প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner
Kali Puja 2025

কেন বসনহীনা কালী? দেবীর নিরাভরণ হওয়ার কারণস্বরূপ কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়

সমাজমাধ্যম আর ট্রোলিংয়ের যুগে প্রায়শই ধুয়ো ওঠে। বাদানুবাদের তর্ক নয়, বরং একপেশে, একহারা মন্তব্য দ্বারা ধরাশায়ী করা হয় বিপরীত তত্ত্বকে।

তমোঘ্ন নস্কর
শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:২২
Share: Save:
০১ ১১
 সমাজমাধ্যম আর ট্রোলিংয়ের যুগে প্রায়শই ধুয়ো ওঠে। বাদানুবাদের তর্ক নয়, বরং একপেশে, একহারা মন্তব্য দ্বারা ধরাশায়ী করা হয় বিপরীত তত্ত্বকে। অথচ দর্শনের গভীরে যে তত্ত্ব ও বোধ লুকিয়ে থাকে, তা সেই গভীরেই থেকে যায়। রইল সে রকমই এক তত্ত্বের কথা, যাকে নিয়ে মাঝেমধ্যেই ঘুর্ণিঝড় ওঠে– “কালীর কাছে ধনমান চাস কেনে/ কালী যে তোদের দিগবসনা।” অর্থাৎ, মায়ের কাছে টাকাপয়সা কেন চাস, উনি কী দেবেন? উনি তো নিজেই দিগবসনা অর্থাৎ উলঙ্গ।

সমাজমাধ্যম আর ট্রোলিংয়ের যুগে প্রায়শই ধুয়ো ওঠে। বাদানুবাদের তর্ক নয়, বরং একপেশে, একহারা মন্তব্য দ্বারা ধরাশায়ী করা হয় বিপরীত তত্ত্বকে। অথচ দর্শনের গভীরে যে তত্ত্ব ও বোধ লুকিয়ে থাকে, তা সেই গভীরেই থেকে যায়। রইল সে রকমই এক তত্ত্বের কথা, যাকে নিয়ে মাঝেমধ্যেই ঘুর্ণিঝড় ওঠে– “কালীর কাছে ধনমান চাস কেনে/ কালী যে তোদের দিগবসনা।” অর্থাৎ, মায়ের কাছে টাকাপয়সা কেন চাস, উনি কী দেবেন? উনি তো নিজেই দিগবসনা অর্থাৎ উলঙ্গ।

০২ ১১
এক এক করে ভাষ্যে আসা যাক। এক, পুষ্প যদি উন্মুক্ত না থাকত, তা হলে সৃষ্টি কি আদৌ সম্ভব হত? উত্তর, অবশ্যই না। নিষেক দ্বারা সৃষ্টি বজায় থাকে। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সৃজনক্ষেত্র এই ফুল থেকে ফল হওয়া।

এক এক করে ভাষ্যে আসা যাক। এক, পুষ্প যদি উন্মুক্ত না থাকত, তা হলে সৃষ্টি কি আদৌ সম্ভব হত? উত্তর, অবশ্যই না। নিষেক দ্বারা সৃষ্টি বজায় থাকে। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সৃজনক্ষেত্র এই ফুল থেকে ফল হওয়া।

০৩ ১১
দেবীও তেমনই সদা সৃষ্টিশীল। এক বৃহৎ উন্মুক্ত গর্ভাশয়, যা ক্রমাগত সৃজন করে চলেছে। জগৎব্যাপী এই মস্ত সৃজনশীলতার ব্যাপ্তি অর্থাৎ ক্ষেত্রকে কাপড় দ্বারা ঢাকা অসম্ভব। তাই তিনি দিগবসনা।

দেবীও তেমনই সদা সৃষ্টিশীল। এক বৃহৎ উন্মুক্ত গর্ভাশয়, যা ক্রমাগত সৃজন করে চলেছে। জগৎব্যাপী এই মস্ত সৃজনশীলতার ব্যাপ্তি অর্থাৎ ক্ষেত্রকে কাপড় দ্বারা ঢাকা অসম্ভব। তাই তিনি দিগবসনা।

০৪ ১১
এই সমগ্র প্রকৃতিকে বস্ত্রাচ্ছাদিত করা এক প্রকার অসম্ভব। দেবী মহাজাগতিক প্রকৃতিরই নামান্তর মাত্র। অনন্তকে আচ্ছাদন অবাস্তব।

এই সমগ্র প্রকৃতিকে বস্ত্রাচ্ছাদিত করা এক প্রকার অসম্ভব। দেবী মহাজাগতিক প্রকৃতিরই নামান্তর মাত্র। অনন্তকে আচ্ছাদন অবাস্তব।

০৫ ১১
দুই, এ বার একটু বিজ্ঞানের দিকে আসি। বিজ্ঞান বলছে, বদ্ধ ব্যবস্থায় এ শক্তির সৃষ্টি নেই, ধ্বংস নেই। কেবল রূপ পরিবর্তন করতে পারে। (শক্তি সংরক্ষণ সূত্র) শক্তি চোখে দেখা যায় না। ঘটমান কার্যের দ্বারা অনুভব করা যায়।

দুই, এ বার একটু বিজ্ঞানের দিকে আসি। বিজ্ঞান বলছে, বদ্ধ ব্যবস্থায় এ শক্তির সৃষ্টি নেই, ধ্বংস নেই। কেবল রূপ পরিবর্তন করতে পারে। (শক্তি সংরক্ষণ সূত্র) শক্তি চোখে দেখা যায় না। ঘটমান কার্যের দ্বারা অনুভব করা যায়।

০৬ ১১
  এই বিজ্ঞান ধারণাটির বহু আগে থেকে দেবীকে শক্তি রূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি কালের আগে থেকে আছেন এবং ছিলেন। তা হলে, এই জগৎ নামক বদ্ধ ব্যবস্থায় তিনিই চালিকা শক্তি, তিনিই ব্রহ্ম।

এই বিজ্ঞান ধারণাটির বহু আগে থেকে দেবীকে শক্তি রূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি কালের আগে থেকে আছেন এবং ছিলেন। তা হলে, এই জগৎ নামক বদ্ধ ব্যবস্থায় তিনিই চালিকা শক্তি, তিনিই ব্রহ্ম।

০৭ ১১
যখন কল্যাণ সাধন করছেন, তখন তিনি আলোকদায়িনী। আলোকশক্তির নামান্তর। আবার যখন শাসন করছেন চণ্ডিকা রূপে, তখন তাঁর তেজের ছটায় একই সঙ্গে মানুষ অন্ধ, হতবিহ্বল। তিনি একই সঙ্গে আলোক ও তাপশক্তি। বালবের জ্বলা তো তাই, একইসঙ্গে আলোক ও তাপশক্তি। আরও আরও অজস্র প্রমাণ ছড়িয়ে রয়েছে।

যখন কল্যাণ সাধন করছেন, তখন তিনি আলোকদায়িনী। আলোকশক্তির নামান্তর। আবার যখন শাসন করছেন চণ্ডিকা রূপে, তখন তাঁর তেজের ছটায় একই সঙ্গে মানুষ অন্ধ, হতবিহ্বল। তিনি একই সঙ্গে আলোক ও তাপশক্তি। বালবের জ্বলা তো তাই, একইসঙ্গে আলোক ও তাপশক্তি। আরও আরও অজস্র প্রমাণ ছড়িয়ে রয়েছে।

০৮ ১১
তাই তিনি নিরাকার। মানুষ তার মননে ধারণ করে মূর্তি গড়েছে। এই অদৃশ্য শক্তির প্রতি উপাসনার জন্য। আদতে, শক্তি তো নগ্ন, নিরাকার।  তার তো কোনও আচ্ছাদন হওয়া সম্ভব নয়।

তাই তিনি নিরাকার। মানুষ তার মননে ধারণ করে মূর্তি গড়েছে। এই অদৃশ্য শক্তির প্রতি উপাসনার জন্য। আদতে, শক্তি তো নগ্ন, নিরাকার। তার তো কোনও আচ্ছাদন হওয়া সম্ভব নয়।

০৯ ১১
তিন, এ বার আসা যাক ঘটতত্ত্বে। ঘটতত্ত্বে স্বস্তিকা চিহ্নকে দু’ভাবে ব্যাখায়িত করা হয়। একটি হল– জলপূর্ণ ঘট একটি গর্ভাশয় এবং স্বস্তিক চিহ্নটি জলে নিশ্চিন্তে ভাসমান শিশু ভ্রুণ। অর্থাৎ ঘটই মা।

তিন, এ বার আসা যাক ঘটতত্ত্বে। ঘটতত্ত্বে স্বস্তিকা চিহ্নকে দু’ভাবে ব্যাখায়িত করা হয়। একটি হল– জলপূর্ণ ঘট একটি গর্ভাশয় এবং স্বস্তিক চিহ্নটি জলে নিশ্চিন্তে ভাসমান শিশু ভ্রুণ। অর্থাৎ ঘটই মা।

১০ ১১
 অপর ভাষ্যটি হল– পদ উত্তোলনরত আকারের স্বস্তিক চিহ্ন আসলে সন্তান প্রসব চিত্র। এই সন্তান প্রসবের চিত্র শাশ্বত কারণ দেবী শাকম্ভরী। তাঁর থেকে সৃষ্টি হয়েছে মানব কুল, তাঁর থেকে সৃষ্টি হয়েছে পশুকুল, সৃষ্টি হয়েছে মহাজাগতিক শস্যক্ষেত্র। অর্থাৎ, এক জন মা সৃষ্টি করেন এবং তার পরে শিশুকে পালন করার জন্য তার আশপাশের পরিবেশ তৈরি করেন। অর্থাৎ এ এক অনন্ত সৃজন। প্রশ্ন হল, এই অনন্ত প্রসব ক্ষেত্র বা এই মা-বোধটিকে কি আদৌ বস্ত্রাচ্ছাদন দেওয়া সম্ভব?

অপর ভাষ্যটি হল– পদ উত্তোলনরত আকারের স্বস্তিক চিহ্ন আসলে সন্তান প্রসব চিত্র। এই সন্তান প্রসবের চিত্র শাশ্বত কারণ দেবী শাকম্ভরী। তাঁর থেকে সৃষ্টি হয়েছে মানব কুল, তাঁর থেকে সৃষ্টি হয়েছে পশুকুল, সৃষ্টি হয়েছে মহাজাগতিক শস্যক্ষেত্র। অর্থাৎ, এক জন মা সৃষ্টি করেন এবং তার পরে শিশুকে পালন করার জন্য তার আশপাশের পরিবেশ তৈরি করেন। অর্থাৎ এ এক অনন্ত সৃজন। প্রশ্ন হল, এই অনন্ত প্রসব ক্ষেত্র বা এই মা-বোধটিকে কি আদৌ বস্ত্রাচ্ছাদন দেওয়া সম্ভব?

১১ ১১
প্রশ্নের উত্তরে আজ উত্তর নিজেই প্রশ্ন রেখেছিল, এর কারণ বোধহয় পৃথিবীর একমাত্র ধ্রুবক মাতৃকা তথা শক্তি। যাকে কোনও বস্ত্রে আচ্ছাদন করা যায় না বা কোনও পাত্রে ধরা যায় না।  (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।

প্রশ্নের উত্তরে আজ উত্তর নিজেই প্রশ্ন রেখেছিল, এর কারণ বোধহয় পৃথিবীর একমাত্র ধ্রুবক মাতৃকা তথা শক্তি। যাকে কোনও বস্ত্রে আচ্ছাদন করা যায় না বা কোনও পাত্রে ধরা যায় না। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy