Know the real identity of Burima, the face of Burima Firecrackers dgtl
Burima Fireworks
দেশভাগের যন্ত্রণা ভুলে গড়েছিলেন বাজি সাম্রাজ্য! জানেন এই 'বুড়ীমা' কে?
‘বুড়ীমা’ নাহলে কালীপুজো জমে না।
আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৪ ২০:৪১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
নাম ‘বুড়ীমা’। কিন্তু তাঁর তেজেই কাঁপে বঙ্গ। কালীপুজো এলে দোকানে দোকানে চলে 'বুড়ীমা'র খোঁজ। এতগুলি বছর ধরে বদলায়নি সেই ঐতিহ্য।
০২২২
‘বুড়ীমা’ নাহলে কালীপুজো জমে না। যে বয়সে মানুষ অবসরের ভাবনা ভাবে, সেই বয়সেই ‘বুড়ীমা’ গড়েছিলেন বঙ্গব্যাপি তাঁর আশ্চর্য সাম্রাজ্য।
০৩২২
কিন্তু কে এই ‘বুড়ীমা’? ‘বুড়ীমা’র আসল নাম অন্নপূর্ণা দাস। জন্মেছিলেন বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায়।
০৪২২
দেশভাগ, দাঙ্গার অস্থির সময়েও সাত পুরুষের ভিটে ছেড়ে আসতে নারাজ ছিলেন স্বামী সুরেন্দ্রনাথ দাস। পরে সেই মাটিতেই মৃত্যু হয় তাঁর।
০৫২২
‘বুড়ীমা’ তখন তিন মেয়ে, এক ছেলের মা। বড় আর মেজ মেয়ের সদ্য বিয়ে হয়েছে। বাকিদের নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে এপারে চলে এলেন অন্নপূর্ণা। ঠাঁই হল তখনকার পশ্চিম দিনাজপুর জেলার ধলদিঘি সরকারি ক্যাম্পে।
০৬২২
সালটা ১৯৪৮। নতুন দেশে অচেনা মাটিতে শুরু হল অন্নপূর্ণা দেবীর নতুন লড়াই। সবজি থেকে হাতা, খুন্তী- সরাসরি কারিগরের থেকে কিনে এনে বিক্রি করতেন হাটে। এমনকী বাড়ি বাড়ি ঘুরেও বিক্রি করেছেন।
০৭২২
তাঁর মনে তখন একটাই ভাবনা যে ভাবে হোক সন্তানদের মুখে অন্ন তুলে দিতে হবে, পায়ের তলায় মাটি চাই। একসময় ধলদিঘি ছেড়ে চলে এলেন গঙ্গারামপুরে।
০৮২২
সেখানে সনাতন মণ্ডল নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে অন্নপূর্ণা দেবীর আলাপ হয়। সেই ব্যক্তি মুদির দোকানের ব্যবসার সঙ্গে বিড়িও বাঁধতেন। অন্নপূর্ণা দেবীকে তিনি ‘মা’ বলে ডাকতেন। তাঁর কাছ থেকেই শিখে নিয়েছিলেন বিড়ি তৈরীর কৌশল।
০৯২২
এক বছরের মধ্যে নিজেই শুরু করেছিলেন বিড়ির ব্যবসা। মায়ের কাজে সাহায্য করত ছেলে।
১০২২
এর মধ্যেই হাওড়ার বেলুড়ে বিয়ে দেন মেয়ের। সেই সূত্রেই সেখানকার প্যারীমোহন মুখার্জি স্ট্রিটে একটা দোকান-সহ বাড়ি কেনেন। এ বার শুরু করেন আলতা-সিঁদুরের ব্যবসা।
সদা কর্মব্যস্ত থাকতে ভালবাসতেন। তাই বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জিনিসের ব্যবসা করতেন। যেমন বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি, দোলে রং ইত্যাদি। সে ভাবেই বাজির ব্যবসায় আসা।
১৩২২
বাজি কিনে বিক্রি করতে গিয়ে তাঁর এক সময় মনে হয়েছিল বাজি তৈরি করে বিক্রি করতে পারলে লাভ অনেক বেশি। আকবর আলি নামে বাঁকড়ার এক ব্যবসায়ীর থেকে শিখলেন বাজি তৈরির কৌশল।
১৪২২
আগে এক বার বাজি বিক্রির সরকারী ছাড়পত্র না থাকায় পুলিশ এসে তাঁর দোকানের সমস্ত বাজি বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে চলে যায়। তখন থেকেই নিজের বাজি কারখানা তৈরির জেদ করেন।
১৫২২
পরবর্তী সময়ে বাজি তৈরির ও বিক্রির যাবতীয় সরকারি ছাড়পত্র নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। হাওড়ার বাঁকড়া, বজবজের নুঙ্গি ঘুরে বাজির কাঁচামাল আর ভাল কারিগর খুঁজে বের করেছিলেন নিজে।
১৬২২
সোরা, গন্ধক, বারুদের অনুপাতের হেরফেরে কী ভাবে হরেকরকম বাজি তৈরী করা যায় সেই সব শিখে নিয়েছিলেন তিনি। শুরু করেন নিজস্ব উৎপাদন। নিজের নামেই তৈরি করলেন ব্র্যান্ড।
১৭২২
চেনা মানুষজন তাঁকে 'বুড়ীমা' বলে ডাকত। লোকমুখে ছড়িয়ে গিয়েছিল। সেই 'বুড়ীমা' নামেই তিনি বাজি বাজারে হয়ে ওঠেন সেরা ব্র্যান্ড। ‘বুড়ীমা ফায়ার ওয়ার্কস’। সব চেয়ে জনপ্রিয় ‘বুড়ীমার চকলেট বোম’।
১৮২২
অন্নপূর্ণা দেবী উচ্চাকাঙ্খি ছিলেন। পরবর্তী সময়ে অন্ধ্রপ্রদেশের শিবকাশীতে একটি দেশলাই কারখানা তৈরি করেন। ডানকুনিতে চলতে থাকে তাঁর বাজির কারখানা।
১৯২২
বয়সের মাপকাঠিতে বৃদ্ধা হলেও সেই অঙ্কে বুড়ীমাকে কখনই মাপা যায়নি। যে কোনও কাজ শুরুর আগেই নিজেই শিখে নিতেন তার খুঁটিনাটি। তাঁর শেখার পরিধি ও আগ্রহ ছিল বিশাল। কাজের প্রতি নিষ্ঠা আর জেদের কারণে জীবনে যাতেই হাত দিয়েছেন তাতেই সফল হয়েছেন।
২০২২
১৯৯৫ সালের ৩ জুন মৃত্যু হয় বুড়ীমার। ১৯৯৬ সাল থেকেই নিষিদ্ধ হয়ে যায় শব্দবাজি। শব্দবাজির ঊর্দ্ধসীমা ৯০ ডেসিবেলের মধ্যে বেঁধে দেওয়া হয়। এখন অবশ্য ১২৫।
২১২২
বুড়ীমার পুত্র এবং প্রপৌত্র সামলে আসছেন তাঁর সাম্রাজ্য। এখনও চলছে ‘বুড়িমা ফায়ার ওয়ার্কস’। শুধু মাত্র চকলেট বোমই নয়, আরও নানা ধরনের বাজি পাওয়া যায় 'বুড়ীমা'র।