নবরাত্রি হল ন’টি রাতের উদ্যাপন। বছরে চারটি নবরাত্রি উদ্যাপিত হয়– চৈত্র ও আশ্বিনে সাধারণ নবরাত্রি এবং আষাঢ় ও মাঘে গুপ্ত নবরাত্রি। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের প্রতিপদ থেকে নবমী তিথি পর্যন্ত ন’দিন ধরে দেবী দুর্গার ন’টি রূপের পুজো করা হয়। শরতের এই নবরাত্রিকে শারদীয় নবরাত্রিও বলা হয়। দুর্গার এই ন’টি রূপের নামকরণ করেছিলেন প্রজাপতি ব্রহ্মা। নবরাত্রির এক একটি তিথিতে দেবী দুর্গা এক এক রূপে পূজিতা হন।
কোন কোন রূপে পুজো পান দেবী? কী নাম তাদের?
শৈলপুত্রী: প্রতিপদে দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয় শৈলপুত্রী রূপে। দেবী শৈলপুত্রী গিরিরাজ হিমালয়ের দুহিতা। এই রূপে দেবী মহাদেবের অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে পুজো পেয়ে থাকেন। দেবীর ডান হাতে থাকে ত্রিশূল এবং বাঁ হাতে পদ্ম, তিনি ষাঁড়ের পিঠে আসীন।
ব্রহ্মচারিণী: দ্বিতীয়ায় ব্রহ্মচারিণী রূপে পূজিতা হন দেবী দুর্গা। ব্রহ্মচারিণী অর্থাৎ ব্রহ্মে যিনি পদচারণা করেন বা বিরাজ করেন। দেবী ব্রহ্মচারিণী সিদ্ধি, শান্তি এবং সমৃদ্ধির দেবী। তাঁর হাতে থাকে কমণ্ডলু এবং জপ মালা।
চন্দ্রঘণ্টা: তৃতীয়ায় দেবী দুর্গার পুজো হয় চন্দ্রঘণ্টা রূপে। দেবী চন্দ্রঘণ্টা সৌন্দর্য এবং অসীম সাহসের প্রতীক। তাঁর কপালে থাকে অর্ধচন্দ্র।
কুষমুণ্ডা: চতুর্থীতে দেবীর রূপ কুষমুণ্ডা। দেবী কুষমুণ্ডা অষ্টভুজা। তিনি প্রকৃতির দেবী, সৃষ্টির প্রতীক। অধিষ্ঠান করেন সিংহ পৃষ্ঠে।
স্কন্দমাতা: পঞ্চমীতে দেবী দুর্গা পূজিতা হন স্কন্দমাতা রূপে। স্কন্দ অর্থাৎ দেবসেনাপতি কার্তিকের জননী। অভয়দায়িনী মায়ের বাহুতে থাকেন শিশু কার্তিক। স্কন্দমাতা সৃষ্টির আদি শক্তি। সিংহবাহিনী দেবী স্কন্দমাতা চতুর্ভুজা।
কাত্যায়নী: ষষ্ঠীতে দেবী দুর্গার পুজো হয় কাত্যায়নী রূপে। কাত্যায়ন ঋষি মা দুর্গাকে নিজের কন্যা রূপে পাওয়ার জন্য সাধনা করতেন। যিনি কাত্যায়নের মেয়ে, তিনিই কাত্যায়নী। এই রূপেই দেবী মহিষাসুর বধ করেন। তাই দেবী কাত্যায়নী মহিষাসুরমর্দিনী নামেও পরিচিত। আবার কাত্য শব্দের অর্থ ব্রহ্মজ্ঞানী এবং অয়ন হলো মার্গ বা পথ। ব্রহ্মজ্ঞানীদের জগৎকল্যাণের কাজ করার পথ প্রদর্শন করেন কাত্যায়নী।
কালরাত্রি: সপ্তমী তিথিতে কালরাত্রি রূপে দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়। কালকে ধারণ করে কালী রূপে দেখা দেন দেবী। এটি তাঁর সবচেয়ে উগ্র রূপ। এই রূপেই দেবী অসুর ভ্রাতৃদ্বয় শুম্ভ-নিশুম্ভের নিধন করেন।
মহাগৌরী: অষ্টমীতে দেবী দুর্গা মহাগৌরী রূপে আবির্ভূতা হন। এই দেবী শান্তি এবং দয়ার প্রতীক। ভয়ঙ্কর কালী রূপের পরে মহাগৌরী অসীম শান্তি নিয়ে আসেন।
সিদ্ধিদাত্রী: নবমী তিথিতে দেবী দুর্গা সিদ্ধিদাত্রী রূপে পুজো পান। এটিই শেষ রূপ। দেবী হলেন সিদ্ধি, পরিপূর্ণতা, আরোগ্যদাত্রী। চতুর্ভুজা দেবী বসেন সিংহের উপরে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।