হাতে গোনা আর মাত্র ক’দিনের অপেক্ষা। তার পরে পুজো এলে দেখতে দেখতেই কেটে যাবে উৎসবের চার চারটে দিন। বিজয়া দশমীতে উমাকে বিদায় দিতে গিয়ে বাঙালির মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। তবে দুর্গাপুজোর সেই শেষবেলায় মন খারাপের মাঝেই আনন্দের আর এক নাম সিঁদুর খেলা। ঢাকের বাদ্যি আর উলুধ্বনির সঙ্গে তখন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় তার রং।
দশমীর দিন এই সিঁদুর খেলার রীতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এটি শুধু খেলা নয়, সৌভাগ্যের প্রতীকও বটে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, সিঁদুর ব্রহ্মার প্রতীক। মনে করা হয়, সিঁথিতে সিঁদুর পরলে কপালে ব্রহ্মা অধিষ্ঠান করেন। তিনি জীবনের সমস্ত কষ্ট দূর করে আনন্দ দেন। বিবাহিতারা দেবীকে বরণ করে তাঁর কপালে সিঁদুর ছুঁইয়ে সেই সিঁদুর একে অন্যের সিঁথিতে দেন। এই সিঁদুর খেলাই যেন এক বছর পরে আবার মিলনের বার্তা বয়ে আনে। আবার কোথাও গোপিনীদের সিঁদুর খেলার উল্লেখ আছে কাত্যায়নী ব্রতে।
কিন্তু প্রশ্ন জাগে, এই সিঁদুর খেলার অধিকার কি শুধুই বিবাহিতাদের? অবিবাহিত মেয়েরা কি তবে এর বাইরে থাকবে? এই সব প্রশ্নে আপত্তি জানিয়েছেন লেখক ও শিক্ষিকা রোহিণী ধর্মপাল। বলেছেন, “অবিবাহিত মেয়েরা কেন, ছেলেরা বা রূপান্তরকামীরা কেন নয়? দেবীকে বরণ করার এই প্রথা নিয়ে কেনই বা আমরা এত নিয়ম মেনে চলব?”
রোহিণীর কথায়, “এগুলি আসলে নিজেদের তৈরি করা লোকাচার, দেশাচার। স্মৃতিশাস্ত্রের দোহাই দিয়ে বা অন্য নানা কারণে কত নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে মেয়েদের উপরে। তাই এ সব শাস্ত্রীয় প্রথা থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি।” তাঁর মতে, “আমরা যদি এ ভাবেও দেখি যে, আমি আমার ঘরের এক জন মানুষকে বরণ করে নিয়ে আসছি, তাতে তো যে কেউ অংশ গ্রহণ করতে পারে। তাই নয় কি! আমরা দুর্গা, শিব, কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীকে প্রায় বাড়ির ছেলে মেয়ে করে ভাবি.. তা হলে এক বিশেষ সময় বিশেষ ক্ষণে কেনও বিশেষ নিয়ম থাকবে বরণ করার!” বিজয়া দশমীর আনন্দ সবার জন্য সমান হওয়াই ভাল, বলছেন তিনি।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।