই শুভদুর্গা। বৃক্ষে আমার অধিষ্ঠান। ভক্তি ভরে সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও সমপর্ণে আমাকে ডাকলেই সাড়া দেব।’’

এই ভাবেই ধরাধামে প্রচার পায় ‘মা শুভ দুর্গা’ র ব্রত।

চট্টগ্রাম, বগুড়া, মময়মনসিংহ বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন কথায় বিভিন্ন ভাষ্য। কিন্তু সর্বত্রই ইনি দুর্গার ভিন্ন রূপ, পার্বতী বলেই পরিচিতা। যিনি মানুষের কল্যাণে নিজেই নিজেই নিজের ব্রত প্রচার করেন। অধুনা প্রায় লুপ্ত হলেও, আজও বহু পরিবারের পিদিমের আলোয়, ভক্তি ও সমর্পণে মায়ের অধিষ্ঠান।

তথ্যসূত্র: লৌকিক দুর্গা (কামিনী কুমার রায়), বাংলা মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস (আশুতোষ ভট্টাচার্য)

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Myths and Beliefs Devi Durga
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy