বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশে ভাদ্র সংক্রান্তি মানেই রান্না পুজো। বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন এই উৎসব পালিত হয় সারা বাংলা জুড়ে, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে। মিশে থাকে পুজোর গন্ধ, মাটির সোঁদা বাতাস আর এক মুঠো ভালবাসা। নামেই বোঝা যায়—এ দিন পুজো হয় উনুন আর গৃহ দেবতার। নিয়ম অনুযায়ী, এই দিনে রান্না বসে রাতভর। আর পরের দিন, বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে, সেই রান্না খাওয়া হয় পরিবারের সকলে মিলে।
পুরনো দিনের এই রীতি এখনও মানা হয় দক্ষিণবঙ্গের বহু পরিবারে। গৃহস্থের মহিলারা অন্ধকার রাতেই শুরু করেন কুটনো কাটা, বাটনা বাটা এবং একের পর এক রান্না করা। শর্তও থাকে—সূর্যের আলো ওঠার আগেই শেষ করতে হবে সমস্ত রান্না। সকালের প্রথম আলো ফুটতেই মা মনসাকে নিবেদন করা হয় সেই পদ। তারপরই শুরু হয় খাওয়া-দাওয়ার আসর।
এই পুজোর প্রধান আকর্ষণ হল রান্নার প্রস্তুতি। বিশেষ করে গৃহ দেবতা আর উনুনকে সম্মান জানানোই এই পুজোর উদ্দেশ্য। আর এই সম্মানের অংশ হিসেবেই গৃহিণীরা রাত জেগে নানা ধরনের রান্নায় মগ্ন থাকেন। ইলিশের নানা পদের পাশাপাশি এই দিন কচুর শাক, ছোলার ডাল, চালতার টক, নানা রকমের ভাজা, আর মাছের ঝোল রান্নার চল রয়েছে।
রান্না পুজোর এই উৎসবটি বিশেষত গ্রামের দিকে বেশি প্রচলিত। যদিও এর প্রথা বেশ কঠিন। রান্না ঘরে যাতে কোনও ভাবেই সূর্যের আলো প্রবেশ না করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়। পরের দিন সূর্যোদয়ের আগেই সব রান্না শেষ করতে হয়। পরের দিন অর্থাৎ বিশ্বকর্মা পুজোর দিন আগের দিনের রান্না করা খাবারই সকলে মিলে ভাগ করে খা
রান্না পুজোর সেই থালায় কী থাকে? আলু, কুমড়ো, পটল, কচু, কলা, বেগুন, পুঁইশাক থেকে শুরু করে ছোলার ডাল, নারকেল ভাজা, ভাত, মাছের ঝাল, চালতার টক—সবই। তবে রান্না পুজোর আসল আকর্ষণ ইলিশ। অনেক বাড়িতেই এই দিনে ইলিশ ভাজা, ভাপা বা ঝাল রান্নার রীতি আজও রয়েছে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।