দেবী বেলতলায় আসেন। বেলতলায় বসেন। সেখান থেকে বোধনের পরে তাঁকে নিয়ে আসা হয় মণ্ডপে। হ্যাঁ, বারে বারেই শোনা যায়, বেল গাছের কথা। যার পিছনে লুকিয়ে আছে এক কাহিনি।
সকলেই কমবেশি জানে, রাবণকে বধ করার জন্য অকালে অর্থাৎ অসময়ে দেবী দুর্গার পুজো করেছিলেন রামচন্দ্র। প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন অকাল!
মানুষের এক বছর দেবতাদের অহোরাত্র। অর্থাৎ মানুষের এক বছরের ছয় মাস দেবতাদের দিন এবং ছয় মাস দেবতাদের রাত। মাঘ- আষাঢ় হল দিন। শ্রাবণ- পৌষ রাত। আগে পুজো হতো বসন্ত কালে। তা হলে হিসাব মতো বসন্তকাল দেবতাদের দিন। কিন্তু রামচন্দ্র পুজো করছেন শরৎকালে, অর্থাৎ আশ্বিন মাসে। সে মাস তো দেবতাদের রাতের মধ্যে পড়ে। দেবী সে সময়ে ঘুমন্ত। অকালে দেবীর ঘুম ভাঙালেন রামচন্দ্র। তাই সেটি অকালবোধন। এবং শরৎ কালে হয়েছিল, তাই শারদীয়া।
কিন্তু দেবী ঘুমন্ত। তাঁর ঘুম তো এত সহজে ভাঙানো যায় না। তাই দেবীকে জাগানোর জন্য আগে স্বয়ং ব্রহ্মাকে দেবীস্তুতি শুনিয়েছিলেন রামচন্দ্র।
সন্তুষ্ট হলেন ব্রহ্মা এবং তাঁর মাধ্যমে দেবী।
স্তুতি শুনে ব্রহ্মা সমাহিত হলেন। ধ্যান গমন করে তিনি চলে গিয়েছিলেন সেই সাগরের পাড়ে, যেখানে রামচন্দ্র পুজোয় বসেছেন। তিনি দেখলেন, সাগরের বালুতটের সীমানা ছাড়িয়ে এক গহীন বন।
সেই বনে একটি কণ্টকময় বেল গাছের নীচে আট-দশ বছরের এক বালিকা আপন মনে খেলছে। ব্রহ্মা বুঝলেন, এই বালিকাই গৌরী।
তিনি চোখ মেলতেই সেই বালিকা তাঁর উপলব্ধিকে সত্য প্রমাণ করে বেলগাছে লীন হয়ে গেল। সেই থেকে ব্রহ্মা বিধি দিলেন, দেবী দুর্গার বোধনের পূজার্চনা হবে বেলগাছের নীচে।
সেই থেকে আজ অবধি দেবীর বোধনের আগে বেলগাছ ( না থাকলে বেলশাখাকে) পুজো করে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। ব্রহ্মার আহ্বানে দেবী বেল গাছের একটি বেল পাতায় কুমারী কন্যা বা বালিকা রূপে আবির্ভূতা হন।
আজও যে কোনও দুর্গাপুজোয় এই রীতিই মানা হয়। ষষ্ঠীতিথির সন্ধ্যায় প্রথমে দেবীর বোধন হয়, তার পরে হয় অধিবাস ও সব শেষে আমন্ত্রণ করা হয়।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।